বৈচিত্রময় এই পৃথিবীর কত কিছুই রয়েছে অজানা রহস্যে মোড়া। যার উত্তর নেই খোদ বিজ্ঞানীদের কাছেও। বিবর্তনের সমস্ত হিসেব নিকেশ উল্টোপাল্টে রেখে দিয়েছেন তুরস্কের এমনই এক পরিবার। জানলে অবাক হবেন এই পরিবারের পূর্ণ বয়স্ক সদস্যরাও হাঁটেন চার পায়ে? অনেকের দাবি এই পরিবারে ‘ইভোলিউশন’ নয় হয়েছে ‘ডিভলিউশন’। সত্যিই কি তাই? কি বলছে বিজ্ঞান?
যে কোন আধুনিক পূর্ণবয়স্ক মানুই হাঁটে দু’পায়ে। বিবর্তনের তত্ত্ব অনুযায়ী এটাই আমাদের চেনা ছবি। কিন্তু সম্প্রতি বিবর্তনের এক উল্টো ছবি তুলে ধরেছেন তুরস্কের উলাস পরিবারের সদস্যরা। আধুনিকতা থেকে শতহস্ত দূরে এই পরিবারের মানুষ এখনও দু’পায়ে হাঁটতে পারেন না। ‘বিবর্তন’ কথাটা শুনলে সাধারণত আমাদের সকলের সামনে একটা ছবিই ভেসে ওঠে। তা হল সামনের দিকে ঝুঁকে হাটা বন মানুষ থেকে ক্রমে মাথা উঁচু করে দু পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলা মানুষের ছবি। কিন্তু তুরস্কের এই উলাস পরিবারের চার বোন এবং এক ভাই জন্ম থেকেই হাঁটেন চার পায়ে। এছাড়াও তাদের পরিবারের আরও একজন সদস্য চার পায়ে হাঁটতেন। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
কোন আধুনিক পূর্ণবয়স্ক মানুষ চার পায়ে হাঁটে বললে বিশ্বাস করবেন না কেউই। কিন্তু সমস্ত বিবর্তনের সমস্ত হিসেব উল্টোপাল্টে রেখে দিয়েছেন তুরস্কের উলাস পরিবারের সদস্যরা। যা নিয়ে ধাঁধায় পড়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরাও। ২০০৬ সালে প্রথম বিবিসির এক তথ্য চিত্রে তুরস্কের এই অজানা পরিবারের সাথে পরিচয় হয়েছিল মানব সভ্যতার। এছাড়া সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এক তথ্য চিত্রেও এই উলাস পরিবারের সদস্যদের এই অদ্ভুত হাঁটাচলা লক্ষ্য করা গিয়েছে। দুটি তথ্যচিত্রেই দেখা গিয়েছে উলাস পরিবারের সদস্যরা হাতের তালু ব্যবহার করে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করে। তবে বানররা যেমন হাতে ভর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে তেমনটা কিন্তু নয়।
এই পরিবারের সদস্যরা হাত ও পা ব্যবহার করে যে কোনও চতুষ্পদ প্রাণীর মতো করে হাঁটে। কিন্তু তারা কেন এমন ভাবে হাঁটেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি খোদ বৈজ্ঞানিকরাও। এ প্রসঙ্গে তুরস্কের একদল বিজ্ঞানী তাঁদের গবেষণাপত্রে দাবি করেছিলেন এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্ভবত বিপরীত বিবর্তন ঘটেছে। তার জন্যই ৩০ লক্ষ বছরের বিবর্তনের জিনগত পরিবর্তন ঘটেছে।
যদিও লিভারপুল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। সেখানে দেখা গিয়েছে কঙ্কালের বৈশিষ্ট্য সাধারণ মানুষের মতো নয়। বরং তাঁদের কঙ্কালের সাথে অনেকটাই মিল রয়েছে বন মানুষের কঙ্কালের। তাই তুরস্কের বিজ্ঞানীদের তত্ত্ব একেবারে মানতে নারাজ ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের’ বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানী নিকোলাস হামফ্রে। তিনি বরং এই তত্ত্বকে অত্যন্ত অপমানজনক এবং বৈজ্ঞানিক দিক থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেছেন। নিকোলাসের কথায় , “ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের মস্তিষ্কের স্ক্যান করে দেখা গিয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই সেরিবেলামের মাঝের অংশটি বেশ সঙ্কুচিত। কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, নির্দিষ্ট ওই অংশটি নেই। সেখান থেকেও এই সমস্যা হতে পারে।”
Leave a Reply