বিশ্বাসঘাতক

দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছর ধরে ভারতবর্ষের বুকে রাজত্ব করে লুটপাট চালিয়েছে  ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি। তবে ভারতবর্ষকে কব্জা করা  ইংরেজদের পক্ষে অতটাও সহজ হতো না, যদি কিনা ভারতে থাকা বিশ্বাসঘাতকরা তাদের সাহায্য করত। তাই ভারতবর্ষে ইংরেজদের শক্তি বৃদ্ধির  অন্যতম কারণ ছিল ভারতেই লুকিয়ে থাকা বেশ কিছু বিশ্বাসঘাতক। আজকের ভিডিওটিতে থাকলো ভারতবর্ষের এমনই পাঁচ কলঙ্কিত বিশ্বাসঘাতকদের নাম।

মীরজাফর:

তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বাংলার মীরজাফর। ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে ছিল মাত্র তিন হাজার সেনা, আর সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে ছিল প্রায় ১৮ হাজার সৈনিক। এই যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার জয় একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তাঁর সেনাপতি মীরজাফর গোপনেই ইংরেজদের সাথে চুক্তি করেছিল, এই যুদ্ধ জিতলে সেই হবে বাংলার নবাব, আর ইংরেজরা পাবে অনেক টাকা। তাই যুদ্ধের সময়  নিজের সৈন্যদের নিয়ে পিছিয়ে গিয়েছিল মীরজাফর। যার ফলে ইংরেজ বাহিনীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। এরপর তাঁকে  নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। চুক্তি মত সিংহাসনে বসলেও মীরজাফর ছিল ইংরেজদের পোষা গাধার মত। পরে ইংরেজরাই তাকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। শেষ জীবনে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত কষ্টে মারা গিয়েছিল মীরজাফর।

সুজাউদ্দৌলা :

মীরজাফরের পর বাংলার নবাব হয়েছিলেন তার জামাতা মীর কাসিম। সিরাজউদ্দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল মীর কাসিমও ।  তবে বাংলার নবাব হওয়ার পরেই মীর কাসিম চিনেছিল ইংরেজদের আসল চেহারা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি বক্সারের যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এই যুদ্ধে তাকে সাহায্য করেছিলেন অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম। যুদ্ধের শুরুতে ব্রিটিশরা পিছু হটলেও পরে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা মীর কাসিমের সাথে যুদ্ধ করা অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলাকে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য উৎসাহ দেয় তারা।  তখন সুজাউদ্দৌলাও প্রাণের ভয়ে সৈন্য নিয়ে পালিয়ে যায়। তারপরেই  যুদ্ধে  হেরে যায় মীর কাসিম। যদিও সুজাউদ্দৌলাও পরবর্তীকালে ইংরেজদের হাতেই মারা গিয়েছিল। আর তার রাজ্য ইংরেজরা দখল করে নিয়েছিল।

জয়াজিরাও সিন্ধিয়া:

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ-এর সাথে। রানী লক্ষ্মীবাঈ যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তখন কোনো সাহায্য করেননি গোয়ালিয়রের রাজা জয়াজিরাও সিন্ধিয়া। উল্টে রানীর বিভিন্ন রণকৌশল তিনি ইংরেজদের কাছে ফাঁস করে দিয়েছিলেন। জয়াজিরাও-এর  বিশ্বাসঘাতকতার  কথা জানতে পেরে তাঁতিয়া টোপি  এবং নানা সাহেবের সহযোগিতায় গোয়ালিয়ার দুর্গ দখল করেন লক্ষীবাঈ। এই দুর্গ থেকেই  রানী লক্ষীবাঈ ইংরেজদের সাথে প্রবল বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তবে জয়াজিরাও-এর বিশ্বাসঘাতকতায় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান লক্ষ্মীবাঈ। সেই  খুশীতে ইংরেজদের জন্য ভোজের আয়োজন করেছিলেন জয়াজিরাও। এরপর বহু বছর তিনি ইংরেজদের বশ্যতা স্বীকার করে রাজত্ব করেছিলেন।

মীর সাদিক

দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল টিপু সুলতান। তাঁরই একজন সেনাপ্রধান ছিলেন মীর সাদিক।
ইংরেজরা টিপু সুলতানের দুর্গ আক্রমণ করেছিল। কিন্তু দুর্গের শক্তিশালী দেওয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার ক্ষমতা তাদের হত না,যদি না টিপু সুলতানের সেনাপ্রধান মীর সাদিক টাকার লোভে ইংরেজদের সহযোগিতা করত। সৈন্যদের বেশি বেতন দেওয়ার লোভ দেখিয়ে যুদ্ধ করতে বারণ করে দিয়েছিল বিশ্বাঘাতক মীর সাদিক। তাই সেদিন ইংরেজদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন টিপু সুলতান। তবে পরে মীর সাদিকের  কি পরিণতি হয়েছিল তার উল্লেখ পাওয়া যায়নি ইতিহাসে।

রাজা জয়চাঁদ:

দিল্লির রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে হারিয়ে দিল্লির গদিতে বসেছিলেন আফগান সুলতান মহম্মদ ঘোরি। তাকে সহযোগিতা করেছিলেন রাজা জয়চাঁদ। এইজয়চাঁদের মেয়ে সংযুক্তাকে স্বয়ংবর সভা থেকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান। তারপর থেকেই তিনি পৃথিবী চৌহানকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন।  তাই তিনি মহম্মদ ঘোরির কাছে পৃথ্বীরাজ চৌহানের অনেক গুপ্ত যুদ্ধনীতি ফাঁস করে দিয়েছিলেন।  ফলে যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ চৌহানের হার হয়। তবে জয়চাঁদ এর শাস্তি পেয়েছিলেন।  মহম্মদ ঘোরি যুদ্ধ জিতেই  জয়চাঁদকে হত্যা করে এবং তার রাজ্য দখল করে নিয়েছিলেন।

ভারতের ইতিহাসে ছিলেন আরও একদল বিশ্বাসঘাতক। তারা হলেন জমিদার। নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতেই  ইংরেজদের সাহায্য করেছিল তারা। তবে এদের মধ্যে কিছু ভালো জমিদারও  ছিল।  যারা গরিব প্রজাদের সাহায্য করত।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *