জানেন মহাকাশ স্টেশন আসলে কি? এটা কি হাওড়া, শিয়ালদাহর মতন কোন স্টেশন? কি হয় সেখানে? সেখানে গিয়ে কি কাজ করেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা?
জানেন মহাকাশ স্টেশন
আসলে কি?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশন
২৪ ঘণ্টা পৃথিবীর মাথার উপর ঘুরে
কিন্তু কেন তৈরি হল মহাকাশ স্টেশন?
এর কাজই বা কি?
কীভাবেই বা পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে
পাঠানো হল এই স্টেশন?
সেখানে গিয়ে কি কি কাজ করেন
মহাকাশচারীরা?
এটা কি হাওড়া, শিয়ালদাহর
মতন কোন স্টেশন?
বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ মহাশুন্যে গড়ে তুলেছে এক অভূতপূর্ব ঘাঁটি! আর এই ঘাঁটির মধ্যে অন্যতম আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। এটি একটি বিশেষ ধরনের কৃত্রিম উপগ্রহ। যেখানে মানুষ বসবাস করতে পারে। বলা যেতে পারে এটি একটি ওজনবিহীন পৃথিবী। যেখানে মধ্যাকর্ষণ বল নেই বললেই চলে। আছে তবে একেবারেই হালকা। কেবল ছোট খাটো বস্তু নয়, মানুষ সহ এখানে থাকা সকল উপাদানই সবসুময় ভেসে বেড়ায়। এখানে উপর নীচ বলে কিছুই নেই। নেই কোনও দিন রাতের হিসেব। মানুষের নির্মিত এই দুর্গ অনবরত ছুটে চলেছে অজানাকে জানার সন্ধানে। এই অসামান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল এমন এক সময়ে, যে সময় কম্পিউটারগুলোও ছিল আমাদের স্মার্ট ফোনের থেকেও কম ক্ষমতাসম্পন্ন। ১৮৫৯ সালে এভরট হেল প্রথম মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তার মাথা থেকেই প্রথম বেরোয় মহাকাশে স্টেশন তৈরির প্ল্যান। যেই ভাবনা সেই কাজ। ধীর ধীরে তৈরি হয় মহাকাশ ষ্টেশনের নকশা। এরপর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন অর্থাৎ আইএসএস কল্পনা থেকে বাস্তবে রুপ পেতে বেশ কিছু বছর লেগে যায়। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১টি মহাকাশ প্রকল্প হাতে নেয়। এর নাম দেওয়া হয় স্পেস স্টেশন ফ্রিডম। কিন্তু এটি পরকিল্পনা অনুযায়ী নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অন্যান্য কয়েকটি দেশ এখানে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করার পর, ১৯৯৩ সালে এর নাম দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন। এরপর নানা ধাপে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে আইএসএস আজকের পর্যায়ে আসতে পেরেছে।
এই স্টেশন নিয়ত পরিবর্তনশীল। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, মহাকাশে নির্মিত মানবজাতির শ্রেষ্ঠ নির্মাণ। এই মহাকাশ স্টেশনটি তৈরি হয়েছে পৃথিবীতে। পৃথিবীতে বিভিন্ন খণ্ডে এই স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এর পর এক একটি খণ্ড মহাকাশে নিয়ে গিয়ে জোড়া দেওয়া হয়েছে। মহাকাশ স্টেশনের এক একটি খণ্ড বা মডিউল তৈরি করা হয়েছে, এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সহায়তায়। মডিউলগুলোকে পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ৩ ধরনের রকেট। রকেটগুলো হল-
আমেরিকান স্পেস সাঁটল, রাশিয়ান প্রোটল রকেট ও রাশিয়ান সয়ুজ রকেট।
এই রকেটগুলো আবিষ্কার না হলে, মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ কখনোই সম্ভব হত না। এই রকেটগুলো ব্যবহার করেই মহাশুন্যে ভাসমান এই মানবদুর্গ নির্মাণ করতে ১৩ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। এই মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের শুরুটা হয়েছিল আমেরিকান ও রাশিয়ান দুটি স্টেশনকে মহাকাশে সংযুক্ত করার মাধ্যমে। দুটি দেশের মহাকাশ যান নির্মাণের প্রযুক্তিগত ভিন্নতার কারণে, দুটি স্টেশনকে সহজে সংযুক্ত করা যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে এই দুটি ভিন্ন প্রকৃতির মহাকাশ কামরাকে একত্রিত করতে, নির্মাণ করা হয় এক বিশেষ ধরনের কনভারটার। যার নাম হল প্রেসারাইজড মেটিং এডপটার। সংক্ষেপে একে বলা হয় পিএমএ। এই পিএমএ এর মাধ্যমে মহাকাশ স্টেশন দুটিকে যুক্ত করা হয়। কিন্তু তখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, নভোচারীদের বসবাসের উপযোগী ছিল না। এরপর ২০০০ সালে পর্যন্ত এই স্টেশন উন্নয়নের কাজ চলতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০০ সালের নভেম্বরের পর থেকে মহাকাশচারীরা নিয়মিতভাবে এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত মহাকাশ স্টেশন কখনও জনশূন্য হয়নি। সার্বক্ষণিকভাবে ৬ জন মহাকাশচারী মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করেন। তাদের কাজই হল এমন সব গবেষণা করা যা কেবল মহাশুন্যেই করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে প্রত্যেক নভোচারীর থাকার সময়সীমা সাধারণ ৬ মাস। কিন্তু কোনও কোনও নভোচারীকে ১ বছরেরো বেশি সময় ধরে মহাকাশ স্টেশনে রেখে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন থাকার ফলে মানবশরীরে কি কি প্রভাব পড়তে পারে সেগুলো পরীক্ষা করা হয় মহাকাশ স্টেশনে। মহাকাশ ষ্টেশনের দৈর্ঘ্য একটি ফুটবল মাঠের মতন। এর ভিতরে রয়েছে ৬টি বেডরুম বিশিষ্ট একটি বাড়ির সমান জায়গা। মহাকাশ স্টেশনটিকে সবসময় কড়া নজরে রাখা হয়। যাতে করে এটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে পারে সেই দিক সবসময় খেয়াল রাখেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের এই মহাকাশ বিজয়, নিঃসন্দেহে মানবসভ্যতার এক অবিস্মরণীয় অর্জন।
Leave a Reply