১০০০ বছর আগে

এখনকার দুনিয়াটাই  ডিজিটাল। তাই ফোনের সাথে সাথে মানুষও এখন অনেক বেশি স্মার্ট হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন আজ থেকে এক হাজার বছর আগে পৃথিবী এবং আমাদের এই দেশ ভারতবর্ষ ঠিক কেমন ছিল? চলুন টাইম  মেশিনে চেপে একবার ঘুরে আসা যাক এক হাজার বছর আগের পুরোনো ঐতিহাসিক সেই দুনিয়া থেকে। তার আগে জেনে নেওয়া যাক  ইতিহাস শব্দের প্রকৃত অর্থ। প্রসঙ্গত ইতিহাস শব্দটি তৈরি হয়েছে তিনটি আলাদা আলাদা শব্দ নিয়ে। তাই এই শব্দটিকে আলাদা করলে তৈরি হয় ইতি+হা +স অর্থাৎ ‘Thus Verily Happened’, যার বাংলা অর্থ ‘সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছে’।

আসলে  আজ থেকে এক হাজার বছর আগে সবকিছু এতটাও সহজ ছিল না। গোটা পৃথিবীর মানুষ তখন অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেই জীবন যাপন করতেন। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষের জীবন যাপনও এত সহজ ছিল না। ১০০০ বছর আগে মানব সভ্যতার সময়কালকে ইতিহাসের মধ্যযুগ অর্থাৎ মিডাইভাল হিস্ট্রির মধ্যেই ধরা হয়। বলা হয় এই সময় ভারতবর্ষে যে সমস্ত শাসকরা ছিলেন তাদের ইন্ডিজিনিয়াস ইন্ডিয়ান রুলার বলা হয়। তবে সে সময় তারা ছাড়াও বাইরে থেকেও কিছু আক্রমণকারী ভারতের প্রবেশ করেছিল। তারাও সেসময় রাজত্ব করেছিল ভারতবর্ষের বুকে।

সেই সময় ভারতে চালুক্য,পল্লব, রাষ্ট্রকূট, চোল, এবং পাণ্ড্য-র  মতো কিছু শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল। এএখনকার দিনে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সাহায্যে  ভারতের তো বটেই গোটা পৃথিবীর  এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া যায় খুব সহজেই। কিন্তু, সেই সময় যাতায়াত ব্যবস্থা এতটাও সুগম ছিল না। তখনকারদিনে মানুষ বেশিরভাগ সময় পায়ে হেঁটেই  যাতায়াত করতেন নয়তো তাদের ভরসা করতে হতো গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি কিংবা পালতোলা নৌকার ওপর। তাছাড়া তখনকার  মানুষজন নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে খুব একটা দূরে যেতে পছন্দও করতেন না। তাছাড়া দূরের পথ পাড়ি দেওয়া নিয়ে মানুষের মনে ছিল নানা ধরনের কুসংস্কার। তখনকার দিনে বিভিন্ন জায়গার মানুষের কথা বলার ধরণই  ছিল আলাদা। মানুষ যেহেতু খুব একটা বাড়ি থেকে বাইরে বের হতেন না তাই তারা কেউই একে অপরের ভাষা সম্পর্কে ওয়াকিবহুল থাকত না।

তখনকার দিনে আজকের মত বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ছিল না। কারণ সেই সময় কোন ফ্যাক্টরি বা মেশিন আবিষ্কার হয়নি। সেই সময় চীনে ম্যানুফ্যাকচারিং হত। তখনকার দিনে ভারতবর্ষে পোশাক, খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা উৎপন্ন হতো ব্যাপক হরে। আর ভারত থেকে এই সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি হত গোটা বিশ্বে। সেই সময় ভারত পুরো পৃথিবীতে ৩০ শতাংশ খাদ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদন করতো। এখনকার তুলনায় ১০০০ বছর আগের  শহর এবং গ্রাম্য জীবনের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

সেযুগে আজকের মতো মোবাইল, সিম কার্ড এবং গ্যাজেটের দোকান ছিল না। তাই বেশিরভাগ দোকানগুলিতেই খাবার,জামাকাপড়,বাসন,সোনা-রুপো, মশলা এবং বিভিন্ন সুগন্ধি ছাড়াও বিক্রি হতো ফল-ফুল এবং বিভিন্ন ধার্মিক জিনিসপত্র। তখনকার কারিগরেরা কোন মেশিনের উপর নির্ভর না করে নিজের হাতেই সমস্ত কাজ করতো। তখনকার দিনে ছুতোর-কর্মকার-কুমোর সবাই নিজের কাজে পারদর্শী ছিল। জানলে অবাক হবেন, সেই সময় ভারতের ১০ শতাংশ মানুষ শহরে আর গ্রামে থাকতেন ৯০ শতাংশ মানুষ।

প্রতি গ্রামে জলের জন্য পুকুরের ব্যবস্থা থাকত। এছাড়া প্রত্যেক গ্রামে কম করে একটি মন্দির বা মসজিদ থাকতোই। তখনকার দিনে গ্রামের কৃষকরা চাষবাসের জন্য মূলত বৃষ্টির জলের ওপরে নির্ভরশীল ছিলেন।  ১০০০ বছর আগে সমস্ত বাড়িঘর বা বড়বড় মহল তৈরি হতো, মাটি কাঠ বা হাতে তৈরি ইঁট দিয়ে। এখনকার দিনে সিমেন্টের তৈরি বাড়ির আয়ু ৩৫ থেকে ৪০ বছর। যা তৈরির ১০ থেকে ১৫  বছরের মধ্যেই ফাটল ধরতে শুরু করে। কিন্তু পুরনো দিনের সমস্ত বাড়ি ঘর প্রাসাদ বানানো হতো চুনা মাটি আর সাধারণ মাটি দিয়ে।  যার আয়ু ৫০০ থেকে ১০০০ বছর।

পুরনো দিনের জিনিসপত্র কেনাবেচা করা হতো মুদ্রার সাহায্যে।  যা এখন টাকা এবং পয়সার পরিবর্তিত হয়েছে।  কিন্তু তখনকার বেশিরভাগ মানুষের লেনদেন প্রথার মাধ্যমে বেশিরভাগ জিনিস কেনাবেচা করতেন। তখনকার দিনে বেশিরভাগ মানুষই পারিবারিক ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখনকারদিনে কেউ যদি পড়াশোনা করে চাকরি না পায় তবেই সে ব্যবসা পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন।

তখনকার দিনের বিচার ব্যবস্থা রাজ্যের রাজাদের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল। এখন  ন্যায় বিচারের জন্য আদালত থাকলেও তখনকার দিনে গ্রামের সমস্যার জন্য গ্রামের বয়স্ক মানুষরাই পঞ্চায়েত বসাতেন। তখনকার দিনে বেশিরভাগ মানুষেরই দেখাশোনা করেই বিয়ে হত।  তবে একই গ্রামের বা একই গোত্রের ছেলেমেয়েরা একে অপরের সাথে বিয়ে করতে পারতেন না। তখনকার দিনে যানবাহনের সুবিধা না থাকায় বরযাত্রীরা গরুর গাড়িতে চেপেই যেত। তখনকার দিনে পড়াশোনার জন্য পাঠশালা চলত। জানলে অবাক হবেন তখনকার দিনে ভারতীয়দের সাথে পড়াশোনা শেখার জন্য বিদেশীরা এদেশে আসতেন। যদিও এখন তার উল্টোটাই বেশি চোখে পড়ে  .


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *