পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ভারতের তাজমহল। ১৬৩১ সালে শাহজাহান মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই তাজমহল নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন। তারপর প্রায় ২২ বছর ধরে এই তাজমহল তৈরি করেছিলেন কারিগরেরা। যা নিয়ে রয়েছে একাধিক অজানা রহস্য। বলা হয় তাজমহলের সামনে যে বিরাট বেসমেন্ট রয়েছে তার নীচেই নাকি ২২ তা কামরা রয়েছে। বলা হয় এই বেসমেন্টের নিচেই নাকি কবর দেওয়া হয়েছিল শাহজাহানের বড় ছেলে দারা শিকোর কাটা মাথা। জানা যায় শাহজাহান অসুস্থ হওয়ার পরে ঔরঙ্গজেব নিজের দাদা দারা শিকোর কাটা মাথা উপহার দিয়েছিলেন বাবা শাহজাহানকে। আর সেই মাথা তাজমহলের সামনেই কবর দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যাতে শাহজাহান যখনই তাঁর প্রিয় তাজমহলের দিকে তাকাবেন তখনই তার মনে পড়ে ছেলে দারা শিকোর কথা।
স্ত্রী মমতাজকে ভালোবেসে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই তাজমহল বানিয়ে ছিলেন শাহজাহান। তাই তাজমহলকে বলা হয় ভালোবাসার প্রতীক। কিন্তু সত্যিই কি তাই? কারণ ছাড়াও শাহজাহানের আরও একাধিক স্ত্রী ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই মমতাজের বিয়ে হয়েছিল শাহজাহানের সাথে। আর বিয়ের পর থেকেই একের পর এক সন্তানের জন্ম দিতে দিতে ১৪ জন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন মমতাজ। তবে শেষ সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় প্রচন্ড রক্তপাতের ফলে মারা যান শাহজাহান। এমনকি শোনা যায় মমতাজের মৃত্যুর পরেই শাহজাহান তাঁরই এক বোনকে বিয়ে করেছিলেন। তাই মমতাজকে ভালোবেসে শাহজাহান তাজমহল বানালেও প্রশ্ন থেকে যায় তার ভালোবাসা কতটা খাঁটি ছিল তা নিয়ে।
তাজমহলের বাইরে মার্বেলের তৈরি জালি ভিতরে রয়েছে একাধিক বন্ধ দরজা। কিন্তু তার ভিতরে কি আছে, তা আজও রহস্য গোটা পৃথিবীর কাছে। এই রহস্য উদঘাটন করার অনুমতি দেয়নি খোদ ভারত সরকারও। তাজমহল তৈরি সাদা মার্বেল দিয়ে। যা আনা হয়েছিল রাজস্থানের মাকরানা থেকে।গোটা তাজমহলের গায়ে সুন্দর সব পাথর দিয়ে কারুকার্য করা রয়েছে। যার উপর আলো ফেললে তা জ্বলজ্বল করে ওঠে। তাই পূর্ণিমার রাতে যখন চাঁদের আলো তাজমহলের গায়ে এসে পড়ে তখন তা অপরূপ শোভা পায়।কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন রাতের বেলায় তাজমহলে কোনো বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হয় না কেন? আসলে রাতের বেলাতেও তাজমহলকে দেখার জন্য কোন রকম আলোর প্রয়োজনই পড়ে না। তাজমহলে ব্যবহৃত সাদা মার্বেল পাথর একে অমাবস্যার রাতেও একইরকম উজ্জ্বল করে তোলে।এছাড়া এখানে যদি রাতে কোন বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হয় তাহলে পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়বে, যা তাজমহলের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাছাড়া রাতের বেলা তাজমহলে আলো থাকলে পর্যটকদের ভীড় অনেক বেড়ে যাবে। যার ফলে প্রশ্ন উঠবে তাজমহলের নিরাপত্তা নিয়ে। এই কারণেই তাজমহলে কোন বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হয় না।
তবে জানলে অবাক হবেন, মায়াবী এই তাজমহল দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। একদম ভোরবেলা তাজমহল দেখতে গোলাপি রঙের হয়, সূর্যের আলোয় তাজমহল সাদা রঙের দেখায়। বিকেলে সূর্যাস্তের পর গোধূলি বেলায় তাজমহল হয়ে যায় একেবারে সোনালী রঙের। আর রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় তাজমহল নীল রঙের দেখায়। তাজমহলের সামনেই রয়েছে বিখ্যাত ঝর্ণা। মুঘল আমলে কোন বিদ্যুৎ ছিল না ছিল না, কোন মটরের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু তারপরেও বিশেষ পদ্ধতিতেই চলতো এই ঝর্ণা গুলি। জানা যায় তাজমহলের সামনে যে খোলা জায়গা রয়েছে একসময় সেখানে নানানা রংবেরঙের ফুলের বাগান ছিল।
তাজমহলের সামনে যে প্রধান প্রবেশদ্বার আছে অর্থাৎ রয়্যাল গেট রয়েছে তার গায়ে কিছু ক্যালিগ্রাফি করা রয়েছে যা করাতে শাহজাহান ইরান থেকে আব্দুল হামিদ বলে একজন কালিওগ্রাফারকে নিয়ে এসেছিলেন। এই ক্যালিগ্রাফেতে যা লেখা আছে তার বাংলা অনুবাদ হলো ‘হে আত্মা তুমি ঈশ্বরের কাছে বিশ্রাম করো। ঈশ্বরের পরম শান্তি তোমার ওপর ঝরে পড়ুক’। এই রয়্যাল গেটের মাথায় যে ১১ টা গম্বুজ রয়েছে তারও রয়েছে বিশেষ অর্থ। তাজমহল ২২ বছর ধরে তৈরি করা হয়েছিল। তাই এই রয়েল গেটের সামনে ১১ টি গম্বুজ এবং পিছনের দিকে ১১ টি গম্বুজ রয়েছে। এই প্রবেশদ্বারের অন্যতম একটি বিশেষত্ব হলো এই গেট দিয়ে যত ভেতরের দিকে প্রবেশ করা যায় তাজমহলকে তত ছোট দেখায় আর যত বাইরের দিকে আসা যায় তত তাজমহলকে বড় দেখায়।
তাজমহলের প্রধান সৌধের ওপর যে উঁচু গম্বুজটা রয়েছে তার উচ্চতা ৭৩ মিটার। আর ভারতের সবচেয়ে উচ্চতম মিনার অর্থাৎ কুতুবমিনারের উচ্চতা ৭২ মিটার। তাজমহলের প্রধান সৌধের ওপরে যে গম্বুজ রয়েছে তা একসময় পুরোটাই সোনার তৈরি ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ইংরেজরা, সেই সোনা খুলে লুট করে নিয়ে গিয়ে পরিবর্তে পিতল এবং কাঁসার গম্বুজ নির্মাণ করে গিয়েছিল। আর সেই কাঁসা-পিতল বৃষ্টি জল এবং বাতাসের সংস্পর্শে এসে কালো হয়ে গিয়েছে। তাজমহলের চারদিকে রয়েছে চারটি পিলার। যা একটু বাইরের দিকে ঝুঁকিয়েই তৈরি করা হয়েছে। ভূমিকম্প বা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যদি এই পিলার ভেঙে পড়ে তাহলে তা যাতে তাজমহলের প্রধান সৌধের কোনো ক্ষতি না করে সেই কারণে এই পিলারগুলি এভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে তাজমহলের যে প্রধান গম্বুজ রয়েছে তার নীচে কোন পিলার নেই।
Leave a Reply