মেয়েদের জীবন কই মাছের মত! বহু দিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে এই প্রবাদ। কিন্তু এই প্রবাদ যে শুধুমাত্র লোকমুখে প্রচলিত তা কিন্তু নয়! এই বক্তব্যের পিছনেও রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও জানা গিয়েছে পুরুষরা নারীদের থেকে অনেক বেশি শারীরিক কষ্ট করলেও তাদের গড় আয়ু কিন্তু অনেকটাই কম হয়। জানলে অবাক হবেন মেয়েদের এই দীর্ঘায়ু কিন্তু কেবলমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই নয় একই হয়ে থাকে স্ত্রী পশু-পাখিদের ক্ষেত্রেও। তাই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার ওপর জোর নেই বিজ্ঞানেরও। পৃথিবীতে সত্যিই যে নারীরা পুরুষদের থেকে অনেকদিন বেশি বাঁচে আগে তার কোনো প্রমাণ ছিল না বিজ্ঞানীদের কাছে।
তাই আগে শুধুই অনুমান করা হতো, মহিলারা তাঁদের জীবনযাত্রার জন্যই বেশিদিন বাঁচেন। তবে এবার আর অনুমান নয়, এখন এর উত্তরও রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। কয়েক বছর আগে ‘এজিং সেল’ নামে এক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন মেয়েদের জিনেই নাকি লুকিয়ে রয়েছে তাদের জীবনের মূল মন্ত্র।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভ্রুণ অবস্থাতেই সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর জিনগত বিভাজন তৈরি হয়ে যায়। তাই দু’টি ভ্রূণেই ২৩ জোড়া ক্রোমোজ়োম থাকলেও,মোট ২২ জোড়া ক্রোমোজ়োম এক রকম হয় আর শেষ একটি জোড়া আলাদা হয়। তাই সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর পুরুষদের প্রতিকোষে থাকে একটি X ক্রোমোজোম, এবং Y ক্রোমোজোম। আর স্ত্রীদের প্রতি কোষে থাকে দুটো X ক্রোমোজোম। তাই ছেলেদের ক্ষেত্রে যা ‘XY’ সেটাই মেয়েদের ক্ষেত্রে হয় ‘XX’ ।
এই X ক্রোমোজোম গুলির মধ্যেই থাকে পৃথিবীতে টিকে থাকার দরকারি জিন। এছাড়াও থাকে মস্তিস্কের কাজ দেখার জিন। আর পুরুষদের Y ক্রোমোজোমটির মধ্যেই থাকে বিভিন্ন পুরুষালি লক্ষণের জিন।
পুরুষদের তুলনায় স্ত্রীদের আয়ু কেন বেশী হয় তা জানতেই ইঁদুরের ওপর একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাই স্ত্রী ইঁদুরের ডিম্বাশয়ে পুরুষদের XY ক্রোমোজোম ও আর পুরুষ ইঁদুরের শুক্রাশয়ে নারীদের XX ক্রোমোজোম ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এরফলে পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল মোট চার ধরনের ক্রোমোজোম যুক্ত ইঁদুর।
সাধারণত ইঁদুরের জীবন কাল হয় ২১ মাসের। তাই গবেষণাগারে থাকা চার ধরনের ইঁদুরগুলির বয়স ২১ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন সবার আগে মারা গিয়েছিল ক্রোমোজোম পালটে দেওয়া স্ত্রী ইঁদুরগুলি। তারপর মৃত্যু হয়েছিল স্বাভাবিক পুরুষ ইঁদুরের। আর ক্রোমোজোম বদলে দেওয়া পুরুষ ইঁদুরগুলি এই দীর্ঘায়ু হওয়ার লড়াইয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল। আর সবচেয়ে বেশিদিন বেঁচে ছিল স্বাভাবিক স্ত্রী ইঁদুরগুলি।
বিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন স্ত্রী ইঁদুরের দ্বিতীয় X ক্রোমোজোমটিই হল সেই জিন, যা স্ত্রী ইঁদুরকে দীর্ঘায়ু হতে সাহায্য করে। এই দ্বিতীয় X ক্রোমোজোমটিই পুরুষদের দেহে না থাকায় পুরুষদের আয়ু কম হয় ।
Leave a Reply