বাবা মন্দির

পাহাড়প্রেমী ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অত্যন্ত পছন্দের একটি জায়গা হল সিকিম। বরফ ঢাকা মনোরম পাহাড়ি পরিবেশের মাঝে হারিয়ে যেতে কার না মন চায়!  তাই কাজের ব্যস্ততার মধ্যে সুযোগ পেলেই সিকিম ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান কেউই। আর সিকিমে গিয়ে বাবা মন্দিরে যান না এমন পর্যটক নেই বললেই চলে।  এই মন্দিরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু অজানা কাহিনী। তবে মন্দিরের নাম ‘বাবা মন্দির’ হলেও ভারতীয় ধর্ম গুরুদের সাথে  কিন্তু এই মন্দিরের ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি এই মন্দিরের ‘বাবা’ কিন্তু হিন্দু ধর্মের কোনো ঠাকুর দেবতাও নন।

আসলে বহুদিন আগে হরভজন সিং নামে এক ভারতীয় সেনার নামে তৈরী হয়েছিল এই মন্দির। বাবা মন্দিরের হরভজন সিং-কে ঘিরে  আজও নানান অলৌকিক ঘটনা  সিকিমের হাওয়ায় ভাসে। বলা হয় মৃত্যুর পরেও নাকি তিনি অক্লান্তভাবে সাহায্য করে চলেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। তাঁর  নামে সিকিমের পাহাড়ি অঞ্চলে দুটি মন্দির আছে। যার মধ্যে একটি হল ওল্ড সিল্ক রুটের পুরনো বাবা মন্দির আর একটি গ্যাংটক থেকে অদূরেই নাথুলা পাসে  অবস্থিত নতুন বাবা মন্দির। তবে পুরনো মন বাবা মন্দিরে যাওয়া একটু বেশি কঠিন।

জানা যায়  ১৯৪৬ সালের  ৩০ আগস্ট পাকিস্তানের একটি গ্রামের শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন হরভজন সিং।  তবে দেশভাগের পর তাঁর পরিবার পাঞ্জাবে চলে এসেছিলেন। পরে পাঞ্জাবের  ডিএভি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন হরভজন। মেট্রিকুলেশন শেষ করেই মাত্র ২০ বছর বয়সে পাঞ্জাব রেজিমেন্টে সিপাহী যোগদান করেন তিনি।  তখন ভারত চীন যুদ্ধ শেষে ভারতের সীমান্ত এলাকায় ছিল ছিল অশান্ত পরিবেশ। তখন মাত্র ২২ বছর বয়সে শহীদ যান হরভজন সিং। নাথুলাতে যুদ্ধের সময় প্রাণ হারান তিনি। নাথুলার  সীমান্তের কাছেই  ছিল  হারভজনের পোস্টিং।

সেই সময় ৩ দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর মরদেহ। তাই উর্দ্ধতন কর্তারা  ধরেই নিয়েছিলেন রণে ভঙ্গ দিয়েই  যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়েছেন হরভজন। যদিও তাঁর মৃত্যু নিয়ে শোনা যায় আরো একটি ঘটনা। সে সময় নাকি  সিকিমের ভয়াবহ  প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে প্রচন্ড  বর্ষায় পা পিছিলে গিয়ে প্রবল জলেটানে   ভেসে গিয়েছিলেন তিনি। তবে শোনা যায় হরভজন নাকি তাঁর মৃত্যুর পর এক বন্ধুর স্বপ্নে এসে জানিয়েছিলেনতাঁর  মরদেহ কোথায় পড়ে আছে। সেখানে খোঁজ করেই নাকি উদ্ধার করা হয়েছিল তাঁর মরদেহ। এরপর পূর্ণ সামরিক মর্যাদা দিয়ে হারভজনের দেহ দাহ করা হয়েছিল।

তবে তার পরেও নাকি তাঁর  আত্মাকে হামেশাই দেখতে পেতেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর যোদ্ধারা। তিনি  নাকি সেনাবাহিনীর সদস্যদের স্বপ্নে এসে শত্রুপক্ষের কৌশল জানিয়ে দিতেন।  এমনকি নাইট ডিউটিতে কোন সৈনিক পাহারা দেওয়ার সময় ঘুমিয়ে পড়লে তার গালে হরভজনের  আত্মা এসে চড় মেরে তাকে জাগিয়ে দিয়ে যেতেন। মৃত্যুর পরেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি এই অবদানের জন্য তিনি যা মাসিক বেতন পেতেন তা তাঁর  মায়ের কাছে পাঠানো হতো।

শুধু তাই নয় হরভজন বার্ষিক ছুটিও পেতেন, ছুটির জন্য তাঁর  ব্যাগপত্র গোছানো হতো।  প্রতি বছর তিনজন সেনা সদস্য তাঁর  বাড়িতে তাঁর  ব্যাগ পত্রও  নামিয়ে আসতেন। হরভজনের জন্য ট্রেনে আসন বুক করা হতো। মৃত্যুর পরেও হরভজন প্রমোশন পেতেন। তাই একজন সেপাহী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলে পরে তিনি অবসর নেন একজন অধিনায়ক হিসাবে। এইভাবেই সময়ের সাথে সাথে হরভজন একজন সেনা থেকে ‘বাবা’ হয়ে উঠেছিলেন।  আজও নাথুলার নায়ক বলা হয় তাঁকে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *