১ম মহাকাশে গিয়েছিল রাস্তার কুকুর লাইকা জানেন কি ঘটেছিল তার সঙ্গে? লাইকার মর্মান্তিক পরিণতি জানলে কাঁদতে বাধ্য হবেন
১ম মহাকাশে গিয়েছিল
রাস্তার কুকুর লাইকা
জানেন কি ঘটেছিল তার সঙ্গে?
জীবন্ত পৌঁছালেও
কেন ফিরতে পারল না সে?
৩৫ বছর পর জানা যায়
ভয়ঙ্কর সত্য!
লাইকার মর্মান্তিক পরিণতি জানলে
কাঁদতে বাধ্য হবেন
যদি প্রশ্ন করা হয় প্রথম কোন প্রাণী মহাকাশে গিয়েছিল, উত্তরে অনেকেই হয়ত বলবেন, মাছি, ইঁদুর, বাঁদর! আবার অনেকেই হয়ত এই উত্তর জানেন না। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর, পৃথিবী থেকে প্রথম মহাকাশ যাত্রী ছিল ১টি কুকুর। হ্যাঁ একদমই তাই। কোন মানব নয়। ১টি কুকুরই ছিল মহাকাশের সর্বপ্রথম যাত্রী। যার নাম লাইকা। বিশ্বের ইতিহাসে লাইকাই প্রথম জীবিত প্রাণী যে মহাকাশে গিয়েছিল। এক সময়, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে কি না সেই নিয়ে মানুষের কোনও ধারণাই ছিল না। মহাকাশ গবেষণার জন্য আদৌ নিরাপদ কি না সেই তথ্যও ছিল না মানুষের কাছে। সেই সমস্ত তথ্য মানবজাতিকে পৌঁছে দিতেই মহাকাশে মানুষের পরিবর্তে সবার প্রথম পা রাখে লাইকা। অত্যন্ত শান্ত ও আদুরে একটি কুকুর ছিল লাইকা।
লাইকাকে যখন মহাকাশে পাঠানো হয়, তখন লাইকার গোটা শরীর হালকা হয়ে যায়। সেই সময় লাইকার হৃদস্পন্দনের গতি আচমকা বেড়ে যায়। সে একেবারেই শান্ত ও চুপচাপ হয়ে যায়। সেই সময় অবলা লাইকা যেন তার জীবনকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়। লাইকা আর কখনোই পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে না, সেটা জেনেই লাইকাকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। পৃথিবীর প্রথম মহাকাশ যাত্রী লাইকা ছিল অলিতে গলিতে বাস করা ১টি সাধারণ কুকুর। আজ থেকে ৬৬ বছর আগে ১৯৫৭ সালে পৃথিবী থেকে পাঠানো ২য় মহাকাশ যান স্পুটিংক টু এর সসদ্য ছিল লাইকা। এটি মহাকাশের ইতিহাসে ১টি যুগান্তরকারী ঘটনা। স্পুটিংক টু মিশনটি পরিচালনা করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারাই এই মিশনটিতে এক্সপেরিমেণ্টের জন্য কুকুর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের ৩ টি দল রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে অসহায় স্ত্রী কুকুরদের উদ্ধার ও সংগ্রহ করতে শুরু করেছিল। সেখান থেকেই মহাকাশে পাঠানোর জন্য বাছাবাছি শুরু হয়। মহাকাশ যাত্রার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম পছন্দ ছিল স্ত্রী কুকুর। কারণ স্ত্রী কুকুরেরা শান্ত হয়। একই সাথে রাস্তার কুকুরকে বেছে নেওয়ার কারণ এরা অনেক পরিশ্রমি হয়। অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেও রাস্তার কুকুরেরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। মহাকাশ অভিযানের লক্ষ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন এমনই ১টি কুকুরের সন্ধান চালাচ্ছিল। অবশেষে হাজার বাছাবাছির পর তারা লাইকাকে খুঁজে পান। মস্কোর এক গলিতে লাইকার সন্ধান মেলে। ছোট্ট, রোগা পাতলা লাইকা ছিল একটি মিশ্র প্রজাতির কুকুর। লাইকার চোখ গুলো ছিল মায়াবী। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করবে এমন। লাইকার আগের নাম ছিল কুদ্রা ইয়াবকা। লাইকা নামকরণ করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। আন্তর্জাতিকভাবে এই নামকরণ হয়। মহাকাশ যাত্রার সময় লাইকার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। মহাকাশে পাঠানোর আগে লাইকাকে টানা ২০ দিন কঠিন থেকে কঠিনতম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। লাইকাকে মহাকাশে যাত্রার জন্য পুরোপুরিভাবে তৈরি করা হয়। যেহেতু মহাকাশ যানের মধ্যে খুব ছোট জায়গায় থাকতে হবে, তাই লাইকাকে ১টি ছোট্ট ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়। লাইকা সমস্ত কঠিন কঠিন পরীক্ষায় পাস করে অবশেষে মহাকাশে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র পায়। এর পর আসে সেই দিন, যেদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুটিংক টু করে লাইকাকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। যাওয়ার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক হলেও, স্পুটিংক টু এমনভাবে তৈরি হয়েছিল, যাতে সেটা পৃথিবীতে আর ফিরে না আসে। এই অভিযানের সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক ছিল এটি। আসলে পৃথিবীর বাইরে ১টি জীবদেহের উপর ওজনহীনতার কি প্রভাব পড়তে পারে, সেই নিয়ে মানুষের কোনও ধারণাই ছিল না। আর এই বিষয়টি জানতেই স্পুটিংক টু নামক পরীক্ষা মূলক মিশনটি চালায় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা। আর এই মিশনে সবচেয়ে করুণ ও ভয়ানক পরিণতির শিকার হয় লাইকা। স্পুটিংক টু অভিযানে লাইকার জন্য অক্সিজেন রাখা ছিল মাত্র ৭ দিনের। শোনা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা চেয়েছিলেন লাইকা যেন বিনা অক্সিজেনে প্রান হারায়। লাইকা এমনিতেও সেখানে সারভাইভ করতে পারত না। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা চাননি লাইকাকে হারাতে। কিন্তু তাদের অভিযানটাই এমন ছিল, যে লাইকাকে তাদের হারাতে হবে। তবে প্রথমে তারা লাইকাকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাধ্য হয়ে তাদের পাল্টাতে হয়। পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়ার পরেই লাইকার প্রাণ ত্যাগ হয় বলে শোনা যায়। তবে এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকেই বলেন লাইকাকে নাকি প্রাণহীনভাবেই পাঠানো হয় মহাকাশে। তর্ক বিতর্ক যাই হোক, এই কথা সত্য যে, খুবই মর্মান্তিকভাবেই মহাবিশ্বে বিলীন হয়ে যায় লাইকা। মহাকাশ অভিযানে লাইকার অবদান চিরস্মরণীয়।
Leave a Reply