শিশুর বুদ্ধিমত্তা

সন্তান কার মতো দেখতে মায়ের মতো নাকি বাবার মতো? তার স্বভাব চরিত্রের সাথেই বা কার মিল রয়েছে বেশি?  এই নিয়ে ঝগড়া কিংবা তর্ক বিতর্ক বহুদিনের। কিন্তু জানেন কি সন্তান বুদ্ধিদীপ্ত হয় কার জিনে?  বাবা নাকি মা, সন্তানের বুদ্ধির বেশির ভাগই কার থেকে আসে?কেউ বলেন মার তো কেউ বলেন বাবার ভাগাভাগি হয়ে যায় দুটি দল। কেউ আবার দুই পক্ষেরই সঙ্গ দেন। কিন্তু সত্যিটা আসলে কি জানেন? কি বলছে বিজ্ঞান? এবিষয়েই সম্প্রতি এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে এক অবাক করা তথ্য।

গবেষণা বলছে একজন শিশুর বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে তার মায়ের জিনের ওপরে। সেখানে নাকি বাবার জিনের কোন ভূমিকাই থাকে না।  মায়ের জিন থেকেই শিশুর মস্তিষ্কে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। দীর্ঘ সমীক্ষার শেষে এই রায় দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ডিম্বানুতে একজোড়া  এক্স ক্রোমোজোম থাকলেও শুক্রাণুতে মাত্র একটা এক্স ক্রোমোজোম থাকে। জীন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন একমাত্র এক্স ক্রোমোজোমই বুদ্ধিদীপ্ত জিন বহন করে।

শুধু তাই নয় সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে জ্ঞান  সম্পর্কে উন্নত আচরণ যুক্ত  জীন নিজেই অকেজো হয়ে যায়। এই কারণেই শিশুমনে বুদ্ধির বিকাশ ঘটার পিছনে একমাত্র প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে তার মায়ের থেকে পাওয়া জীন। পরীক্ষাগারে ইঁদুরের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে মায়ের জিন প্রবেশ করিয়ে দেখা গেছে ইঁদুরের মস্তিষ্ক আর মগজের আকারের বিকাশ ঘটলেও ইঁদুরের শরীর বাকি অংশের তুলনায় ছোট।

অন্যদিকে বাবার জিনের পরিমাণ বেশি থাকলে শরীর বড় হলেও মস্তিষ্ক আর মগজ ছোট হয়। ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সী ১২ হাজার ৬৮৬ জন তরুনের ওপর সমীক্ষা করে দেখা গেছে মায়ের আইকিউ-এর ওপর নির্ভর করে সন্তানের বুদ্ধিমত্তা। বিজ্ঞানীরা দেখেন ইঁদুরের মস্তিষ্কের ছয়টি আলাদা অংশে মা -বাবার জিন কার্যকর হয়। বাবার জীন দেহের লিম্বিক সিস্টেমে কাজ করে। এই অংশটি সেক্স, খাবার এবং আগ্রাসী মানসিকতা তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা সেরিব্রাল কড অংশে বাবার কোন জিন খুঁজে পায়নি। এই অংশে কগনিটিভ ফাংশনের অধিকাংশ কাজ করে।  কারণ দর্শন, চিন্তাশক্তি, ভাষা এবং পরিকল্পনা তৈরি সঙ্গে যুক্ত এই অংশ। গবেষণা বলা হয়েছে জিন তত্ত্ব মানুষের বুদ্ধিমত্তার একমাত্র নির্ধারক নয়। বুদ্ধিমত্তার ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে বংশানুক্রমে, বাকিটুকু আসে পরিবেশ থেকে।

‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মাদারস জেনেটিকস’ সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে  মায়ের সঙ্গ,মায়ের ছোঁয়া, আর মায়ের আবেগ শিশুর আইকিউকে উন্নত করে। বিদেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিশুর উপর একটি পরীক্ষা করা হয় সেখানে দেখা গিয়েছে যে সন্তানেরা মায়ের বেশি ঘনিষ্ট, মায়ের সাথেই বেশি সময় কাটায় তারা মাত্র দু বছর বয়স থেকেই, বয়সের তুলনায় কঠিন জটিল কোন খেলা, যেমন পাজলের  সমাধান খুব সহজে করে।  ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যেসব শিশুর সঙ্গে মায়ের ঘনিষ্ঠতা বেশি হয়, তাদের  মস্তিষ্ক অনেক  উন্নত হয়। পাশাপাশি মায়ের ঘনিষ্ঠ শিশুরা কম নিরাপত্তা হীনতায় ভোগে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *