আমাদের দেশে অন্যতম বৃহত্তম গণপরিবহন ব্যবস্থা হল ভারতীয় রেল। কাজের খোঁজে দূরদূরান্ত থেকে আসা নিত্যযাত্রীদের একমাত্র ভরসা এই ট্রেন। তাই ভারতীয়দের কাছে ট্রেন ‘লাইফ লাইন’ বলেই পরিচিত। খুব কম সময়ে দ্রুত নিজের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রেলের জুড়ি মেলা ভার। তাই কোনো কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হলে কার্যত থমকে যায় গোটা জনজীবন। প্রতিদিন আমাদের দেশের ৮ হাজার রেল স্ট্রেশন থেকে লক্ষ লক্ষ যাত্রী ওঠানামা করেন। বরাবরই ট্রেনে ভ্রমণ যেমন সস্তা তেমনি আরামদায়ক। তাছাড়া যাত্রী সাধারণের সুবিধার কথা ভেবে ভারতীয় ভারতীয় রেলও ট্রেনগুলিকে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুনভাবে সাজিয়ে তোলার প্রচেষ্টাচালিয়ে যাচ্ছেন।
তেমনই অনেকদিন আগেই ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের গরমের কথা ভেবে ট্রেনে পাখা লাগানোর ব্যবস্থা করেছিল ভারতীয় রেল। অনেকেই নিশ্চই লক্ষ্য করে থাকবেন ট্রেনের পাখাগুলি বিশেষ কায়দায় বসানো থাকে। যাতে সব যাত্রীর কাছেই পর্যাপ্ত হাওয়া বসো পৌঁছায়। তবে ট্রেনের এই হরেক রকম সুবিধার মধ্যেও কিন্তু হামেশাই শিরোনামে উঠে আসে ট্রেনের জিনিসপত্র চুরির ঘটনা। তাই রেল কর্তৃপক্ষের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হল রেলের জিনিসপত্র চুরি আটকানো।
লোকাল ট্রেন তো বটেই চুরি হয়, দূরপাল্লার এক্সপ্রেসেও। ট্রেনের ফ্যান,বাল্ব ,সুইচ,বালিশ চাদর তো আছেই চোরেরা ছাড়ে না বাথরুমের মগ পর্যন্ত। যা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এই চুরির ঘটনা আটকাতে রেল কর্তৃপক্ষ এক বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে। তাই ট্রেনের ফ্যানগুলি তারা এমনভাবে ডিজাইন করেছে যা চোর চুরি করলেও তা কোনো কাজে লাগাতে পারবে না। ভারতীয় রেলে থাকা এই ফ্যান এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা কেউ চুরি করে নিয়ে গেলেও সাধারণ বাড়িতে তা চালাতে পারবে না। তাই ট্রেনে ব্যবহৃত এই ফ্যানগুলি শুধুমাত্র ট্রেনেই চালানো যায়। আর সেটা সম্ভব করার পিছনে রয়েছে প্রযুক্তির এক বিশেষ ব্যবহার।
এখানে বলে রাখি বাড়িতে সাধারণত দুই ধরনের বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। প্রথমত, এসি অর্থাৎ অল্টারনেটিভ কারেন্ট আর দ্বিতীয়ত ডিসি অর্থাৎ ডাইরেক্ট কারেন্ট। বাড়িতে ব্যবহৃত এই অল্টারনেটিভ কারেন্টের সর্বোচ্চ শক্তি হলো ২২০ ভোল্ট। কিন্তু যখন ঘরে এসির পরিবর্তে ডিসি কারেন্ট ব্যবহার করা হয় তখন তা হয় মাত্র ৫,১২ অথবা ২৪ ভোল্টের। তাই এ কথা মাথায় রেখেই ট্রেনে ব্যবহৃত ফ্যানগুলিকে ১২০ ভোল্টের তৈরি করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। যা কেবলমাত্র ডিসিতেই চলে। আর বাড়িতে ব্যবহৃত ডিসি পাওয়ার ভোল্ট হল ৫,১২ এবং সর্বোচ্চ ২৪ ভোল্ট। তাই কেউ চাইলেও এই ফ্যান চুরি করে বাড়িতে নিয়ে এসে তা ব্যবহার করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত রেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। আর এই রেলেরই অন্যান্য জিনিসের মত পাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। যা চুরি করার অর্থ জাতীয় সম্পদ চুরি করা। তাই এমনটা করলে অপরাধীর বিরুদ্ধে ৩৮০ ধারায় মামলা করা যেতে পারে। আর দোষ প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তির ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা দুই হবে।
Leave a Reply