আর ফেরা হবে না পৃথিবীতে! মঙ্গলে হারিয়ে যাবে ১৯ বছরের কিশোরী, কি নাম তার? কে এই তরুণী?
আর ফেরা হবে না পৃথিবীতে!
মঙ্গল গ্রহে হারিয়ে যাবে
১৯ বছরের কিশোরী!
কে এই তরুণী?
কি নাম তার?
কেন নিলেন এমন
কঠিন সিদ্ধান্ত?
কবে হবে এই মিশন?
একবার কল্পনা করুন আপনি পৃথিবী থেকে অনেক দূরে এমন এক জায়গায় যাচ্ছেন যেখান থেকে আর কোনও দিনই ফিরে আসতে পারবেনা না। দেখতে পারবেন না মা বাবা ও ভাই বোন সহ প্রিয়জনদের প্রিয় মুখগুলো। চির নিঃসঙ্গতা অন্ধকারে হারিয়ে যাবেন চিরদিনের জন্য। জানি এমন কোনও স্থানে যাওয়া তো দূরে কথা, কল্পনা করলেও মন কেঁপে উঠবে। তবে এমনি এক স্থানের যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন আমেরিকার আলিসা কারসেন নামে ১৯ বছরের এক কিশোরী। মেয়েটি এই প্রথম একজন মানুষ হিসেবে মঙ্গলে পা রাখতে চলেছে। পৃথিবীকে থেকে মঙ্গলের দূরত্ব এতটাই যে, কোন মহাকাশযান যদি পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাহলে তার সমস্ত জ্বালানী শুধুমাত্র যাওয়ার জন্যই পর্যাপ্ত হবে। কিন্তু ফিরে আসার জন্য আর অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না। তার মানে মহাকশ যান নিয়ে যদি কোনও ক্রমে মঙ্গলে পৌঁছানোও যায় তবে পৃথিবীতে ফিরে আসার আর কোনও পথ থাকবে না। এখানেই সাধারণত মানুষের মনে যে প্রশ্নটি আসবে, এলিসা নামের এই মেয়েটির কি মাথা ঠিক আছে? কেন নিশ্চিত প্রাণ সংকট জেনেও এত অল্প বয়সে এই অচেনা, অজানা মঙ্গল গ্রহের দিকে যেতে চাইছে সে?
এত সুন্দর ফুলের মতন একটি মেয়ে, সামনেই তো জীবন, যৌবন, সমস্ত ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে। তবে সমস্ত না জেনে এমন মন্তব্য করাটাই স্বাভাবিক। তাই চলুন প্রথমেই জেনে নিই মেয়েটি কে, কোথায় থাকে, কি উদ্দেশ্যেই বা তাঁকে এত কম বয়সে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হচ্ছে! মেয়েটির নাম আলিসা কারসেন। জন্ম ২০০৪ সালের ১০ ই মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রে। ছোট বয়সে আমরা কম বেশি কার্টুন দেখেছি। আর এই কার্টুন শিশুমনে যে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ এই ছোট্ট এলিসা। যখন তার বয়স মাত্র ৩ বছর তখন থেকেই সে এনিমেটেড কার্টুন দেখতে ভালোবাসত। দ্যা বাকিআরডি গামস নামে একটি কার্টুন সিরিজের মিশন টু মার্স এর এক পর্বে সে দেখতে পায়, ৫ বন্ধু মিলে কল্পনার মাধ্যমে লোহার পরতে ঢাকা লালচে শীতল গ্রহ মঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছে। আর তার পর থেকেই ছোট্ট আলিসা লাল গ্রহে যাওয়ার একটি সুপ্ত বাসনার জন্ম হয়। বলতে পারেন, এখান থেকেই তার মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার একটি মনস্থতাত্ত্বিক পরিকল্পনা সকলের অজান্তেই শুরু হয়ে যায়। তাঁর স্বপ্নের কথা মেয়েটি যখন তার বাবাকে বলে, তার বাবা একটুও অবাক না হয়ে বরং তার স্বপ্নে সায় দেন। আলিসাকে তার বাবা স্বপ্নপুরনে সাহায্য করতে শুরু করেন। অল্প বয়সেই, মহাকাশ সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান এলিসা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে। যারা এলিসার বয়স ও মহাকাশ জ্ঞান সম্পর্কে জানেন না, তাদের ধারণাও নেই এলিসা কতটা জ্ঞানী। আর এই এলিসাকেই বেছে নেয় মহাকাশ সংস্থা নাসা। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এলিসা ডাক পায় নাসায়। যুক্ত হয় নাসার ভবিষ্যতের মঙ্গল মিশনের যাত্রী হিসেবে। পরবর্তীতে মঙ্গলে প্রথম মানব হিসেবে পা রাখার নির্বাচনী মিশনে ৭ জন ব্যক্তির ১ জন হিসেবে ডাক পেয়েছিল সে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, এলিসার সাথে যে ৭ জন ব্যক্তি মঙ্গলে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ এলিসা। অথচ তার মনের জোর ও শক্তি দেখার মত। এখন প্রশ্ন হল তাকে কি জন্য মঙ্গলে পাঠানো হবে? কবেই বা তাঁকে মঙ্গলে পাঠানো হবে?
২০৩৭ সালে যখন আলিসার বয়স ৩২ পূর্ণ হবে, তখন এলিসা পাড়ি জমাবে মঙ্গলের লালচে মরীচিকায় ঢাকা সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশে। এটা দেখতে যে সেখানে আদৌ কি মানুষের বসবাসের কোনও সুযোগ আছে নাকি নেই , তাপমাত্রাই বা কত? অক্সিজেনের পরিমাণই কত আছে? এক্ষেত্রে মার্স মিশন যদি সফল হয়, সেখান থেকে বিভিন্ন ডাটা পৃথিবীতে পাঠানোর জন্যও তাকে পাঠানো হচ্ছে। তবে এই সবের পরেও সবচেয়ে বড় ব্যাপার মঙ্গলের বুকে সর্বপ্রথম কোনও মানুষ হিসেবে পা রেখে ইতিহাস গড়তে। তবে ভবিষ্যতের মঙ্গল যাত্রার সমগ্র বিষয়টি- ভাগ্য ও কিন্তু, কেনর – উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তা বলে এলিসা থেমে নেই। এটা জেনেও যে যাত্রা পথে অথবা মঙ্গলেই তাকে হারিয়ে যেতে হবে চিরদিনের জন্য, এগুলো তার স্বপ্নযাত্রার আনন্দের কাছে কিছুই নয়। ইতিমধ্যেই এলিসা মঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। এলিসা কোনও প্রকার শারীরিক সম্পর্ক, বিয়ে, সন্তান জন্ম, প্রেম কোনও কিছুতেই আবদ্ধ হতে পারবে না। এমনই কঠোর অঙ্গীকার নিয়ে, নাসার তরফ থেকে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছে সে। এমন কঠিন অঙ্গীকারের একটাই কারণ, কোনও মোহমায়া যাতে আলিসাকে পিছু হঠাতে না পারে। একবার ভেবে দেখুন শুধুমাত্র স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আলিসা কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে চলেছে। আলিসা যা করতে চলেছে তা আমাদের মত সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। ভাবতে অবাক লাগে মানুষের স্বপ্ন কত বিশাল হলে এমন কঠিন প্রত্যয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। আলিসা কারসন আমাদের স্বপ্ন দেখাতে শেখায়। আমাদের সকল প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়।
Leave a Reply