ভারতীয়দের চাঁদ ছোঁয়ার স্বপ্ন বহুদিনের। ২৩ আগস্ট ঠিক সন্ধ্যা ছটা বেজে চার মিনিটে ভারতের তৃতীয় চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছুঁতেই পূরণ হয়েছে ভারতীয়দের সেই বহুদিনের স্বপ্ন। যা নিঃসন্দেহে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বহুদিনের। রহস্যে মোড়া চাঁদের সবচেয়ে অন্ধকার দিক হলো দক্ষিণ মেরু। সেখানেই এই প্রথম অবতরণ করেছে ভারতের পাঠানো চন্দ্রযান। এর আগেও আমেরিকা, চীন এবং রাশিয়ার মতো দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা কেউই সফল হয়নি।
এখানে বলে রাখি ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখার কিছুদিন আগে রাশিয়াও সেখানেই মহাকাশযান পাঠিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার পাঠানো মহাকাশযান সফ্ট ল্যান্ডিং করার আগেই চাঁদের কক্ষপথে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। যার ফলে ব্যর্থ হয় রাশিয়ার ১৬০০ কোটি টাকা বাজেটের লুনা ২৫ মিশন। তবে এই অসাধ্য সাধন করতে ভারতের ইসরোর বিজ্ঞানীদের খরচ হয়েছে ৬১৫ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত এর আগে আমেরিকার, রাশিয়া কিংবা চীনের মতো শক্তিধর দেশগুলি চাঁদের অন্যান্য জায়গায় অবতরণ করলেও আজ পর্যন্ত দক্ষিণ মেরু থেকে গিয়েছে গোটা পৃথিবীর কাছে রহস্যের অন্ধকারে।
পৃথিবী থেকে চাঁদের মোট দূরত্ব ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার। চাঁদের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগে ১.৩ সেকেন্ড। যদিও প্রতিনিয়ত চাঁদের সাথে বাড়তে থাকা পৃথিবীর দূরত্ব এই মুহূর্তে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের চিন্তার অন্যতম কারণ। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যায় ১৯৬৯ সালে মানুষ প্রথমবার পা রেখেছিল চাঁদের মাটিতে। তবে চাঁদ মানুষের বসবাসযোগ্য কিনা তা জানতে মরিয়া গোটা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা। যদিও ইতিপূর্বে চাঁদে জলের উপস্থিতি অস্বীকার করেছিল আমেরিকার গবেষণা কেন্দ্র নাসা। তবে ভারতের চন্দ্রযানই প্রথম দাবি করে চাঁদের মাটিতে জল রয়েছে। আর তারপর বিক্রমের সফল অবতরণের পর তৈরি হয়েছে আরো এক নতুন ইতিহাস। তাই এখন গোটা বিশ্বের চোখ ভারতের দিকেই।
কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠছে চাঁদের আসল মালিক কে? পৃথিবীর কোন দেশের মালিকানা রয়েছে রয়েছে চাঁদের ওপর? এ প্রসঙ্গে কি বলছে মহাকাশ আইন? প্রসঙ্গত চাঁদে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জমি জায়গা কিনে রেখেছেন ভারতীয়রা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রয়াত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়ে চাঁদের এক টুকরো জমি কিনেছিলেন এই অভিনেতা। জীবিত অবস্থায় বাড়িতে বসেই নিজের টেলিস্কোপ দিয়ে সেই জমির দেখা শোনা করতেন সুশান্ত। এখন বহু সেলিব্রিটিদের মধ্যেও বাড়ছে চাঁদে জমি কেনার ঝোঁক।
কিন্তু প্রশ্ন হল চাঁদে জমি কিনলেই কি চাঁদের জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন পৃথিবীর মানুষ? এ বিষয়ে আউটার স্পেস ট্রিটি ১৯৬৭ – এ স্পষ্ট জানানো হয়েছে পৃথিবীর কোন দেশ কিংবা ব্যক্তি কখনও মহাকাশ বা চাঁদ কিংবা মহাবিশ্বে অবস্থিত অন্যান্য কোন নক্ষত্র বা গ্রহের ওপর মালিকানা দাবি করতে পারবে না। তাই চাঁদে অভিযান চালিয়ে যতই দেশের পতাকা ওড়ানো হোক না কেন পৃথিবীর কোন দেশই চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারবে না।
Leave a Reply