অবশেষে চাঁদের মাটিতে পা রাখার স্বপ্ন সফল হয়েছে ভারতের। ২৩ আগস্ট, ঠিক সন্ধ্যা ছটা বেজে চার মিনিট। ওই সময়েই চাঁদের মাটি ছুয়েছেন ইসরোর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। লাইভ টেলিকাস্টের মধ্যে দিয়েই সেই বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন গোটা বিশ্ববাসী। গোটা দুনিয়ায় ইতিহাস তৈরীর পর থেকেই আনন্দে ফেটে পড়েছেন গোটা দেশবাসী। এখানে বলে রাখি চাঁদে পৌঁছানোর নিরিখে ভারত পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হলেও, এখনও পর্যন্ত চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয় করেছে ভারত একাই। আগে আমেরিকা, রাশিয়া কিংবা চীনের মত শক্তিশালী দেশগুলি এই অভিযান চালালেও তারা চাঁদের মাটিতে সফ্ট ল্যান্ডিং করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
২০১৯ সালে ব্যর্থ হয়েছিল ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযান অভিযানও। সেসময় চোখের জল ফেললেও সেই মিশন ছিল শিক্ষনীয়। তাই সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার চাঁদ জয়ের শেষ হাসিটা হাসল ভারতীয়রাই। চাঁদের দক্ষিণ মেরুজয়ের অসাধ্য সাধন করে ইতিহাস তৈরি করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। যা আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। তবে ভারতীয়দের এই চন্দ্র অভিযানের যাত্রাটা কিন্তু মসৃণ ছিল না একেবারেই।
প্রায় এক হাজার ইঞ্জিনিয়ার এবং গবেষকদের পরিশ্রম এবং মেধা রয়েছে এই সাফল্যের পেছনে। তাঁদের মধ্যে বাংলা থেকেও অংশ নিয়েছিলেন সাত বিজ্ঞানী। তাঁদের সকলের দিনরাত এক করে করা অক্লান্ত পরিশ্রম আর শতাধিক নিদ্রাহীন রাত এনে দিয়েছে আজকের এই সাফল্য। যা দেখে কুর্নিশ জানিয়েছে নাসাও। শুরু থেকেই এ বিষয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অভিযান সফল হওয়ার পরেও মুড়ে দিয়েছেন প্রশংসায়। শুভেচ্ছা এসেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকেও, ফোন করেছিলেন চেন্নাইয়ের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও।
তবে তিনি ইসরোর প্রশংসা করার পাশাপাশি বিশেষ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইসরোর একজন বিশেষ সদস্যকে। যিনি আদতে তামিলনাড়ুর ভূমিপুত্র। তাঁকে ছাড়া হয়তো সম্ভবই হতো না ভারতের গৌরবময় এই চন্দ্র অভিযান। কথা হচ্ছে চন্দ্রযান-৩ -এর প্রজেক্ট ম্যানেজার পি বীরমুথুভেল সম্পর্কে। শুধু তামিলনাড়ু নয় ভারতীয় এই বিজ্ঞানীর জন্যই আজ গর্ব করছে গোটা দেশ। তাঁকে ফোন করে বিশেষ শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন খোদ চেন্নাইয়ের মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন নিজেই। গত মাসের ১৪ ই জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল ভারতের চন্দ্রযান-৩। তার ঠিক ৪০ দিনের মাথায় সারা দেশবাসীর প্রার্থনাকে সফল করেই চাঁদের মাটিতে সফ্ট লেন্ডিং করেছে ল্যান্ডার বিক্রম। সেই দৃশ্য দেখার পর থেকেই আনন্দে ফেটে পড়েছিলেন গোটা দেশবাসী,সেইসাথে উৎসবের ঢল নামে দেশের নানা প্রান্তে।
এই মিশন সফল হওয়ার পর থেকে ইতিমধ্যেই দেশবাসীর কাছে হিরো হয়ে গিয়েছেন ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ। তবে এদিন নিজের টিমের সাথে পরিচয় করানোর সময় প্রথমেই তিনি যাঁর সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন তিনি হলেন এই মিশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর পি বীরমুথুভেল। তামিলনাড়ুর ছোট্ট শহর বিল্লুপুরাম। সেখানেই ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতের এই সফল চন্দ্র অভিযানের নেপথ্য নায়ক পি বীরমুথুভেল। তাঁর বাবা ছিলেন রেলওয়ের টেকনিশিয়ান। ৩০ বছর ধরে রেলে দক্ষিণ শাখায় কাজ করেছেন তিনি। এদিন ছেলে বীরমুথুভেলের সাফল্য দেখে চোখের জল বাঁধ মানেনি তাঁর।
বাবা রেলে চাকরি করতেন তাই রেলওয়ে স্কুলেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল তাঁর। এরপর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করেন তিনি। এরপর চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করার পর দেশের একটি বড় কলেজে পড়ার সুযোগ পান বীরমুথুভেল। সেখানেই শেষ করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এরপর আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ডক্টরেট করেন তিনি।
এরপর ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করে ২০১৪ সালে প্রথম যোগ দেন দান ইসরোয়। নিজের যোগ্যতাতেই নির্বাচিত হন ইসরোর ডেপুটি ডিরেক্টর। ২০১৯ সালের দ্বিতীয় চন্দ্রযান অভিযানেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সেসময় প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন ভানিথা এবং ইসরোর প্রধান ছিলেন কে শিভান। এই প্রকল্পের জন্য ইসরোর হাতে লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর হাতে তুলে দিয়েছিল নাসা। সে গুলোকে কিভাবে চন্দ্রযান ৩-তে ব্যবহার করা যায় তার গোটা পরিকল্পনায় নেতৃত্বে দিয়েছেন বীরমুথুভেল।
Leave a Reply