রাকেশ শর্মা

ভারতের মহাকাশ অভিযানে সদ্য জুড়েছে নতুন পালক। ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট দিনটি এবার থেকে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। এদিন সন্ধ্যা ৬ টা বেজে  ৪ মিনিটে ভারতের তৃতীয় চন্দ্রযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে। ২০১৯ সালের চন্দ্রযান ২ মিশনের  ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই তৃতীয় চন্দ্রযান অভিযানে সফল হয়েছেন ইসরো-র  মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তবে মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতবর্ষের এই সাফল্য কিন্তু একদিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দিনরাত এক করে করা অক্লান্ত পরিশ্রম।

তাই ভারতের মহাকাশ অভিযানের এই সোনালী মুহূর্তে যাঁর  কথা বারবার উঠে আসছে তিনি হলেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দোপাধ্যের করা মন্তব্যের জেরে এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন, রাকেশ শর্মা নাকি রাকেশ রোশন, এ দেশ থেকে প্রথম চাঁদে গিয়েছিলেন কে? যদিও তা নিছকই রসিকতা। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিমের ছড়াছড়ি। ১৮৮৪ সালের ৩ এপ্রিল  বিশ্বের ১২৮ তম এবং ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে চাঁদে পাড়ি দিয়েছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ  শর্মা। ইসরো ও রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার যুগ্ম অভিযানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সুয়াজ টি-১১-এর অংশ হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন রাকেশ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাশিয়ার আরও দুই সহ নভোশ্চর। মহাকাশে মোট ৭ দিন ২১ ঘন্টা ৪০ মিনিট কাটিয়েছিলেন তিনি। ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের টেস্ট পাইলট থেকে স্কোয়াড্রন লিডার হয়ে ওঠা রাকেশ শর্মার ওই জায়গায় পৌঁছানোটা মোটেই সহজ ছিল না। কঠিন পরীক্ষার পর এই ১৯৮২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তারপর মস্কোর ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারে মাসের পর মাস  চলে প্রশিক্ষণ। সবচেয়ে কঠিন পর্যায়ে তাঁকে  টানা ৭২ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছিল একটি ছোট ঘরে। এরপর অবশেষে ১৯৮৪ সালে আসে সেই স্মরণীয় দিন।

মহাকাশ থেকে ভারতকে ঠিক কেমন দেখাচ্ছে? দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর এই প্রশ্নের উত্তরে মহাকাশ সেন্টারের কন্ট্রোল রুম থেকে রাকেশ শর্মার দেওয়া উত্তর পরিচয় দিয়েছিল তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত মানসিকতার। কবি ইকবালের লেখা অবিস্মরণীয় দেশপ্রেমী গান গানের লাইন তুলে এক কথায় নিজের উপলব্ধি জানিয়ে রাখে শর্মা বলেছিলেন ‘সারে জাহা সে আচ্ছা।’

আর এবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেও পৌঁছে গিয়েছে ভারতীয় মহাকাশচারীরা। মহাকাশ বিজ্ঞানের সাফল্যের এই লম্বা রেসে ‘সুপার পাওয়া’র হয়ে উঠেছে ভারত। যার সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব। চন্দ্রযান -৩-এর  এই সাফল্যের মধ্যেই  বারবার ঘুরে ফিরে আসছে ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মার নাম। এখন কেমন আছেন তিনি? কি করেন? কোথায় থাকেন?চন্দ্রযান -৩-এর  সাফল্যের পর তাঁর প্রতিক্রিয়া কি? উঠে আসছে এমনই নানান প্রশ্ন।

১৯৪৯ সালের ১৩ই জানুয়ারি পাঞ্জাবের পাটিয়ালায় এক পাঞ্জাবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেশের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা। ১৯৭০ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরের বছরেই ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালের মহাকাশ অভিযান শেষে দেশে ফিরে আবার বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।  ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিমান বাহিনীতে কাজ  করেছিলেন তিনি।  ওই বছরেই উইং কমান্ডার পদ থেকেও অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এরপর তিনি যোগদান করেন হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড।  ২০২১ সাল পর্যন্ত বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক সংস্থা ক্যাডিলা ল্যাবসের নন-এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান পদে কাজ করেছেন তিনি।

পরবর্তীতে ইসরোর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের অংশ হয়েছিলেন তিনি। এই উপদেষ্টা পরিষদ আসলে মহাকাশচারী নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসরোর  সঙ্গেও তাঁর  যোগাযোগ রয়েছে অনেকদিন ধরেই। মহাকাশযান মিশনেও সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়াও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একাধিক প্রকল্পে তাকে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। একসময় আকাশ ছোঁয়া এই ভারতীয় নভোশ্চর এখন নুইয়ে পড়েছেন বয়সের ভারে। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৫ বছর। চলতি বছরের জুলাই মাসে  তৃতীয় চন্দ্র অভিযান শুরু হওয়ার আগেই আচমকা সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। বর্তমানে তামিলনাড়ুর কুন্নুর জেলায় এক ছোট্ট গ্রামে স্ত্রী মধুকে নিয়েই ছোট্ট সংসার তাঁর

চন্দ্রযান ৩ ইতিহাস গড়ার আগে রাকেশ শর্মা বলেছিলেন ‘ইসরোর কর্মকাণ্ডের সম্পর্কে আমি অবহিত। আর সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জানাচ্ছি চন্দ্রযান-৩ চাঁদের বুকে সফট ল্যান্ড করবেই।’ আর চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের পর রাকেশ বলেছেন ‘ আমি বিস্মিত নই, কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম ইসরো ইতিহাস তৈরি করবেই। আমি ইতিমধ্য়েই একজন গর্বিত ভারতীয়। আর এখন আরও গর্বিত বোধ করছি। আমি জানতাম চন্দ্রযান-২-এর ব্যর্থতাকে খুঁজে বের করে, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চন্দ্রযান-৩-কে সফল করবে ইসরো।’ তবে এরই মধ্যে আক্ষেপের সুরে বললেন ‘আমার মনে হয় আমি একটু বেশি আগে জন্মেছি। আমার বয়স এখন ৭৫ বছর। আর এখন ভারতের মহাকাশ অনুসন্ধান কর্মসূচির এক অসাধারণ যুগ শুরু হয়েছে। তরুণ থাকলে এই সময়ে আমিও এই কর্মযোগের সামিল হতে পারতাম’।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *