বিরাট লক্ষীলাভ

এতদিন পর্যন্ত ভারতবর্ষের মানুষ শুধু দূর থেকেই চাঁদের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তবে এবার প্রথম হাতে চাঁদ পেল ভারতও। গত মাসে ১৪ই জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চাঁদের দিকে উড়ে গিয়েছিল ইসরোর পাঠানো তৃতীয় চন্দ্রযান। যা ঠিক ৪০ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৩ আগস্ট সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফ্ট ল্যান্ডিং করে তৈরি করেছে নতুন ইতিহাস।

৬১৫ কোটি টাকা খরচ করে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে ‘বাজেট ফ্রেন্ডলি’  ইসরো। যা নাসা কিংবা  পৃথিবীর অন্যান্য গবেষণা কেন্দ্রগুলির  বিচারে অনেক কম। এইভাবেই ভারত যখন নিজের প্রযুক্তি এবং শিক্ষাগত মান মান বাড়িয়ে চাঁদে পাড়ি দিয়ে অজানা রহস্য উদ্ঘাটন করছে অন্যদিকে তখন পাকিস্তানের মতো দেশ বিষয়টাকে  মিথ্যে বলে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে।

অনেকের প্রশ্ন এত টাকা খরচ করে চাঁদে গিয়ে কি লাভ হবে?  তাই তারা বিষয়টাকে নেহাত ছেলে খেলা বলে মনে করছেন,  কিন্তু আসলে তা নয় ! এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোয় আসলে উপকৃত হতে চলেছে গোটা দেশ। আমাদের দেশের কৃষি কিংবা অর্থনীতির মত চারটি খাতে হতে পারে বিরাট লক্ষীলাভ।

রহস্য উন্মোচন: ২৩ আগস্ট থেকে আগামী ১৪ দিন চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে গবেষণা করবে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম আর রোভার প্রজ্ঞান। যার ফলে আগামীদিনে বহু অজানা রহস্যের উপর থেকে সরে যাবে পর্দা।  বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস চাঁদে জল রয়েছে, সেইসাথে রয়েছে ইউরেনিয়াম, প্লাটিনাম,কিংবা সোনা সহ বহু মূল্যবান খনিজ সম্পদ। এতদিন যে সমস্ত অজানা রহস্য চাঁদের অন্ধকার গহ্বরে লুকিয়ে ছিল এবার রহস্যই গোটা দুনিয়ার কাছে উন্মোচন করবে ভারত। উত্তর মিলবে বিজ্ঞানীদের মনে  চাঁদ সম্পর্কে জমে থাকা অনেক প্রশ্নের। তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বাড়বে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কৌতূহল।

অর্থনীতি: শুনতে অবাক লাগলেও এই  তৃতীয় চন্দ্র অভিযানের সাফল্য ভারতের অর্থনীতিতেও খুলে দেবে নতুন দিক। প্রাইভেট স্পেস সেক্টরে ভারতের প্রভাব বাড়বে। গোটা বিশ্বে ভারতীয় মহাকাশ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের কর্মরত প্রতিষ্ঠানগুলির চাহিদা বাড়বে। যার ফলে বাড়বে কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ। সেইসাথে বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ।

কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি: 

ইসরোর একমাত্র আঞ্চলিক একাডেমিক সেন্টার ফর স্পেসের প্রধান এবং এনআইটি কুরুক্ষেত্রের গবেষণা এবং উন্নয়নের ডিন  অধ্যাপক ড. ব্রহ্মজিৎ সিং কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন, চন্দ্রযান অভিযানের সুফল হিসাবে। তিনি জানিয়েছেন কৃষিপ্রধান দেশ ভারতবর্ষে চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যকে কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য হিসাবে দেখা উচিত। এ প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি মহাকাশে ভারত যত শক্তিশালী হবে ততই কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আসবে। বর্তমানে মাটি পরীক্ষা করে বিভিন্ন নমুনা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।এখন মাটি পরীক্ষায়ও এআই-এমএল ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দেশের কৃষিক্ষেত্রের অগ্রগতির সাথে যুক্ত। এছাড়াও তাঁর দাবি চন্দ্রযান -৩ মাটি ও জলবায়ু সম্পর্কিত তথ্য দেবে। আর এভাবেই পরোক্ষভাবে চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের প্রভাব পড়বে ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে।

বেসরকারি সংস্থা শেয়ার যে বৃদ্ধি:

আমাদের দেশে এমন অনেক সংস্থা রয়েছে যা মহাকাশ বিজ্ঞান খাতের সাথে যুক্ত। এই তালিকায় রয়েছে গোদরেজ অ্যারোস্পেস,লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো, আর হিমসন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিরামিকস-এর মতো বেসরকারি সংস্থা। এই সংস্থাগুলির তৈরি সরঞ্জাম এই চন্দ্রযান -৩  মিশনে ব্যবহৃত হয়েছে। আর এই মিশন সফল হলে এই সকল সংস্থার শেয়ার যে বৃদ্ধি পারবে তা বলাই বাহুল্য।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *