চাঁদের দক্ষিণ মেরু

গত মাসেই ১৪ই জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চাঁদের দিকে উড়ে গিয়েছিল ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান-৩। আর ঠিক তার ৪০ দিনের মাথায় ২৩ আগস্ট তৈরি হল ইতিহাস। ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই দিনটিই  চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাই ইসরোর পাঠানো তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটিতেই পা রাখতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি, গর্বিত ভারতবাসী। আমেরিকা,চীন কিংবা রাশিয়ার মতো বিশ্বের তাবড় শক্তিধর দেশগুলিকে টেক্কা দিয়ে এদিন ভারতই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে।

এর আগেও একবার ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান ২ পাঠিয়েছিল। কিন্তু সে সময় ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণের সময় সফট ল্যান্ডিংয়ের বদলে হার্ড  ল্যান্ডিং করেছিল। তাতেই ঘটে বিপত্তি। কিন্তু এবার ল্যান্ডার বিক্রমের সফট ল্যান্ডিং নিয়ে প্রথম থেকেই আশাবাদী ছিলেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তবে ভারত ছাড়াও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বহুদিন ধরেই নজর রয়েছে গোটা বিশ্বের।   ভারতের চন্দ্রযান-৩  যাত্রা করার কিছুদিন আগেই রাশিয়ার তরফেও মহাকাশযান পাঠানো হয়েছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। কিন্তু চাঁদে  তা সফলভাবে অবতরণ করার আগেই চাঁদের কক্ষপথে পড়ে গিয়েছিল মুখ থুবড়ে। এছাড়া এর কয়েক বছর আগে চীন দক্ষিণ মেরু থেকে কিছুটা দূরত্বে ল্যান্ডার অবতরণ করিয়েছিল। আগামী বছর দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশচারী পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকাও।

কিন্তু জানেন চাঁদের দক্ষিণ মেরুর এলাকায় আবহাওয়া কেমন?

জানা যাচ্ছে পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর মতো একই আবহাওয়া বিরাজ করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে রয়েছে আন্টার্টিকা, যা পৃথিবীর শীতলতম স্থান। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেও রয়েছে সবচেয়ে ঠান্ডা। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছালে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে সূর্যকে দিগন্ত রেখার দেখা যাবে। তবে এই এলাকায় সূর্যের আলো তির্যকভাবে পড়ায় থাকে ঘোর অন্ধকার। এই কারণে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর  তাপমাত্রা খুবই কম থাকে। যার ফলে এখানে জল এবং খনিজ পদার্থ থাকার বিরাট সম্ভাবনাও রয়েছে।আমেরিকার নাসার তরফে আগেই নিচিত করা হয়েছিল এই বিষয়টি।

১৯৯৮ সালের মুন মিশনে গিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি জায়গায় হাইড্রোজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করেছিল নাসা। সেসময় নাসা জানিয়েছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অনেক বড় বড় পাহাড় এবং গর্ত রয়েছে। সেখানে সূর্যের আলো না আসায় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ২৪৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে যে জায়গায় সূর্যের আলো থাকে সেখানে তাপমাত্রা হয় ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চাঁদের বুকে রয়েছে অনেক রহস্যময় গর্ত। কোটি কোটি বছর ধরে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে দক্ষিণ মেরুর বেশিরভাগ জায়গা। তবে এই দক্ষিণ মেরুতেই  শ্যাকলটন ক্রেটারের কাছাকাছি জায়গায় বছরে ২০০ দিন সূর্যালোক প্রবেশ করে। তবে বর্তমানে চন্দ্রযান ৩ যেখানে অবতরণ করেছে সেখানে ১৫ দিন সূর্যের আলো থাকবে এবং ১৫ দিন পর আবার অন্ধকার হয়ে যাবে। তাই সূর্যের আলোর কথা ভেবেই চন্দ্রযান-৩ অবতরণের দিন ২৩ তারিখ নির্ধারিত করেছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

 চাঁদে জল পাওয়া গেলে কি হবে? 

নাসার বিজ্ঞানীদের মতে চাঁদের দক্ষিণ মেরু আজও রহস্যময়। এখানে জল কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখানে জমে থাকা জল কোটি কোটি বছরের পুরনো হতে পারে। যা সৌরজগৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সাহায্য করবে। চাঁদে জল বা বরফ  পাওয়া গেলে তা পান করা, শীতল করার যন্ত্রপাতি রকেটের জ্বালানি তৈরি এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ?

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ করা এক বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া চাঁদে নেই পৃথিবীর মতো কোন বায়ুমণ্ডল।  আমেরিকার গবেষণা কেন্দ্র নাসার তরফে বলা হয়েছে আমরা যতই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করি না কেন কিংবা ল্যান্ডার যতই উন্নত হোক না কেন তার পরেও চাঁদের দক্ষিণ মেরু কেমন দেখতে তা বলা মুশকিল হবে। এর ফলে কিছু সিস্টেম তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পতনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *