ভারতে ইসরোর চন্দ্রযান-৩ মিশন শুরু হওয়া থেকেই শিরোনামে রয়েছেন ইসরো প্রধান এস সোমনাথ। ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় ৪০ দিনের মাথায় আমাদের দেশের চন্দ্রযান প্রথমবার চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সাথে সাথেই এই ইসরো প্রধানের মুকুটে জুড়েছে কৃতিত্বের আরও এক নতুন পালক। গোটা দেশবাসীর এখন তাঁর নাম-পরিচয়,পড়াশোনা-কেরিয়ার থেকে শুরু করে মাসিক বেতনের পরিমাণ নিয়ে তৈরী হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল।
দক্ষিণ ভারতীয় পরিবারের সন্তান ইসরো প্রধান এস সোমনাথের পুরো নাম শ্রীধরা পানিকার সোমনাথ। ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে কেরালার আলাপ্পুঝারের অরুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৯ বছর। সোমনাথের বাবা বেদামপারম্বিল ছিলেন একটি স্কুলের হিন্দি শিক্ষক। তাই বাবাই ছিলেন সোমনাথের রোল মডেল। ছোটবেলায় মা থাংকাম্মারওয়ের কাছেই পড়তেন সোমনাথ। তাই ছোট থেকেই পড়াশোনার পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছিলেন তিনি।
পড়াশোনা
ছোট থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল বিজ্ঞানে। সেন্ট অগাস্টিন হাই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভর্তি হন এর্নাকুলামের মহারাজা কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি। ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন গণিত এবং পদার্থবিদ্যায়ও। ১৯৮৫ সালে কোল্লামের টিকেএম কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি টেক ডিগ্রি করেন তিনি। এরপর ১৯৯৫ সালে ব্যাঙ্গালোরের IISC থেকে মহাকাশ প্রকৌশল এবং গতিবিদ্যা নিয়ন্ত্রক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর দীর্ঘদিন বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। পরে আবার পিএইচডি-ও করেছিলেন তিনি।
কেরিয়ার
১৯৯৫ সালে প্রথম ইসরোর বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে যোগ দেন সোমনাথ। একই বছরে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল এর প্রজেক্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। ২০১০ এর জুন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জিএসএলভি এমকে-III প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। লঞ্চ ভেহিক্যাল স্ট্রাকচারাল সিস্টেমে একজন দক্ষ বিজ্ঞানী তিনি। পিএসএলভি রকেট তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে পিএসএলভি ব্যবহার করা হয়। জিএসএলভি এর ৩ টি সফল মিশন এবং পিএসএলভি এর ১১ টি সফল মিশনেও তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব ছিল।
২০১৫ সালে লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টারের ডিরেক্টর এবং ইসরোর VSSC-এর ডিরেক্টর হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি।
২০২২, ইসরোর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার আগে পর্যন্ত এই দায়িত্বই সামলেছিলেন তিনি।
ইসরো প্রধানের আয়
এমন উচ্চপদস্থ একজন মহাকাশ বিজ্ঞানীর বেতন যে ভাল হবে সেটাই স্বাভাবিক। জানা যায় প্রতি মাসে তিনি নাকি প্রায় ২.৫ লক্ষ টাকা বেতন পান। তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দুই থেকে ছয় কোটি টাকা।
পরিবার
বিজ্ঞানী এস সোমনাথের স্ত্রীর নাম ভালসালাকুমারী। ২০ বছরের বিবাহিত জীবন তাঁদের। তিনি ফিনান্স গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (জিএসটি) বিভাগে কর্মরত। তাঁদের রয়েছে দুই ছেলে-মেয়ে যমজ। দুই জনই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ছেলের নাম মাধব, মেয়ের নাম মালিকা।
২০২২ সালে ১২ জানুয়ারি ইসরোর প্রাক্তন প্রধান কে. সিভানের স্থলাভিষিক্ত করা হয় তাঁকে। সেই থেকে ৩ বছরের জন্য তিনিই কেন্দ্রীয় মহাকাশবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব ও দেশের মহাকাশ কমিশনের চেয়ারম্যান-এর দ্বায়ীত্বে বহাল রয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে ইসরো-র ‘চন্দ্রযান-২’ অভিযানের রকেট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ইসরো প্রধানের গুরু দায়িত্ব পাওয়ার আগে এর সোমনাথ ২০১৮ সাল বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ভারতের এই জনপ্রিয় রকেট সাইন্টিস্টের জীবনের নাম যশ খ্যাতি কিংবা সাফল্য কোনটাই কিন্তু রাতারাতি আসেনি। মহাকাশযানের স্ট্রাকচারাল ডিজাইনিং থেকে ব্লুপ্রিন্ট তৈরি,মহাকাশযানের গতি, বিস্ফোরক প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার নেপথ্য়ে রয়েছে তাঁর বিরাট অবদান।
Leave a Reply