ব্যর্থতার হাত ধরেই আসে সাফল্য! ইসরোর বিজ্ঞানীদের হাত ধরে এই কথাই প্রমাণিত হলো আরও একবার। গতকাল চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণের পর গোটা পৃথিবীর বুকে এক ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত। সেই মহেন্দ্রক্ষনের ঘোর যেন কাটতে চাইছে না কিছুতেই।বিশ্বের প্রবল শক্তিধর দেশ গুলিকে টেক্কা দিয়ে এখন চাঁদের মাটিতে উড়ছে ভারতের পতাকা। এ কি আর কম গর্বের কথা? তবে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এই অসাধ্য সাধনের পিছনে কিন্তু এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে অতীতের দ্বিতীয় চন্দ্রযান অভিযানের ব্যর্থতা। তাই অতীতের সেই ভুল থেকে পাওয়া শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই ইসরোর বিজ্ঞানীরা গতকাল সন্ধ্যা ৬:০৪ মিনিটে সফলভাবে অবতরণ করেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।
এদিন চন্দ্রযান-৩ পালকের মতো সফট ল্যান্ডিং করেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। যা আজ থেকে চার বছর আগের অর্থাৎ ২০১৯ সালের দ্বিতীয় চন্দ্রযান অভিযানের ব্যর্থতার কষ্ট ধুয়ে মুছে সাফ করে গোটা দেশবাসীর মুখে এনে দিয়েছে সাফল্যের হাসি। চন্দ্রযান ৩ অভিযানের শুরু থেকেই চাঁদে অবতরণের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা ছিলেন দারুন আত্মবিশ্বাসী।
কেন অসফল হয়েছিল চন্দ্রযান-২ মিশন?
গতবার চাঁদের কাছাকাছি পৌঁছালেও একটুর জন্য অধরা ছিল সাফল্য। সেবার মাটি থেকে ঠিক ২.১ কিলোমিটার দূরত্বে গিয়ে আচমকাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ল্যান্ডারের। চার বছর আগের অভিযানের নাম ছিল ‘ওয়ারিড টাচডাউন’। কিন্তু ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদে নামার কিছুক্ষণ আগেই একটি সফটওয়্যারে গোলযোগের কারণে ল্যান্ডারটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে য়ায়। এরফলে গত বার চাঁদের খুব কাছাকাছি গেলেও গতিবেগে নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা তৈরী হয়েছিল বিক্রমের। নির্দিষ্ট মাত্রার বেগ সিস্টেমে আপডেট করার আগেই সেটা নষ্ট হয়েগিয়েছিল।
তাই পুরোপুরি সফল না হলেও বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল চন্দ্রযান-২ চাঁদের এতটাই কাছাকাছি গিয়েছিল যে ওই মিশনকে ৯৫ শতাংশ সফল বলাই যায়। তাই ইসরো হাল ছাড়েনি। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ চন্দ্রযান-৩। গতবার ঠিকঠাক কাজ করেছিল অরবিটার। চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি পাঠিয়েছিল সে। তাই দ্বিতীয় চন্দ্রযাত্রার ভুল শুধরে ১৪ ই জুলাই শ্রী হরি কোটার সতীশধাবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চাঁদের দিকে উড়ে গিয়েছিল চন্দ্রযান ৩। আর ২৩ আগস্ট কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ ছাড়াই সফলভাবে অবতরণ করেছে চন্দ্রযান ৩।
চন্দ্রযান-২ ও চন্দ্রযান-৩ এর মূল পার্থক্য?
গতবার চন্দ্রযান-২ অভিযানের তিনটি অংশ ছিল, অরবিটার , ল্যান্ডার এবং রোভার। কিন্তু এবারের নতুন ল্যান্ডার বিক্রমে থাকছে না কোনও অরবিটার। এবারের ল্যান্ডার বিক্রম অনেক বেশি শক্তপোক্ত। প্রযুক্তিতেও থাকছে বিকল্প উপায়ও। ইসরোর বিজ্ঞানীরা বলছেন, ল্যান্ডিংয়ের সময় বেগ সেকেন্ডে ২ মিটার হল সঠিক। তবে ৩ মিটার বেগ হলেও বিক্রম সেই ধাক্কা নিতে পারবে। নতুন ল্যান্ডার বিক্রমে থাকছে ১৩টি থ্রাস্টার। চন্দ্রযান-৩ এবার বহন করবে একটি পে লোড। এই পেলোডে থাকছে স্পেকট্রো-পোলারিমেট্রি অফ হ্যাবিটেবল প্ল্যানেট আর্থ যা চন্দ্রযান-২ মিশনে ছিল না। চন্দ্রযান-৩- প্রোপালশান মডিউলে থাকছে একটি SHAPE যা আলোর বিচ্ছুরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। গতবারের তুলনায় বেড়েছে ল্যান্ডিংয়ের জায়গার আয়তন। ল্যান্ডারে জ্বালানি বেশি, আছে নতুন সেন্সরও। বিক্রমের সুবিধার জন্যই এবার ইঞ্জিন কমানো হলেও ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত সফটওয়্যার।
Leave a Reply