গতকাল সন্ধ্যায় এক বিরাট ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে গোটা পৃথিবী। পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে গিয়েছে আপনাদের দেশ। গতকালই চাঁদের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করেছে ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান-৩। আমেরিকার নাসা সহ বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশগুলির মহাকাশ গবেষণাকে টেক্কা দিয়ে গতকালই ইসরো বীর বিক্রমে রোভার ‘প্রজ্ঞান’কে সঙ্গে নিয়ে চাঁদের মাটিতে ভারতের পতাকা উড়িয়েছে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। যা প্রত্যেক ভারতীয়ের জন্য ছিল অত্যন্ত গর্বের একটি মুহূর্ত। এতদিন চাঁদের এই দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর কোন দেশের চন্দ্রযান পা রাখেনি। কিন্তু জানেন কি কেন চন্দ্রযানের ল্যান্ডার এবং রোভারের নাম হিসেবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান এই নাম দুটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে? আসলে এর পিছনেও রয়েছে এক বিশেষ কারণ।
ভারতের মহাকাশযাত্রার অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাই। তাঁর তার নাম অনুসারেই এই চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডারটির নামকরণ করা হয়েছে বিক্রম। ভারতের মহাকাশ গবেষণা আজকের দিনে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তার পিছনেও এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে এই প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানীর।
মহাকাশ গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় স্তরের গঠনমূলক বিভিন্ন ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯১৯ সালের ১২ ই আগস্ট গুজরাটের বিখ্যাত এক ব্যবসায়ী পরিবারের জন্ম হয়েছিল তাঁর। ক্রীড়া, এবং সংখ্যাত্ত্বের মতো একাধিক বিষয়ে আকর্ষণ থাকলেও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর মূল আকর্ষণ ছিল বিজ্ঞান। ‘ফিজ়িক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’- কে ভারতের মহাকাশ গবেষণার আঁতুরঘর বলা হয়। যা ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিক্রম সারাভাইয়ের হাত ধরেই। এই সংস্থা হল ভারতের ইসরোর পূর্বসূরী। কিন্তু সুদিন মহাকাশ গবেষণার এই সুদিন দেখার আগেই ১৯৭১ সালে মাত্র ৫২ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
এছাড়া চন্দ্রযান-৩-এর রোভারের নামকরণ করা হয়েছে সংস্কৃত শব্দ ‘প্রজ্ঞান’ থেকে। যার অর্থ ‘প্রজ্ঞা’ বা জ্ঞান। জানা যাচ্ছে লেন্ডার বিক্রমের মোট ওজন ১৭৪৯.৮৬ কেজি। আর রোভার প্রজ্ঞানের ওজন ২৬ কেজি। জুতোর বাক্সের মতো দেখতে ল্যান্ডারে রয়েছে চারটি ল্যান্ডিং পা এবং চারটি ল্যান্ডিং থ্রাস্টার রয়েছে। রআর য়েছে চারটি পেলোড। রম্ভা, চ্যাস্টে, ইলসা এবং অ্যারে। চাঁদে অবতরণের পর পরই কাজ শুরু করেছে ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই চারটি পেলোড। এই পেলোডগুলির সাহায্যেই চাঁদের অজানা রহস্য তুলে ধরবে ইসরোর বিজ্ঞানীদের সামনে।
চারটি পেলোডের মধ্যে, চাঁদের বুকে সূর্য থেকে আসা প্লাজ়মা কণার ঘনত্ব, পরিমাণ এবং পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিরীক্ষণ করবে রম্ভা,চ্যাস্টের কাজ হবে চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাপা। অন্যদিকে ওই একই সময়ে অবতরণ স্থলের আশেপাশের মাটির কম্পন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে ইলসা। আর চাঁদের গতিশীলতা বোঝার চেষ্টা করবে অ্যারে।
অন্যদিকে একাধিক আধুনিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নিয়ে চাঁদে নেমেছে রোভার। লক্ষ্য লক্ষ্য বছর ধরে চাঁদের ভূমিরূপ কিভাবে তৈরি হয়েছে, কোন কোন উপাদান দিয়ে চাঁদের মাটি তৈরি তা খতিয়ে দেখে বার্তা পাঠাবে প্রজ্ঞান। আগামী দুই সপ্তাহ ধরে স্পেকট্রোমিটার বিশ্লেষণ করে চাঁদের মাটিতে কোন ধরনের খনিজ বস্তু আছে, তা খুঁটিয়ে দেখবে সে। এই পরীক্ষাগুলো করার জন্যই ল্যান্ডার এবং রোভারের সঙ্গে রয়েছে পাঁচটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।
চাঁদে অবতরণের পর অবতরণের পর ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান তাদের বাকি অভিযান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৌর শক্তি ব্যবহার করবে। তবে জানলে অবাক হবেন পৃথিবীর একদিন হলো চাঁদের ২৮ দিনের সমান। এক চন্দ্র মাসে] টানা ১৪ দিন রাত আর ১৪ দিন, দিন থাকে। কিন্তু চাঁদে অন্ধকার থাকাকালীন চাঁদে অবতরণ করলে এই কাজগুলো করা সম্ভব হবে না। তাই একেবারে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চূড়ান্ত অবতরণ শুরু করে ভারতীয় ল্যান্ডার বিক্রম। প্রায় ১৯ মিনিট পর চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলে সে।
Leave a Reply