দীর্ঘজীবী প্রাণী

রহস্যময় এই পৃথিবীতে এমনও কিছু প্রাণী রয়েছে যাদের আয়ু মানুষের থেকে অনেক গুণ বেশি। যদিও চরম দীর্ঘায়ু এই প্রাণীদের বেশিরভাগ থাকে সমুদ্রের নিচে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় গ্রিনল্যান্ডের সেই দীর্ঘজীবী হাঙরের কথা। এই বয়স্ক হাঙরটি মেরুদন্ডী প্রাণী হিসাবে হিমশীতল আর্কটিকে অবিশ্বাস্য ধীরগতিতে বাড়তে থাকে। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক প্রাণীদের কথা বলতে হলে প্রথমেই আসে সামুদ্রিক কোয়াহগ। যা আকারে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চির মত। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এই ২ ইঞ্চির শরীর পেতেই এদের সময় লেগে যায় ২০০ বছরেরও বেশি। এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে দীর্ঘজীবী সামুদ্রিক কোয়াহগের  বয়স ছিল ৫০৭ বছর। পৃথিবীর এমনই সব দীর্ঘজীবী প্রাণীদের তালিকা থাকছে আজকের ভিডিওটিতে।

মিনি ভ্যানের মতো বড় স্পঞ্জ:

হাওয়াইয়ের কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ৭,০০০ ফুট গভীরতা রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এক স্পঞ্জ। এই স্পঞ্জটি খুব ধীরে গতিতে বৃদ্ধি পায়। তাই বলাইবাহুল্য  এই বিশাল আকারে পৌঁছাতে স্পঞ্জটির  অনেকটা বেশিই সময় লেগে গিয়েছে। জানলে অবাক হবেন রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই স্পঞ্জটি লম্বায় ১২ ফুট আর  চওড়ায় ৭ ফুট। এর সঠিক বয়স জানা না গেলেও ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দাবি এই স্পঞ্জ নাকি  কম করে ২৩,০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে রয়েছে।২০১৫ সালে এই স্পঞ্জটি আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

অমর জেলিফিশ:

আকারে ছোট হলেও এই জেলিফিশটি কিন্তু অমর। যার নাম Turritopsis Dohrnii. অদ্ভুত প্রজাতির এই জেলিফিশটি দেখতে গোলাপী রঙের নখের থেকে কিছুটা ছোট।  এদের বয়সের সংখ্যা বয়সের কোনো হিসাব নেই। এই জেলিফিশের অমর হওয়ার পিছনে দায়ী এদের জীবনচক্র। জানা যায় এই জেলিফিস আহত বা ক্ষুধার্ত হলে সমুদ্রের পাড়ে এসে পড়ে এবং ক্ষয় হতে শুরু করে। কিন্তু এরা অন্যান্য প্রাণীদের মত মারা যায় না,পরিবর্তে তাদের কোষগুলো আবার একত্রিত হয়ে পলিপ তৈরি করে। যা এই জেলি ফিসের জীবনের প্রথম স্তর।  এইভাবেই এরা ক্রমাগত জৈবিকভাবে অমর হয়ে উঠেছে।

অসুখী ঝিনুক :

দীর্ঘজীবী এই ঝিনুকটির নামমিং দ্য কোয়াহগ ক্ল্যাম। যা রেনেসাঁস থেকে শুরু করে শিল্প বিপ্লব পেরিয়ে আজকের ইন্টারনেটের যুগে পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিল। জীবদ্দশায় যেমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাক্ষী থেকেছে, তেমনই অজস্র সাম্রাজ্যের উত্থান পতনও দেখেছে চোখের সামনে। তবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ৫০৭ বছরের এই ঝিনুকের জীবন শেষ হয় বিজ্ঞানীদের হাতেই।

পারমাণবিক হাঙর:

বিশ্ববিখ্যাত এই গ্রিনল্যান্ড হাঙর আসলে সোমনিওসাস মাইক্রোসেফালাস জাতীয় প্রাণী। এদের আয়ু নাকি ৪০০ বছর। এই প্রাণীদের বয়স নির্ধারণ করতে হয় রেডিও কার্বন পদ্ধতিতে চোখের লেন্সের ডেটিং করে।

জোনাথন দ্য সেশেলসের বিশাল কচ্ছপ: 

একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণীদের বেশিরভাগই কিন্তু  সামুদ্রিক প্রাণী। তবে  এদের মধ্যে ব্যতিক্রমী প্রাচীনতম একটি স্থলজ প্রাণী হল জোনাথন নামের একটি দৈত্যাকার কচ্ছপ। ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক কচ্ছপের শিরোপা পেয়েছে জোনাথন। এর আগে তুই মালিলা ছিল দীর্ঘজীবী কচ্ছপ। ১৯৬৫ সালে ১৮৮ বছর বয়সের মারা গিয়েছিল সে। তবে  জানলে অবাক হবেন এই জোনাথনের বয়স বর্তমানে ১৯০ বছর।  যে শুধু সবচেয়ে বয়স্ক কচ্ছপই নয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সবচেয়ে প্রাচীন স্থলজ প্রাণীও বটে।

দীর্ঘজীবি তিমির ক্ষুদ্র অন্ডকোষ:

যদি কোনো জীব পৃথিবীতে বেশি সময় বেঁচে থাকে তাহলে জেনেটিক মিউটেশন তার রোগের কারণ হতে পারে। বোহেড তিমির যদিও  এই ভয়কে কাটিয়েই  অভিযোজিত হয়েছে। উল্লেখ্য এটিই  পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রজাতির তিমি। তবে বিবর্তনের পথে এদের দেহে পরিবর্তিত হয়েছে অন্ডকোষ। এই তিমির অন্ডকোষ খুবই ছোট হয়। এই বেহেড তিমি বা বালেনা মিস্টিসেটাসের আয়ু ২১১ বছর।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *