পরকাল

পরকাল বলে সত্যিই কি কিছু আছে? এই প্রশ্ন কমবেশি আমাদের সকলের মনেই উঁকি দিয়েছে। এই বিষয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন ধর্ম। পৃথিবীতে যে ১০ টি ধর্ম রয়েছে। এই প্রত্যেক ধর্মেই ধর্মগুরুরা এই পরকালকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। হিন্দু,মুসলিম,খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজের ধর্মকে কঠোরভাবে বিশ্বাস করে। তাই কোন ধর্ম আসলে সঠিক ব্যাখা দেয় তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠে, তেমনি পরকাল বা মৃত্যুর পর কোনো জীবন সত্যিই আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। এপ্রসঙ্গে Your Sacred Self বইতে দারুন এক লজিক দিয়েছেন ডক্টর ওয়াইন ডায়ার।  এই বইতে একটি কাল্পনিক কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সত্যি পরকাল বলে কিছু আছে কিনা।

একজন মায়ের গর্ভে দুই শিশুর মধ্যে কথোপকথন হচ্ছে। তাদের প্রথমজন দ্বিতীয় জনকে জিজ্ঞেস করল তুমি কি বিশ্বাস করো প্রসব পরবর্তী আরো একটি বিশাল জীবন আছে? উত্তরে দ্বিতীয় জন বলে হ্যাঁ অবশ্যই আমি বিশ্বাস করি প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু একটা আছে। হয়তো প্রসব পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতির জন্যই আজ আমরা এখানে।  প্রথমজন তখন উত্তরে বলে, আরে বোকা আসলে আমার মনে হয় প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছুই নেই।  আচ্ছা ধরো তোমার মতের সাথে কিছুক্ষণের জন্য না হয় একমত হলাম। তাহলে এবার বলো তোমার মতে কাল্পনিক জগত ঠিক কেমন হতে পারে?

তখন দ্বিতীয়জন বলে ওঠে, আমি ঠিক জানিনা, তবে হয়তো সেখানে এখানকার তুলনায় অনেকটা বেশি আলো থাকবে , হয়তো বিশাল জায়গা নিয়ে আমরা বাস করতে পারবো, হয়তোবা সেখানে আমরা আমাদের পা দিয়ে হাঁটতে পারবো আমরা মুখ দিয়ে নিজেরাই হয়তো খাদ্য গ্রহণ করতে পারবো।  হয়তো সেই জগতে আমাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয় থাকবে যা এখন আমাদের কল্পনার বাইরে। হয়তো  সেখানে আমাদের মতো অনেক মানুষ বাস করেন।  প্রথমজন তখন বলে এটা নিছক  কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। পা দিয়ে হাঁটাহাঁটি কিংবা মুখ নিজেই খাদ্য গ্রহণ এসব  একেবারেই অসম্ভব।  আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পুষ্টি আসে এই নাড়ির  মাধ্যমে। নাড়ির  এই স্বল্প দৈর্ঘ্য কখনোই প্রসব পরবর্তী জীবনের পক্ষে যুক্তিযুক্ত নয়। পরবর্তী জীবন বলতে আদৌ কিছু নেই। এটা অবাস্তব  কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না।

তখন দ্বিতীয় জন আবার বলে ওঠে আমি মনে করি প্রসব  পরবর্তী জীবন বলতে কিছু তো একটা আছে।  আর সেটা আমাদের এই মাতৃগর্ভের জীবন থেকে আলাদা। হতে পারে সেখানে আমাদের বাঁচার জন্য এই নাড়িরই দরকার হবে না। তখন প্রথমজন বলে ওঠে প্রসব  পরবর্তী জীবন বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে সেই জীবন থেকে কখনও  কেউ এই জীবনে ফেরত আসে না কেন? তাই প্রসব  পরবর্তী জীবন বলে কিছু নেই। তাই প্রসব হচ্ছে জীবনের শেষ। এরপর আর কিছুই নেই, আছে কেবল অন্ধকার আর শূন্যতা।

দ্বিতীয়জন তখন বলে আমি ঠিক জানিনা। তবে হতে পারে সেই জগতে আমাদের সাথে আমাদের মায়ের দেখা হবে। মা হয়তো সেই জগতে আমাদের দেখাশোনা করবেন। তখন  প্রথমজন হাসতে হাসতে বলে ওঠে ‘মা’? তুমি মা’তে সত্যি বিশ্বাস কর? এটা খুবই হাস্যকর। তোমার কথা মতো যদি মা বলে কেউ থাকে তাহলে সে এখন কোথায়? সে আমাদের সামনে এসে বলছে না কেন যে সে আমাদের মা?তখন দ্বিতীয় জন বলে ওঠে তিনি  আমাদের চারপাশেই রয়েছেন।  সে আমাদের ঘিরেই আছে, আমরা তার মাঝেই বেঁচে আছি। তাকে ছাড়া এই জগত-সংসার  অসম্ভব।

তখন প্রথমজন আবার বলে যেহেতু আমরা মা বলে কাউকে দেখিনি অনুভব করি না। তাই যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা এটাই যে মা বলে আসলে কেউ নেই! তখন দ্বিতীয়জন মুচকি হেসে বলে ওঠে মাঝে মাঝে যখন তুমি নীরব থাকো, তখন মনোযোগ সহকারে যদি খেয়াল করো তাহলে তুমি তার উপস্থিতি টের পাবে। তুমি তার কন্ঠ শুনতে পাবে, বুঝতে পারবে তিনি তার দরদ ভরা মধুর কন্ঠে ওপর থেকেই আমাদের ডাকছেন।

তাই এক্ষেত্রে বলা যায় পরকাল দেখা যায় না!  স্রষ্ঠাকে দেখা যায় না, অনুভব করা যায় না বলে যারা পরকালে বিশ্বাস করতে চায় না, হেসে উড়িয়ে দেয়, তাদের জন্য এটি একটি দারুন উত্তর হতে পারে। তাই আপনি যে ধর্মেই বিশ্বাস করুন না কেন সেটাই অন্তত ভালোভাবে মেনে চলুন, তাহলেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাদের শেষ বিচারের দিন ক্ষমা করে দেবেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *