তৃণমূলের তরুণ তুর্কি রাজন্যা হালদারের নাম এখন সবার মুখে মুখে। তিনিই এখন রাজ্যের শাসকদলের নতুন মুখ। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে চাঁচা-ছোলা ভাষায় বিজেপির বিরুদ্ধে যেভাবে তিনি গর্জে উঠেছিলেন তাতে বেশ চমকে উঠেছিলেন তাতে বেশ রাজ্যবাসী। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোবাধ্যায় তাঁর কাছে বটবৃক্ষের র এবংমতো আর অভিষেক বন্দোপাধ্যায় হলেন তাঁর ভরসাস্থল। তাই তাঁদের মুখ উজ্বল করতেই সোনারপুরের মেয়ে রাজন্যা একুশের মঞ্চটি স্লোগান তুলেছিলেন ‘জুলমি জব জব জুলুম করেগা, সত্তাকে হাতিয়ারো সে; চপ্পা চপ্পা গুঞ্জ উঠেগি মমতাদিদিকি নাড়ো সে, অভিষেকদাকে নাড়ো সে’।
কদিন আগেও এই রাজন্যা হালদারের কে তা জানতেন না রাজ্যবাসী? কিন্তু একুশের মঞ্চে সেই ঝাঁঝালো বক্তৃতাই তাঁকে যেন টেনে এনেছে একেবারে ফ্রন্টলাইনে। লাইম লাইটে আসার সাথে সাথেই প্রতিনিয়ত তিনি প্রমাণ করে চলেছেন রাজনীতিতে পোড় খাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ আসলেই জহরীর চোখ। সদ্য উঠে আসা এই তরুণীর রক্ত গরম করা বক্তৃতা শুনে একুশের মঞ্চেই নড়েচড়ে বসে ছিলেন উপস্থিত তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা। যা দেখে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল গর্বের হাসি। তাই এই বক্তৃতাই হয়ে দাঁড়ায় রাজন্যার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
এই মুহূর্তে তিনিই তৃণমূলবের ভরসার স্থল। শাসকদলের তৃণমূল ছাত্রসংগঠনের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। এই মুহূর্তে যে ‘যাদবপুর কাণ্ডে’ তোলপাড় গোটা রাজ্য সেখানেও তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ ইউনিটের মুখ তিনি। দলের বিশ্বাস যাদবপুরের বাম দুর্গে ফাটল ধরাতে পারবে একমাত্র এই রাজন্যাই। গোটা দলের বিশ্বাস রয়েছে তাঁর ওপর। তাই বোঝাই যাচ্ছে রাজন্যা মোটেই কোনো সাধারণ যুবতী নন। অল্পদিনেই রাজ্যের শাসকদলের বিশেষ করে যেভাবে তিনি তৃণমূল সুপ্রিমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর স্নেহভাজন হয়ে উঠেছেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে সামনেই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে তাঁর।
কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলী পরিবার!
জানেন রাজন্যা হালদারের আসল পরিচয়? তার পারিবারিক ইতিহাসই বা কি? আসলে ‘রাজনীতি’ শব্দটার সাথে খুব ছোট থেকেই পরিচিত রাজন্যা। আসলে তাঁর রক্তেই রয়েছে রাজনীতি। ছোট থেকেই বাড়িতে রাজনীতির পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছেন তিনি। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সোনারপুরের মেয়ে রাজন্যার বাবা শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর আদি বাড়ি জয়নগর। দশম শ্রেণি পর্যন্ত রাজন্যার পড়াশুনো যাদবপুর বিদ্যাপীঠে। সেখান থেকেই কলকাতার বিনোদিনী গার্লস হাই স্কুলে শেষ করেছেন একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পড়াশোনা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বর্তমানে বি এড করছেন তিনি। পড়াশোনাতেও তুখোর তৃণমূলের এই তরুণ তুর্কি। রাজন্যার গানের গলাও অসাধারণ। এছাড়াও রয়েছে আরো একাধিক প্রতিভা। মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করা ব্যান্ড ‘জয়ী’র লিড ফিমেল তিনি। এছাড়াও রয়েছে কবিতা লেখার বিশেষ গুণ। পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য একাডেমিতে কবিতাও পড়েন মাঝে মধ্যে তিনি। রাজন্যা সাধারণত কথা বলেন ধীর লয়ে। তার প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই ছোট থেকেই তাঁর যে বাচিকের সাথে যোগ রয়েছে তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট বোঝা যায়। তবে প্রয়োজনে সুর ছড়িয়ে সপ্তমেও তুলতে পারেন তিনি। তার প্রমাণ মিলেছে একুশের মঞ্চেই।
তার বর্তমানে রাজন্যা পুরোদস্তর তৃণমূলী হলেও একসময় তার পুরো পরিবার ছিল কংগ্রেসি। ছোটবেলা থেকেই তাই কংগ্রেসি রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তার বাবা ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসায় পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। রাজন্যা রাজনীতিতেআসেন ২০১৭ সালে। প্রেসিডেন্সি থেকে স্বাধীন হিসাবে প্রথম সি আর ইলেকশন জেতেন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে ফের স্বাধীনছি হিসেবে সিআর হন তিনি। এরপর ২০২২ সালে প্রথম প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল তৃণমূলের ইউনিট। যদিও ততদিনে রাজন্যা প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী। তাই সেসময় তাঁকে ঢুকতে বাঁধা দেওয়া হলে গেট টপকে তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে ভিতরে ঢুকে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে একুশের মঞ্চে ঝাঁঝালো বক্তৃতাই তাঁকে এনে দিয়েছে তৃণমূলের ফ্রন্টফুটে। এছাড়া যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদ তো আছেই।
Leave a Reply