রূপকথার কাহিনীকেও হার মানায় বাংলার বিখ্যাত বর্মন পরিবারের আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানির উত্থানের গল্প। একসময় সাইকেলে চেপে ওষুধ বিক্রি করলেও বর্তমানে তাঁদের মোট ৮০ হাজার কোটির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। ভারতবর্ষে বহুযুগ ধরেই রয়েছে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের কদর। যা সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। জানলে অবাক হবেন শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ভরসা করেন আয়ুর্বেদের উপর। আজ থেকে প্রায় ১৪০ বছর আগের কথা। সেসময় ১৮৮৪ সাল নাগাদ কলকাতার বিখ্যাত ‘ডাক্তারবাবু’ এস কে বর্মনের হাত ধরেই উত্থান হয়েছিল এক ভেষজ কোম্পানির, যা আজ এক বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। কথা হচ্ছে আমাদের দেশের জনপ্রিয় ভেষজ কোম্পানি ডাবর নিয়ে।
শূন্য থেকে শুরু করে ডাবর কোম্পানি আজকের দিনে যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে তা সত্যিই অনন্য। শুরুতে কলকাতায় একটি সাধারণ ক্লিনিক ছিল ডাবর। সেখান থেকে আজ এটি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ভেষজ কোম্পানি। ফোর্বসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে বর্মন পরিবার ছিল দেশের ১৭তম ধনী পরিবার। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, জুন ত্রৈমাসিকে কোম্পানির নিট প্রফিট ৫ শতাংশ বেড়ে ৪৬৪ কোটি টাকা হয়েছে।
আয়ুর্বেদিক প্র্যাকটিসকারী বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ বর্মন ছিলেন কলেরা, ম্যালেরিয়া এবং প্লেগ সহ ভয়ানক রোগের জন্য সমস্ত-প্রাকৃতিক চিকিত্সা ব্যবহার করার পথপ্রদর্শক। মূলত দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের কম দামে ভালো মানের ওষুধ দেওয়াই ছিল তাঁর এই ডাবর কোম্পানির লক্ষ্য। তাই প্রাথমিক ভাবে কলকাতায় একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি হিসেবেই সফর শুরু করেছিল ‘ডাবর’। আয়ুর্বেদিক রীতি মেনেই তৈরী হয় এই কোম্পানির সমস্ত ওষুধ। তবে জনপ্রিয়তা লাভের পর এই ডাবরের হাত ধরেই বাজারে আসে মধু, টুথপেস্ট, চুলের তেল এবং স্কিন কেয়ারের নানা ভোগ্যপণ্য।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ব্যবসার সাথে যুক্ত রয়েছে এই বর্মন পরিবার। বর্তমানে এই কোম্পানির চেয়ারম্যান হলেন ডাঃ আনন্দ বর্মণ। তবে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেওয়ার আগেই পিএইচডি শেষ করেছিলেন তিনি। জানা যায় তাঁর ওপর যখন এই কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তখন ডাবরের আয় ছিল ২০ কোটি টাকা। নব্বইয়ের দশকে সেই আয় দাঁড়ায় প্রায় ১২০ কোটি টাকায় । অন্যদিকে বর্তমানে কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান হলেন অমিত বর্মন। তাঁরা পঞ্চম প্রজন্ম হিসেবে ডাবরের দায়িত্ব নিয়েছেন।
Leave a Reply