যাদবপুর

যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। ক্ষোভে ফুঁসছেন রাজ্যবাসী। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের প্রয়াত ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মুখটা। তাঁর মৃত্যু যেন সকলের চোখে আঙ্গুল দিয়ে চিনিয়ে  দিয়ে গেল প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার আড়ালে থাকা আসল অপরাধীদের মুখ গুলো। যাদবপুরের ‘হোস্টেল মাস্টার’ দাদাদের এই ব়্যাগিং দৌরাত্ম  আর ছাত্রমৃত্যুর মতো সংবেদনশীল বিষয়কে হাতিয়ার করেই এবার চিরকালীন ‘বাম দুর্গ’ বলে পরিচিত এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘাঁটি গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা  চালাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল  তৃণমূল কংগ্রেস। ছাত্রমৃত্যুই যেন তাঁদের কাছে ‘না চাইতেই পেয়ে যাওয়া’ এক মোক্ষম সুযোগ।

আর এই কাজে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় চোখ বুজে ভরসা রেখেছেন একজনের ওপরেই। তিনি হলেন তৃণমূলের তরুণ তুর্কি রাজন্যা হালদার। ‘পারলে একমাত্র রাজন্যাই পারবে’ হ্যাঁ এটাই দলের বিশ্বাস। একুশের মঞ্চে ঝাঁঝালো বক্তৃতা দিয়ে আগেই তিনি নাম লিখিয়েছিলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যের ‘ গুড বুকসে’। একই ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও নয়নের মনি তিনি। তাই এতদিন যা কেউ পারেনি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বদের বিশ্বাস এবার সেটাই করে দেখাবে রাজন্যা। তাই ব়্যাগিং আর ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই তড়িঘড়ি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরী হয়ে গেল তৃণমূলের নতুন ইউনিট। যার সভাপতি করা হল রাজন্যাকে। আর চেয়ারপার্সন হলেন সঞ্জীব প্রামাণিক।

প্রেসিডেন্সির ছাত্রী রাজন্যা একুশে জুলাই-এর মঞ্চে ঝাঁঝালো বক্তৃতা দিয়ে আগেই মন জয় করে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সাথে সাথেই অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বদেরও বিশ্বাস অর্জন করে ফেলেছেন তিনি। রাজন্যা আদ্যপান্ত একটি রাজনৈতিক উঠে আসার লড়াকু নেত্রী। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করে বেরিয়ে আসার পর বর্তমানে গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। তারই মাঝে ৬ বছর দরে যুক্ত রয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল যুব সংগঠনের শোঃ সভাপতি তিনি। তাই ইতিমধ্যেই কিছুটা হলেও রপ্ত করেছেন রাজনৈতিক ছলাকলাও। তিনি জানেন কিভাবে রাজ্যের শাসক দলের প্রিয় হওয়া যায়। কিভাবে যা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে আক্রমণ শানানো যায় বিরোধীদের।

দলের তরফে গুরু দায়িত্ব পেয়ে রাজন্যাও জান-প্রাণ দিয়ে লেগে পড়েছেন নিজের সেরা টুকু দিতে। তাই তিনি শুরুটা করেছিলেন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তৃণমূলের মহিয়লা ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের শ্লীতহানির অভিযোগ দিয়ে। এমনকি তাঁর সাথেও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা অশালীন আচরণ করেছেন বলে গর্জে উঠেছিলেন রাজন্যা। যদিও এই প্রথম নয় এর আগেও রাজ্য দেখেছে কিভাবে একটা মৃত্যু সুযোগ করে দেয় রাজনৈতিক দল গুলিকে। এবারও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে হাতিয়ার করেই একই কাজ করে চলেছে চলেছে রাজ্যের শাসক দল। সাথে মিডিয়াকেও দিচ্ছে বিরাট কভারেজ। এখন দেখার তৃণমূলের এই তরুণ তুর্কি আগামী দিনে যাদবপুরের বাম দুর্গে কতটা চিড়  ধরাতে পারে।  উত্তর যদিও সময়ই দেবে।

কিন্তু  অকালে প্রয়াত স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুর সঠিক বিচার কি হবে? কি হবে ব়্যাগিং-এর ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা পড়ুয়াদের ? যারা ব়্যাগিং-এর সাথে যুক্ত তাদের কি আদৌ কোনো দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হবে? তৈরী হতে থাকে এমনই একাধিক প্রশ্নের স্তূপ। উত্তর অজানা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *