১৫ই আগস্ট

দীর্ঘ প্রায় দু’শো বছরের পরাধীন ভারতের কালো মেঘ সরতেই ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন আসমুদ্র হিমাচল প্রত্যেক ভারতবাসী। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটাই এই স্বাধীনতার মূল্য চোকাতেই ভারত ভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বৈশ্বিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে একইসঙ্গে জন্ম নিয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তান নামে দু’দুটি দেশ।

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে একই দেশ ভেঙে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হলেও ভারতে ১৫ই আগস্ট আর পাকিস্তানে ১৪ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস দিনে পালন করা হয় কেন? কেন ভারতের একদিন আগে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়? তাহলে কি পাকিস্তানকে একদিন আগে স্বাধীনতা দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার? একটাই দেশ ভেঙে তৈরী দুটি আলাদা দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিন আলাদাভাবেই বা নথি ভুক্ত হলো কেন?

জানা যায় ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন ক্ষমতা হস্তান্তরের আদেশ দিয়েছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। কিন্তু সেই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই তা গড়িয়ে যায় আগস্ট মাস পর্যন্ত। তাই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পরের বছরের অর্হৎ ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন ক্ষমতা হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু  মাউন্টব্যাটেন উদ্যোগী হয়ে দিনটিকে এগিয়ে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে এগিয়ে আনেন। জানা যায় ১৪ এবং ১৫ ই আগস্ট এর মধ্যবর্তী রাতেই প্রথম  এসেছিল স্বাধীনতা। সেসময় রেডিও ভাষণেও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্না বলেছিলেন ‘১৫ ই আগস্ট হলো স্বাধীন ও সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মদিন’। পাকিস্তানের প্রথম স্মারক ডাকটিকিটেও ১৫ অগাস্ট দিনটাকেই পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উল্লেখ করা আছে।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সাল থেকেই পাকিস্তানে ১৫ ই আগস্টের পরিবর্তে ১৪ ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করা শুরু হয়। যদিও এর  সঠিক কারণ কি? তার ব্যাখ্যা আজও মেলেনি। কেউ কেউ মনে করেন ১৯৪৭ সালে ১৫ই আগস্ট ছিল পাক মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ দিন কারণ ওই দিনটি ছিল মুসলিমদের  পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। জানা যায় সেই সময় ভারতের সর্বশেষ ব্রিটিশ ভাইসরয়  লর্ড মাউন্টব্যাটনের পরিকল্পনা ছিল  ১৪ এবং ১৫ই আগস্ট এর সংযোগকারী রাতে নয়াদিল্লিতে ভারতের  এবং প্রথম পাক রাজধানী করাচি থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন তিনি।

কিন্তু একই সময়ে দুই জায়গায় উপস্থিত হওয়া সম্ভব ছিল না  মাউন্টব্যাটনের পক্ষে। তাই অনেক বিচার বিবেচনা করার পর ১৩ ই আগস্ট করাচিতে পৌঁছেছিলেন মাউন্টব্যাটেন।  এরপর ১৪ আগস্টেই পাক সাংবিধানিক সংসদে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি জানিয়েছিলেন ‘আগামীকাল থেকে নতুন দেশ পাকিস্তান সরকারের দায়িত্ব আপনাদের হাতেই থাকবে’। সেই সময় তিনি ১৫ ই আগস্ট কেই পাকিস্তানেরও স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

এরপর ভারতের নয়াদিল্লিতে এসে ১৫ই আগস্টে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু যেহেতু ১৪ই আগস্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের কথার মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তাই পাক সরকার সম্ভবত ওই দিনটিকেই নিজে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা যুক্তি দিয়েছেন।  কিন্তু অনেকের মনের প্রশ্ন জাগে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টকেই  কেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মাউন্টব্যাটন?

জানা যায় ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ গ্রন্থে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রাথমিকভাবে লিখেছিলেন আমি দিনটা এমনি বেছেছিলাম। কিন্তু পরে ওই দিনটি  বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছিলেন ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করেছিল। সেসময় মিত্রশক্তির সুপ্রিম কম্যান্ডার হিসাবে নথিতে  স্বাক্ষর করেছিলেন মাউন্টব্যাটেন। তাই কায়দা করেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের দিনটাকেই লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছিলেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *