ভারতীয় রেল নিয়ে রয়েছে নানান অজানা কাহিনী। আজকের দিনে আমাদের দেশের বৃহত্তম গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন ব্যবস্থা হল ভারতীয় রেল। যার মাধ্যমে প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৭ হাজারেরও বেশি রেজিস্ট্রেশন থেকে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছেন লক্ষ লক্ষ যাত্রী। ভারতীয় রেলকে তাই ‘লাইফ লাইন’ও বলা হয়ে থাকে। বহু দিনের ঐতিহ্যবাহী এই পরিবহন ব্যবস্থার শুরুটা হয়েছিল ইংরেজদের হাত ধর। ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল হার্ডিঞ্জের সময় প্রথম চালু হয়েছিল ভারতের রেল পরিষেবা।
ব্রিটিশ আমলের এই গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে আজও রয়েছে একাধিক অজানা গল্প। জানলে অবাক হবেন ব্রিটিশ আমলে তৈরি এমনই একটি প্রাচীন রেলস্টেশন রয়েছে আমাদের বাংলাতেই। যা ‘ভারতবর্ষের শেষ রেল স্টেশন’-এর তকমা পেয়েছে। মালদা জেলার হাবিবপুরে অবস্থিত এই রেলস্টেশনটির নাম সিঙ্গাবাদ। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই রেলস্টেশন থেকে পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যাওয়া বিদেশে অর্থাৎ আমাদের প্প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে। এই স্টেশনে গেলে মনে হবে টাইম মেশিনে চেপেই চলে এসেছেন ব্রিটিশ আমলে।
এখানকার রেলস্টেশন থেকে শুরু করে, ট্রেনের টিকিট, সিগন্যাল ব্যবস্থা সবকিছুতেই ব্রিটিশ আমলের ছাপ রয়েছে স্পষ্ট। পুরনো সেই কার্ডবোর্ডের টিকিট যা এখন বিরল, তা আজও রয়েছে এই স্টেশনে। এখানকার টেলিফোনটিও অনেক পুরনো। সিগন্যালের জন্য পুরনো নিয়মেই হ্যান্ড গিয়ার ব্যবহার করা হয় এই সিঙ্গাবাদ স্টেশনে। তবে এখন আর কোন যাত্রীবাহী ট্রেন এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে না। বর্তমানে শুধুমাত্র পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে এই স্টেশন দিয়ে।
মালদা কোর্ট স্টেশন থেকে সিঙ্গাবাদ স্টেশন পর্যন্ত আগে দুটি ট্রেন চলত। পরবর্তীতে ভারত পাকিস্তান ভাগাভাগির সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে এই সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি বন্ধ পড়েছিল। যার ফলে এই স্টেশন পরবর্তীতে একেবারে জনশূন্য হয়ে পড়ে। কিন্তু ১৯৭৮ সাল নাগাদ এই স্টেশনে পণ্যবাহী ট্রেন চালানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই বর্তমানে এই স্টেশন থেকে মাসে শুধু ২০ থেকে ২৫ টি পণ্যবাহী ট্রেন সিঙ্গাবাদ স্টেশন হয়ে বাংলাদেশে যায়। তবে ২০১১ সালের নভেম্বর মাস নাগাদ পুরনো চুক্তি সংশোধন করে এই তালিকায় নেপাল কেও যুক্ত করে নেওয়া হয়।
যার ফলে এখন বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল থেকেও পণ্যবাহী ট্রেন যাওয়া আসা শুরু করেছে। তবে জানা যাচ্ছে বহুদিন ধরেই ভারতীয় রেল এই স্টেশন দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী এক্সপ্রেস চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে স্থানীয় মানুষদের দাবি এই স্টেশন থেকে মালদা কোর্ট স্টেশন পর্যন্ত আগের মতো প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু করা হোক। তাহলে এখানকার অনেক মানুষ উপকৃত হবেন। সেইসাথে ভারতবর্ষের প্রাচীন এই অন্তিম রেল স্টেশনটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করার দাবিও বহুদিনের। যেহেতু এই স্টেশনটি ব্রিটিশ আমলের তাই শোনা যায় সে সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং গান্ধীর মত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা যাওয়ার সময় এই রেলপথটি বেশ কয়েকবার ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়া এক সময় দার্জিলিং মেইলের মতো ট্রেনও এই স্টেশনের উপর দিয়ে যেত।
Leave a Reply