প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের ভারতবর্ষ নদীমাতৃক দেশ। যুগ যুগ ধরেই এখানে নদীকে মাতৃরূপে পুজো করা হয়। সারাদেশে প্রবাহিত হয়েছে অসংখ্য নদী। ছোটো বড় মিলিয়ে সারা ভারতবর্ষে রয়েছে প্রায় ২০০ টি নদী। তবে জানলে অবাক হবেন আমাদের দেশে রয়েছে এমনই একটি গভীরতম নদী। যার মধ্যে ডুবে যেতে পারে দিল্লির ৭২ মিটার উঁচু কুতুব মিনারও। ভারতবর্ষের গভীরতম নদীটি হল ব্রহ্মপুত্র নদ। ব্রহ্মপুত্র-কে দেশের একমাত্র একমাত্র ‘পুরুষ নদী’ও বলা হয়ে থাকে। এটি আমাদের দেশের একমাত্র নদী যেখানে হিন্দুদের মতই বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের মানুষরাও পূজা দিতে আসেন।
ব্রহ্মপুত্র এমন একটি নদী যার উৎপত্তি হয়েছে ভারতের বাইরে থেকে। ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত তিব্বতের পুরং জেলার মানস সরোবর হ্রদের কাছে অবস্থিত ‘চেমায়ুঙ দুং’ হিমবাহ থেকে ইয়ারলুং সাংপো নামে উৎপন্ন হওয়ার পর নদীটি অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ব্রহ্মপুত্র নামে। তারপর নদীটি প্রবাহিত হয়েছে অসম উপত্যকার উপর দিয়ে। এরপর ব্রহ্মপুত্র নদ গিয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। নদীটি বাংলাদেশে যমুনা নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২,৫৮০ কিমি, এর মধ্যে ৮৮৫ কিমি ভারতের অন্তর্গত।
ব্রহ্মপুত্র নদীর গভীরতম স্থানটি অবস্থিত অসমের তিনসুকিয়ায়। এখানে এই নদীর গভীরতা ১২৪ ফিট এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৮০ ফিট অর্থাৎ ১১৫ মিটার পর্যন্ত। এই কারণে একে ভারতের গভীরতম নদী বলা হয়। তাই খুব সহজেই ৭২ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট কুতুব মিনারও ডুবে যেতে পারে এই নদীতে। এছাড়া অসমের কিছু কিছু জায়গায় বহ্মপুত্র নদের প্রস্থ ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত। নদীটি ডিব্রুগড় এবং লখিমপুরের মাঝামাঝি স্থানে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। সেখানেই সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত মাজুলি দ্বীপ। এটি বিশ্বের বৃহত্তম নদী গঠিত দ্বীপ।
তিনটি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদী একাধিক নামে পরিচিত। তিব্বতে যেমন এই নদীকে সাংপো বলা হয়। তবে নদীটি অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করা মাত্রই তা সিয়াং নাম পরিচিত হয়। তবে পাহাড়-পর্বত অতিক্রম করা মাত্রই নদীটি সমভূমিতে প্রবেশ করে, সেখানে নদীটি দিহাং নাম নেয়। আর অসমে এটি ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত।
Leave a Reply