এখনকার দিনে স্মার্ট ফোন জিনিসটা একেবারেই ‘হাতের নস্যি’ হয়ে গিয়েছে। তাই নিতান্ত সাধারণ মানুষের কাছেও এখন মাথাপিছু দুটি বা তিনটি করেও মোবাইল থাকে। আর এই মোবাইল সচল রাখতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে জিনিসটি তা হল সিম কার্ড। ইদানিং প্রত্যেকটি ফোনেই থাকে দুটি করে সিম স্লট। যার ফলে একজন মানুষই অনেকগুলি করে সিমের মালিক হয়ে থাকে। আর এই ভাবেই আইনের ফাঁক ফোকর গলে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জালিয়াতি চক্রের জাল।
একাধিক সিম কার্ড সংযোগ নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন ‘সিমবক্স’ বলে একটা জিনিস আছে। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল করা যায়। বিভিন্ন ধরনের সাইবার প্রতারণা চালানোর জন্য প্রতারকরা অন্তত পাঁচটি করে সিম নেয়। একটি সিম ব্যবহার করে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে অন্য আরেকটা সিম ব্যবহার করতে শুরু করে দেয় তারা। এই ভাবে আড়ালে থেকেই প্রতারকরা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক কল করে থাকে।
তাই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পর বাল্ক সংযোগ ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সাথে জানানো হয়েছে সঠিক ব্যবসায়িক সংযোগের জন্য একটি ব্যবস্থা চালু করা হবে। যার মাধ্যমে কোনো সংস্থা যদি কর্মচারীদের জন্য মোট ৪ হাজার সিম নেয়। তাহলে সশ্লিষ্ট সংস্থার প্রত্যেক কর্মকারীকেই ব্যক্তিগত কেওয়াইসি করতে হবে। এতদিন পর্যন্ত একজন ব্যক্তির নটি করে সিম নেওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু এবার জালিয়াতি রুখতে সেই নিয়মে পরিবর্তনে আনছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জানা যাচ্ছে নতুন নিয়ম অনুসারে একজন ব্যক্তি চারটি করে সিম রাখার অনুমতি পাবেন। তবে সিম ডিলার থেকে শুরু করে বিক্রেতা সবার জন্যই থাকছে বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম। সাসাধারণত সিম সংযোগ দেওয়ার সময় কতগুলি বিষয় খতিয়ে দেখার আইন রয়েছে কিন্তু তা মানেন না অধিকাংশ সিম কার্ড ডিলাররা। কোনরকমে যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সেরেই তারা সিম বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু নতুন নিয়মে এমনটা আর করতে পারবেন না সিম ডিলাররা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এবার থেকে প্রত্যেক সিম ডিলারকেই বায়োমেট্রিক এবং পুলিশি যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই সাথে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন এই নিয়ম না মানলে জবাবদিহি তো করতেই হবে। সেই সাথে দিতে হবে ১০ লক্ষ টাকার জরিমানা। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে জালিয়াতি রুখতেই পুলিশ এবং টেলিকম শিল্পের বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের মে মাসেই চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন ব্লক করা এবং সেগুলিকে ট্রাক করার জন্য ‘সঞ্চারস সাথী’ নামে একটি পোটাল চালু করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন এই পোর্টাল চালু হওয়ার পর থেকে মোট ৬৭ হাজার সিম কার্ড ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে ৫২ লক্ষ্য জাল মোবাইল সংযোগ। এছাড়াও ৭ লক্ষ চুরি যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল সংযোগ ব্লক করা হয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগে সিমকার্ড ডিলারদের বিরুদ্ধে ৩০ টি এফ আই আর নথিভুক্ত হয়েছে। একই অভিযোগে ব্লক করা হয়েছে ৮ লক্ষ পেমেন্ট ওয়ালেট একাউন্ট। এ ছাড়াও প্রতারণামূলক কাজের সাথে যুক্ত প্রায় ৬৬ হাজার একাউন্ট ব্লক করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। এতদিন নতুন সিম তুলতে গেলে শুধুমাত্র ক্রেতাকে নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় পরিচয় পত্র নিয়ে হাজির হতে হত। এরপর তাঁদের তার লাইভ ফটো নেওয়ার পাশাপাশি বায়োমেট্রিক নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু এবার সেই নিয়ম পরিবর্তন করে সিমের সাথে কেওয়াইসি করানো আবশ্যক বলে জানানো হয়েছে।
Leave a Reply