কথাতেই আছে, ‘আজ যে রাজা, কাল সে ফকির’! তাই মানুষের জীবনে টাকা পয়সা জিনিসটাই ক্ষণস্থায়ী। যা আজ আছে কাল তা নাও থাকতে পারে। ভারতের এমনই একজন ধনী ব্যাবসায়ী হলেন রেমন্ড গোষ্ঠীর প্রাক্তন মালিক বিজয়পত সিঙ্ঘানিয়া। ১৯২৫ সালে রেমণ্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৮ সালে মুম্বইতে তৈরি হয় রেমণ্ডের প্রথম রিটেল শোরুম। ভারতের গন্ডি বিদেশেও রয়েছে এই রেমণ্ড কোম্পানির শাখা। বিজয়পত সিঙ্ঘানিয়াই কাপড়ের ব্যবসার ছোট সংস্থা রেমন্ড-কে বিশ্বের অন্যতম নামী ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিল তিল করে এই সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস সমস্ত রাজপাট ছেড়ে বর্তমানে তিনি দিন কাটাচ্ছেন এক ভাড়া বাড়িতে। যে বয়সে সারা জীবনের পরিশ্রমের ফল ভোগ করে সুখে-শান্তিতে দিন কাটানোর কথা সেই বয়সে এসে নিজেই নিজের সম্পত্তি থেকে আজ বঞ্চিত এই ৮০ বছরের বৃদ্ধ নিজেই। জীবনের শেষ বয়সে এসে তাঁর এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী তাঁর একমাত্র ছেলে গৌতম সিঙ্ঘানিয়া।
রেমন্ডের প্রাক্তন প্রধান বিজয়পত সিঙ্ঘানিয়ার দাবি তাঁকে ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল’ করে তাঁর কাছ থেকে সমস্ত সম্পত্তি ছিনিয়ে নিয়েছে তাঁরই ছেলে গৌতম। জানা যায় এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০১৫ সালে। সে সময় তিনি নিজের সমস্ত সম্পত্তি একমাত্র ছেলে গৌতম সিঙ্ঘানিয়ার নামে করে দিয়েছিলেন। তাঁর এই একটা সিন্ধান্তই তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। বাবার সম্পত্তি হাতানোর পরেই তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দেন ‘গুণধর’ ছেলে গৌতম। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর গাড়িও।
একসময় ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বিজয়পত সিঙ্ঘানিয়া ছিলেন দেশের অন্যতম বড় শিল্পপতি। বর্তমানে দক্ষিণ মুম্বইয়ের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। তাই নিজের জীবন থেকে পাওয়া এই চরম শিক্ষার কথা জানিয়ে আত্মজীবনী ‘অ্যান ইনকমপ্লিট লাইফ’-এ আক্ষেপের সুরে বিজয়পত সিঙ্ঘানিয়া লিখেছেন ‘অভিজ্ঞতা থেকে আমি সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছি যে বেঁচে থাকাকালীন মাতা-পিতার সম্পত্তি সন্তানদের দেওয়ার সময় সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। মাতা পিতার সম্পত্তি অবশ্যই তার সন্তানরা প্রাপ্য, তবে এটি তাদের মৃত্যুর পরেই দেওয়া উচিত। আমি চাই না কোন অভিভাবককে এমন যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় যা আমি প্রত্যহ সহ্য করি।’
বিজয়পত জানিয়েছেন, একমাত্র ছেলের সঙ্গে বছর দুয়েক কথা বন্ধ তাঁর। এখানেই শেষ নয়, জীবনের কষ্টের কথা জানিয়ে বিজয়পথ সিংহানিয়া বলেছেন, ‘আমাকে আমারই অফিসে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল যেখানে আমার গুরুত্বপূর্ণ নথি পত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী গুলো ছিল। শুধু তাই নয় মুম্বাই এবং লন্ডনে আমাকে আমার গাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল এবং আমার সচিবের সাথে যোগাযোগ করতে বারণ করা হয়েছিল। রেমন্ড কর্মচারীদের এমন কঠোর আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আমার সঙ্গে কথা না বলে ও আমার অফিসে না আসে।’
Leave a Reply