চানাচুর

‘ভালো খান সুস্থ থাকুন!’ মুখরোচক চানাচুরের এই ট্যাগলাইনের সাথে জুড়ে রয়েছে অসংখ্য বাঙালির পুরনো নস্টালজিয়া। বিগত কয়েক দশক ধরে মুখরোচক কোম্পানির চানাচুর আমাদের বাংলার পুরনো ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নোনতা খাবারের জগতে হলদিরাম,বিকানের কিংবা ভূজিওয়ালাদের আগমন ঘটলেও আজও কিন্তু বাংলার ঘরে ঘরে নোনতা স্বাদের ঘরানায় বাংলার নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘মুখরোচক’ চানাচুর স্বমহিমায় উজ্বল। কারণ এত বছরপরেও টক-ঝাল-মিষ্টি মুচমুচে স্বাদের চানাচুরের সঙ্গে কোনো আপোষ করেনি মুখরোচক।

বাঙালি নাকি ব্যবসা করতে পারে না! বাঙালিদের নামে এই বদনাম রয়েছে বহুদিন ধরেই। তবে অনেকদিন আগেই এই প্রচলিত মিথ ভেঙে দিয়েছিলেন ‘মুখরোচক’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পঞ্চানন চন্দ্র। তাই সোনার ব্যবসা ছেড়ে বাংলার বুকে তিনিই প্রথম তৈরী করেছিলেন টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের নোনতা খাবারের ব্র্যান্ড মুখরোচক।

চানাচুর যা কারও কাছে সাড়ে ৩২ ভাজা তো কারও কাছে ডালমুট নাম পরিচিত তা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে শুরুতেই যে সাফল্য এসেছে তার নয়। তার জন্য একসময় কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পূর্ণচন্দ্র রায়। প্রায় চার প্রজন্ম ধরে চলতে থাকা এই পারিবারিক ব্যবসা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালে কলকাতার টালিগঞ্জের ট্রাম ডিপোর কাছে এক ছোট্ট দোকান ঘরে। ওই দোকান থেকেই সেসময় ৪ থেকে ৫ কেজি চানাচুর ভাজা হতো।

মুখরোচক কোম্পানির চানাচুরের মূল ইউএসপি হল এর স্বাদ। তাই সময় বদলালেও আজও একই থেকে গিয়েছে মুখরোচক চনাচুরের স্বাদ। এই চানাচুর শুরু থেকেই স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের দিকটাও খেয়াল রেখে এসেছে। তবে মুখরোচক এখন শুধুমাত্র টক -ঝাল-মিষ্টি চানাচুরেই সীমাবদ্ধ নেই এছাড়াও এই তালিকার যোগ হয়েছে মুখরোচকের মোট ২৮ রকমের খাবার।

২০০৪ সালেই এই সংস্থা কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। আজ মুখরোচক ISO প্রত্যয়িত কোম্পানি। আধুনিক পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকর উপায়ে জিভে জল আনা নোনতা খাবারের সম্ভার মুখরোচকের জুড়ি মেলা ভার। চানাচুর ছাড়াও অন্যান্য সমস্ত রকমের নোনতা খাবার তৈরি করার জন্য বসানো হয়েছে বিদেশি সংস্থার মেশিন। যা দিনে ছয় টন চানাচুর ও অন্যান্য নোনতা খাবার তৈরি করে। মুখরোচকের স্বাদ বদল করতে এই সংস্থার দ্বিতীয় প্রজন্মের কর্ণধার নির্মলেন্দু চন্দ্র চানাচুরের ফর্মুলায় যোগ করেছিলেন জোয়ান, লবঙ্গ,জিরে, দারুচিনি, পিপুল, বিশেষ ধরনের লঙ্কা, শুকনো আদ, হিং সহ আরও ডজন কয়েক উপাদান।

তবে এই চানাচুর তৈরিতে তারা এমন কোন মশলা কোনদিন ব্যবহার করেনি যার সঙ্গে বাঙালি পরিচিত নয়। মুখরোচকের চানাচুর বাংলায় স্নাক্সের ব্যবসার পথিকৃৎ। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্ন্যাকসের বাজারে জাঁকিয়ে বসার পিছনে রয়েছে স্বাদের সাথে আপোস না করার গল্প। তাই মানুষের কাছে একেবারে খাঁটি জিনিস পঁচে দেওয়ার জন্য দেশের না প্রান্ত থেকে খুঁজে নিয়ে আসা হয় একেবারে খাঁটি আয়ুর্বেদিক মশলা, দামি কোম্পানির বাদাম তেল, কানপুরের বিটনুন, কিংবা বেসনের মতো একাধিক উপাদান।

এই কোম্পানি মনে করে সমস্ত উপাদানের গুনমান সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মানুষের জিভই একমাত্র শেষ কথা বলতে পারে। তাই মুখরোচকের যে কোন উপাদানের সঠিক গুণমান নির্ধারণের জন্য কোম্পানি অত্যন্ত দক্ষ শেফদের একটি দল নিযুক্ত করেছে। এছাড়া উন্নত অটোমেশন প্রক্রিয়ার দ্বারা প্ল্যান্টটি অত্যন্ত পরিবাসকার পরিছন্ন রাখা হয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *