ভুত আর ভুতের গল্প নিয়ে মানুষের আগ্রহ চিরকালের। এমন অনেক প্রত্যক্ষদর্শীও আছেন যাঁরা সত্যিই ভুতের উপস্থিতি টের পেয়েছেন বলে দাবিও করে থাকেন। সেই ঘটনা কতটা সত্যি তা আমাদের জানা নেই। তবে মুখে ভুতে বিশ্বাস করি না বললেও ৮ থেকে ৮০ আমরা সকলেই কিন্তু ভুতের গল্প শুনতে দারুন ভালোবাসি। ভুতের গল্প,লোডশেডিং আর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি মানেই কিন্তু দারুন কম্বিনেশন। যার সাথে সাথে জুড়ে রয়েছে অনেকেরই ছোটবেলার পুরনো নস্টালজিয়া।
আমাদের দেশের একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমনই নানান অশরীরী প্রেত আত্মাদের ঘুরে বেড়ানোর কাহিনী। আমাদের রাজ্যের শহর কলকাতাও কিন্তু এই ধরনের ভুতুড়ে কাহিনী থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। একসময় ব্রিটিশ শাসকদের প্রাণকেন্দ্র এই কলকাতা শহরেই রয়েছে দেশি-বিদেশি একাধিক ভূত-প্রেতদের আঁতুড় ঘর। কলকাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমনই দশটা ভুতুড়ে জায়গা নিয়ে থাকছে আজকের এই বিশেষ নিবেদন।
রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন: কলকাতার ভুতুড়ে জায়গা হল রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন। শোনা যায় রাত নামলেই এই স্টেশনে চলাফেরা শুরু হয় অশরীরী আত্মাদের। যাত্রী থেকে মেট্রো রেলের কর্মী অনেকেই নাকি দেখেছেন ছায়া মূর্তি। বলা হয় রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনের টানেল থেকে গভীর রাতে ভেসে আসে শিশুর কান্নার আওয়াজ। ভীড়ের মধ্যে থেকেও নাকি ‘তেনা’দের উপস্থিতি টের পেয়েছেন অনেকেই। এই মেট্রো স্টেশনে ভুতের উপদ্রব কেন এত বেশি? শোনা যায়,এখানেই চলন্ত মেট্রোর সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন অনেকে। তাঁদের অতৃপ্ত আত্মাই নাকি ঘুরে বেড়ায় এখানে।
পুতুল বাড়ি: কলকাতার হন্টেড প্লেস গুলির মধ্যে অন্যতম উত্তর কলকাতার পুতুল বাড়ি। রহস্যজনক এই বাড়িতেই একসময় এক ব্যবসায়ী বাবু বাস করতেন। তিনি এবং তার দলবল শহরের প্রচুর মেয়ে এই বাড়িতে এনে তাদের সর্বনাশ করতেন। আর যদি কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের মেরে এই বাড়ির নীচেই নাকি পুঁতে ফেলা হতো। এখনও রাত নামলেই নাকি সেই সব নির্যাতিতা মেয়েদের অতৃপ্ত আত্মার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। তবে স্থানীয়দের মতে ওই বাড়িতে কোন ভূত নেই।
মল্লিক ঘাট ফুল বাজার: কলকাতার বাসিন্দাদের অনেকেই ভুতুড়ে আত্মার উপস্থিতি টের পেয়েছেন হাওড়ার মল্লিক ঘাট ফুল বাজারেও। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন রাতের অন্ধকারে এই মল্লিক ঘাট বাজারে নাকি একজন মহিলার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। অনেকেই দাবি করেছেন ভোরবেলায় এই মল্লিক ঘাটে দাঁড়িয়ে জলের মধ্যে থেকেই নাকি ভাসমান দুটো হাত দেখতে পেয়েছেন তারা। ডুবে যাচ্ছেন ভেবে যিনিই সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছেন তিনিই তলিয়ে গিয়েছেন গঙ্গায়।
ন্যাশনাল লাইব্রেরী: ভুতুড়ে জায়গা হিসেবে শহরবাসীর আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরী। এখানে পড়াশোনা করতে আসা অনেকেই দাবি করেছেন তাঁরা তাঁদের ঘাড়ের কাছে ভারী নিশ্বাস পড়ার শব্দ পেয়েছেন। আবার অনেকে এই দাবি করেন দুপুরবেলায় লাইব্রেরীর তালা বন্ধ বল ডান্সের ফ্লোরে শোনা যায় মানুষের হাঁটা চলার শব্দ। শোনা যায় লর্ড মেটকাফের স্ত্রীর আত্মাই নাকি এখনও বেড়ায় এখানে।
আকাশবাণী ভবন: ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানার জন্য বিশেষ দুর্নাম রয়েছে আকাশবাণী ভবনের পুরনো অফিস Grastin Place-এরও।এখানে গভীর রাতে অনেকেই নাকি এক সাহেবকে উপুড় হয়ে কাজ করতে দেখেছেন। মাঝরাতে রেকর্ডিং রুমের বারান্দায় এক আশারীরিকে গান শুনতেও দেখেছেন অনেকে। গভীর রাতে এখানকার স্টুডিও থেকেও ভেসে আসে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ। আশ্চর্যের বিষয় এই বাদ্যযন্ত্র গুলি কোন মানুষ বাজায় না।
পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি: গভীর রাতে পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতেও তৈরি হয়, গা ছমছমে পরিবেশ। মাঝ রাতের অন্ধকারে এখানে নাকি আজও জেগে ওঠে বহু বছর আগের মৃত ব্রিটিশ সৈনিকদের আত্মা। অনেকে আবার দাবী করেন বৃষ্টির দুপুরেও এই সিমেট্রিতে গেলে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলে ব্রিটিশ অশরীরী আত্মারা।
উইপ্রো: রয়েছে কলকাতার ঝাঁ চকচকে অফিস উইপ্রোও। কর্মব্যস্ত এই অফিসের তিনতলায় রয়েছে এমনই এক নিষিদ্ধ এলাকা। শোনা যায় তিন তালার বাথরুমে দুপুর বেলাতেও যেতে ভয় পান কর্মীরা। এখানে গেলে কখনও কাঁচের মধ্যে ছায়া মূর্তি ভেসে ওঠে আবার কখনও হাঁটার সময় পিছনে কারও অস্তিত্বও টের পাওয়া যায়। স্থানীয়রা দাবি কেন এই অফিসের জমিতেই আগে কবরস্থান ছিল। সেই আত্মারাই সম্ভবত এখন উপদ্রব চালায় অফিস কর্মীদের ওপর।
এছাড়াও রয়েছে রাইটার্স বিল্ডিং-এর টাইপ রাইটারের ভুত কিংবা নিমতলা শ্মশানের মৃত আঘোরি সাধুদের ভুত। রয়েছে হেস্টিংস হাউসের মৃত ব্রিটিশ কর্মীর ভুতও। এই হাড়হিম করা আশরীদের জন্যই নাকি ঘুম উড়েছে কলকতার বহু মানুষের।
Leave a Reply