স্বাধীনতা দিবস

আজ ১৫ ই আগস্ট। ৭৬ বছর আগে, আজকের দিনেই ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের শিকল ভেঙে  প্রথমবার স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন আসমুদ্র হিমাচল গোটা ভারতবাসী। তাই বহু বিপ্লবীর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আসা এই দিনটি প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছেই অত্যন্ত গর্বের।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে শুরু থেকেই একটা বিরাট বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বাঙালি বিপ্লবীরা। তাই সেই সময় বাঙালি বিপ্লবীরাই হয়ে উঠেছিলেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান মুখ। তবে সেসময় পুরুষদের থেকে কিন্তু কোনো অংশে কম ছিলেন না বাংলার অসীম সাহসী অগ্নিকন্যারাও।

সেসময় পরাধীন দেশে বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহ, কিংবা সতীদাহ প্রথার মতো সামাজিক ব্যাধি বারবার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখনকার দিনের নারী শিক্ষা তথা নারী স্বাধীনতার পথে। কিন্তু শিক্ষার আলো একটু একটু করে তাঁদের মধ্যে পৌঁছাতেই জন্ম হতে লাগল অসামান্য সাহসী বাঙালি নারীর। সমস্ত নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে একসময় তাঁরাই ব্রতী  হয়েছিলেন ভারতমাতাকে স্বাধীন করা মহৎ উদ্দেশ্য। সময়ের ধুলো জমায়  বাঙালি আজ হয়তো ভুলতে বসেছে তাঁদের। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও অমলিন বাংলার সেই  সাহসী অগ্নিকন্যারা। আজেকের স্বাধীনতা দিবসে এমনই  ৩ বাঙালি নারীর নাম উল্লেখ না করলেই নয়।

বীণা দাস: এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন বীণা দাস। কৃষ্ণনগরে তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯১১ সালের ২৪ আগস্ট। পিতা বেণীমাধব দাস ছিলেন একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ছাত্র দরদী শিক্ষক। পাশাপাশি তাঁর মা সরলা দেবী সরলা পুণাশ্রম তৈরি করেছিলেন তখনকার নিঃস্ব ও অসহায় মহিলাদের সাহায্যের জন্য। তাই খুব ছোট থেকেই সমাজসেবার বীজ বপন করা হয়েছিল বীণা দেবীর মনের মধ্যে। ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হলে সেই সময়ের বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর গুলি চালিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি।

ননিবালা দেবী: পরাধীন ভারতবর্ষের অসীম সাহসী একজন মহিলা বিপ্লবী ছিলেন ননিবালা দেবী। তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা রাজবন্দী। ১৮৮৮ সালে হাওড়ার বালিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হওয়ায় তিনি বিধবাও হয়েছিলেন খুব কম বয়সে। সম্পর্কে তিনি ছিলেন বিপ্লবী অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেজ পিসিমা। তাঁর কাছেই বিপ্লবী হওয়ার পাঠ নিয়েছিলেন  ননীবালাদেবী। সেসময় ‘যুগান্তর’ বিপ্লবী দলে তিনি ‘মেজ পিসিমা’ নামেও সুপরিচিত ছিলেন।

বিধবা হয়েও মাঁথা ভর্তি সিঁদুর পরে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে আলিপুর জেলে বন্দি বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে  তাঁর কাছ থেকে গোপন তথ্য নিয়ে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও তখনকার দিনে একাধিকবার বাংলার বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি। তবে পরে  তিনি ধরা পড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি ছিলেন কলেরা রোগে আক্রান্ত মুমুর্ষ রোগী। সেই অবস্থাতেই তাঁকে গ্রেফতার করে পাঠানো হয় বেনারসের জেলে। সেখানেই তাঁর ওপর চলত অকথ্য অত্যাচার। গোপন তথ্য বার করার জন্য একবার নাকি তাঁর গোপনাঙ্গে লঙ্কাবাটা দেওয়া হয়েছিল। সেসময় প্রচন্ড জ্বালায় ছটফট করলেও মুখ দিয়ে একটাও গোপন তথ্য ফাঁস করেননি তিনি। পরে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি জেলেই ছিলেন নানীবালা দেবী।

আভা দে: বাংলার মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে আভা দে ছিলেন অন্যতম। পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়েই তিনি নিজের সাহস এবং  শারীরিক শক্তির জোরে জীবনকে তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ স্বাধীনের কাজে। সাঁতার কাটা থেকে শুরু করে দৌড়ানো, গাছে ওঠা, সাইকেল চালানো সবেতেই ছিলেন তিনি পারদর্শী। বন্ধু কল্যাণী দাসের সঙ্গে  ‘ছাত্রীসংঘ’ তে যোগদান করেন তিনি। একবার ছাত্রীসংঘ থেকে আয়োজিত সাইকেল চালানোর  প্রতিযোগীতায়  অংশ নিয়ে  কলকাতা থেকে বর্ধমান পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিমিরও বেশি পথ সাইকেল চালিয়ে প্রথম হয়েছিলেন তিনি ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *