স্কুল

রবিবার মানেই ছুটির দিন! ছোট-বড় সবার কাছেই এ যেন এক অলিখিত নিয়ম। তাই সারা সপ্তাহজুড়ে  স্কুল করার পর রবিবারের ছুটির জন্যই অপেক্ষায় থাকে সব স্কুলের কচিকাঁচারা। কিন্তু জানলে অবাক হবেন আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই এমন একটি  স্কুল রয়েছে যেখানে চলে উলটপুরাণ!  রবিবারে সবাই যখন মাংস ভাত খেয়ে ছুটি কাটায় তখন এই স্কুলের পড়ুয়ারাই ব্যাগ কাঁধে ছোটে স্কুলে। আর সোমবার যখন সবাই ছুটি কাটিয়ে স্কুলে যায় তখন এই স্কুলের বাচ্চারা আয়েশ করে ছুটি কাটায় বাড়িতে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোপালপুর গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের নাম গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়।

কিন্তু কেন এমন নিয়ম এই স্কুলে? আসলে এই স্কুলের সাথেই জড়িয়ে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতার স্বাদ। ইংরেজ শাসনে জর্জরিত পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তখন উত্তাল গোটা দেশ। ভারত মাতাকে স্বাধীন করতে তখন দিনের পর দিন নির্ঘুম রাট কাটাচ্ছেন পরাধীন ভারতবর্ষের বীর যোদ্ধারা। সেসময় সারা দেশ জুড়ে যখন চলছিল গাঁধীজির অসহযোগ আন্দোলন। সেই আন্দোলনে সাড়া দিয়েই বিদেশি দ্রব্যের মতোই ব্রিটিশ শাসকদের তৈরী সমস্ত নিয়মেরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছিলেন বাংলার মানুষ।

এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতারা পণ করেছিলেন ইংরেজদের সহযোগিতা ছাড়াই এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে স্কুল গড়ে তুলবেন তাঁরা। এই স্কুল শিক্ষকদের বেতনেরও ব্যবস্থা করেছিলেন নিজেরাই। সেই সময় এই মুক্তকেশী বিদ্যালয়ের জন্য জমি দিয়েছিলেন দুই জমিদার। ১৯২২ সালের  ৫ই জানুয়ারি ১৩ জন স্টুডেন্ট নিয়েই শুরু হয়েছিল এই স্কুল। সে সময় ইংরেজরা সমস্ত স্কুলে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিল। কিন্তু এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূপেন্দ্রনাথ নায়ক ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা।

 

তিনিই ব্রিটিশ শাসকদের নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে এই স্কুলে ইংরেজি ভাষা না শেখানোর নিয়ম জারি করার পাশাপাশি রবিবার স্কুল খোলা এবং সোমবার স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।তবে এই স্কুলে ইংরেজি পড়ানোর অনুমতি না থাকায় সেসময় স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়নি। তবে কোনো কিছুতেই দমিয়ে রাখা যায়নি এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের। সেই থেকে ১০১ বছর ধরেই এই পুরনো নিয়ম মেনেই পড়াশোনা চলছে  বর্ধমানের এই স্কুলটিতে। এই কারণে স্কুলটি শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বিখ্যাত সারা ভারতবর্ষে ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *