জয় বাংলা

বাংলার ঘরে ঘরে এখন ছেয়ে গিয়েছে একটাই রোগ তা হল ‘জয় বাংলা।’ শিশুরা তো বটেই তাদের থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বড়দের মধ্যেও। এই জয় বাংলারই আরেক নাম হল কনজাংটিভাইটিস। অনেকের কাছে এই রোগ আবার ‘চোখ ওঠা’ নামেও পরিচিত। টকটকে লাল চোখ আর দু’পাশ দিয়ে সমানে গড়াচ্ছে জল। বাড়িতে একবার কেউ আক্রান্ত হলেই নিমেষের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ছে বাকিদের মধ্যেও। জয় বাংলায় আক্রান্ত কোনও রোগীর চোখের দিকে তাকালেই নাকি এই রোগের খপ্পড়ে পড়তে হয়! এই ধারণা বহুদিনের, ছোট থেকেই কমবেশি আমরা সকলেই একথা শুনে এসেছি।কিন্তু আক্রান্তের চোখের দিকে তাকালে সত্যিই কি জয় বাংলায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে? নাকি এটা নেহাত কুসংস্কার।সত্যিটা কি? সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এর পিছনে আসলে রয়েছে ভাইরাসের কারসাজি।

এ বিষয়ে কলকাতার একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এই অসুখটির আসল নাম কনজাংটিভাইটিস। আসলে এই অসুখের পিছনে রয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাসের কারাসাজি। এই ভাইরাস চোখের সামনের দিকের সাদা আস্তরণ বা কনজাংটিভাকে আক্রান্ত করে। এরফলে চোখে শুরু হয় প্রদাহ বা জ্বলন। যা কনজাঙ্কটিভাইটিস নাম পরিচিত। এই অসুখেরই নাম জয় বাংলা। এই নামের পিছনেই রয়েছে এক পুরনো ইতিহাস। আসলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওপার বাংলা থেকে সবাই যখন এপার বাংলায় চলে এসেছিল সেই সময়ে এই রোগে ছেয়ে গিয়েছিল সারা বাংলার শরণার্থী শিবির। সেই থেকেই এই রোগের নাম হয়ে দাঁড়ায় জয় বাংলা। দেখে নেওয়া যাক এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় কি? কি ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত? এবং এই রোগটি সারতে কত দিন সময় লাগে?

এই অসুখের ক্লাসিক্যাল লক্ষণগুলি হল-

১. চোখ টকটকে লাল হয়ে যায়

২. চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়াতে থাকে

৩. চোখ প্রচন্ড চুলকায়

৪. চোখে জ্বলন শুরু হয়ে যায়

৫. চোখ ফুলে যায়

৬. আসতে পারে জ্বরও

৭.এমনকী ব্যথাও হয়

চিকিৎসা 

সাধারণত জয় বাংলা হলে তা সারতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যায়। আক্রান্তকে বারবার চোখে জল দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখার  পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি চোখে জ্বালা কমানোর জন্য মাঝেমাঝে টিয়ার ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্তের থেকে অন্যদের মধ্যে যাতে এই  রোগ ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য রোগী আলাদা ঘরে আইসোলেশনে থাকলে ভালো হয়। সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে যখন তখন  চোখে হাত দেওয়া চলবে না। আক্রান্তের সঙ্গে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

আক্রান্তের চোখের দিকে তাকালেই কি রোগ ছড়ায়?​

ছোটবেলা থেকেই আমাদের অনেকের মনে ধারণা রয়েছে জয় বাংলায় আক্রান্তের চোখের দিকে তাকালেই নাকি এই রজার খপ্পড়ে পড়তে হয়। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান কিন্তু তেমনটা বলে না। আসলে এসব রটনা ছাড়া আর কিছু নয়। অর্থাৎ আক্রান্তের চোখের দিকে তাকালে জয় বাংলা বা কনজাংটিভাইটিসের খপ্পরে পড়া সম্ভব নয়। তবে এই ভাইরাস ছড়ায় আক্রান্তের চোখের জল থেকে। তাই  আক্রান্ত ব্যক্তি চোখ কছলানোর পর সেই হাত যে জায়গায় রেখেছেন সেই জায়গায় যদি অন্য কেউ হাত দেয়।  আর সেই হাত চোখে দেওয়া হলে তবেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *