পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীর জীবনেই মৃত্যুই পরম সত্যি। তাই পৃথিবীর সবাইকেই প্রাণের মায়া ত্যাগ করে একসময় ছাড়তে হবে পৃথিবী। তাই জীবনে নাম-যশ,অর্থ-প্রতিপত্তি অন্য কোন কিছু আসুক না আসুক মৃত্যু অনিবার্য। যে জন্মেছে তাকে একদিন না একদিন মৃত্যুবরণ করতেই হবে। তবে পৃথিবীতে মৃত্যুর পর শুধুই দেহের বিনাশ হয়। কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাই গীতায় আত্মার রূপ বর্ণনা করে বলেছেন মৃত্যুর পর শুধুমাত্র আমাদের দেহই ফুরিয়ে যায় আত্মা নয়। শ্রীকৃষ্ণের কথায় আত্মা অমর এবং অবিনশ্বর। যাকে কোন অস্ত্র দিয়ে কাটা যায় না, আগুনে পোড়ানো যায় না, জলে গলানো যায় না, বাতাসে শুকানো যায় না। আত্মা হল সেটাই যা তার কর্মের ফল অনুসারে এক দেহ থেকে আরেক দেহে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সকলেই জানতে চায় মৃত্যুর পর আত্মা কোথায় যায়?
এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ গরুঢ় পুরাণে। শ্রীবিষ্ণুর বাহন গরুঢ় পাখি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘নারায়ণ, মৃত্যুর পর আত্মার সঙ্গে কী হয়? মৃত্যুর কতদিন পর আত্মা যমলোকে পৌঁছয়?’ বিষ্ণু ভগবান তাঁকে বলেন ‘মৃত্যুর পর বিদেহী আত্মার যমলোক যেতে ৪৭ দিন সময় লাগে। এই ৪৭ দিন নানারকম অত্যাচার সহ্য় করতে হয় আত্মাকে।’
মৃত্যুর আগে কি ইশারা পায় মানুষ?
যখনই মানুষের মৃত্যু ঘনিয়ে আসে, তখন প্রথমেই তাঁর কথা বলার শক্তি হারিয়ে যায়। এরপর সারা জীবনের সমস্ত কর্ম চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তখন দুজন যমদূত আত্মাকে যমলোকে নিয়ে যেতে এলে আত্মা দেহ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। এরপর যমদূতরা আত্মার গলায় দড়ি বেঁধে তাঁকে যমলোকের পথে নিয়ে যায়।
মৃত্যুর ১৩ দিন পর পিণ্ডদান করা হয় কেন?
মৃত ব্যক্তি জীবদ্দশায় পাপ করলে যমদূতরা তাঁকে নানা অত্যাচার করতে করতে যমলোকে নিয়ে যায়। অন্ধকারের মধ্যে গরম বাতাসের মধ্যে দিয়েই যমলোকের উদ্দেশ্য গমন করতে হয় আত্মাকে। এর পরবর্তী ধাপে আত্মাকে তাঁর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই জানা যায় মৃত্যুর পরেও ১৩ দিন নিজের বাড়িতে বাস করে আত্মা। এইসময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থেকে আত্মা আড়াল থেকেই দেখে তাঁর পারলৌকিক কাজকর্ম কী ভাবে পালিত হচ্ছে।
শ্রাদ্ধকর্ম, পিণ্ডদান, ব্রাহ্মণ ভোজন সম্পূর্ণ হলে ১৩ দিন পর যমদূতেরা আবার এসে নিয়ে যায় আত্মাকে। এই কারণেই পরিবারে কারও মৃত্যু হলে ১৩ দিন অশৌচ পালন করতে হয়। শাস্ত্রমতে আত্মার পারলৌকিক ক্রিয়া সঠিকভাবে পালিত হলে তবেই তা আত্মাকে যমলোকে ফিরে যাওয়ার শক্তি দেয়।
১৩ দিন পর আবার যমলোকে যাওয়ার সময় আত্মাকে প্রথমে বৈতরণী নদী পেরোতে হয়। লাল রঙের এই নদীতে প্রতি পদে থাকে ভয়ানক বিপদ। ধোঁয়া ভর্তি এই নদী পেরনোর সময় আত্মাকে হিংস্র সব প্রাণীর মুখোমুখি হতে হয়। এই নদী পেরোতেই ৪৭ দিন সময় লাগে আত্মার। যদি যে ব্যক্তি জীবদ্দশায় পুন্য অর্জন করেছেন তাঁর আত্মাকে কোনও কষ্ট পেতে হয় না। এক গরুর লেজ ধরেই তিনি বৈতরণী অনায়াসে পেরিয়ে যেতে পারেন। এরপর যমলোকে আত্মার পাপ-পূণ্যের বিচার করেন যমরাজ। তারপরেই ঠিক হয় সেই আত্মা নরকে ঠাঁই পাবে নাকি তা স্বার্গে যাবে।
Leave a Reply