এমন অনেক মানুষই আছেন যাদের ঘুরতে বেরিয়ে অনেক্ষণ ধরে জার্নি করার জন্য গ্যাস-অম্বল কিংবা ‘মোশন সিকনেস’ এর কারণে প্রায়ই রাস্তাঘাটেই বমি হয়ে যায়। অনেকের আবার অন্যের বমি দেখলেও বমি পেয়ে যায়। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন এই বমির বর্জ্য পদার্থও বাজারে বিক্রি হয় সোনার চেয়ে বেশি দামে। যদিও সেই বমি মানুষের নয়, বহু মূল্যবান এই বমি আসলে সামুদ্রিক প্রাণী তিমির। প্রসঙ্গত আন্তর্জাতিক বাজারে পশু পাচারের রমরমার কথা অজানা নয় কারও কাছেই।
এতদিন সবাই শুনেছেন পশুর হাড় চামড়া,কিংবা হাড় বিক্রির কথা। তাই হাতির দাঁত থেকে কুমিরের চামড়া কিংবা গন্ডারের শিং বাজারে বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকায়। এই কারণেই পৃথিবীজুড়ে পশু পাচার চক্রের দাপট বাড়ছে দিনের পর দিন। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন কোন প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ বিক্রি করে মানুষ কোটি কোটি টাকা আয় করছেন? দেশ-বিদেশের বাজারে তিমি মাছের বমি সোনার চেয়েও দামি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। তাই বিজ্ঞানীরা এই তিমি মাছের বমি কে ‘ভাসমান সোনা’ বলে থাকেন। এ পর্যন্ত শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন এমন কি থাকে তিমি মাছের বমিতে? যার জন্য তা কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয়?
কি আছে তিমি মাছের বমিতে?
তিমি মাছের বমিকে ‘অ্যাম্বারগ্রিস’ বলে। যা তিমি মাছের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত দামী একটি বর্জ্য পদার্থ হিসাবে জগৎ বিখ্যাত। আসলে সমুদ্রের গভীরে থাকা তিমি মাছ ছোট ছোট বড় নানা ধরনের মাছের পাশাপাশি খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে সেফালোপড জাতীয় হাজার হাজার স্কুইড। এই স্কুইড তিমি মাছের পাকস্থলী এবং অন্ত্রের মাঝখানে গিয়ে জমা হয়। এইভাবে দীর্ঘদিন থাকার পর তিমি মাছের বমি পাকস্থলীতে অ্যাম্বারগ্রিসে পরিণত হয়।
এটা খানিকটা সোলিক্স মোম জাতীয় পদার্থ। যা তিমি হজম করতে পারে না। তখন তিমির বমি থেকে থেকেই তৈরি অ্যাম্বারগ্রিস দেখতে ধূসর বা কালো রঙের। এএই অ্যাম্বারগ্রিসের উৎস শুধুমাত্র স্পার্ম হোয়েল। দীর্ঘদিন ধরে জমা হতে হতে অ্যাম্বারগ্রিস যখন আকারে একটু বড় হয়ে যায় তখন তিমি নিজেই তার মুখ থেকে বার করে দেয় মোমের মতো পিচ্ছিল এই বর্জ্য পদার্থ। বিজ্ঞানীদের মতে তিমি মাছের বমিতে থাকে অ্যালকোহল। কিন্তু প্রথমে এর গন্ধ মলের মত হলেও ধীরে ধীরে তা কাদামাটির মতো হতে থাকে। পরে বাতাসের সংস্পর্শে আসায় ধীরে ধীরে তা শক্ত পাথরের মতো হয়ে যায় তখন এই অ্যাম্বারগ্রিস থেকে দারুন সুগন্ধ বার হয়।
তিমি মাছের বমির এত দাম কেন?
আন্তর্জাতিক বাজারে এর এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই শুধুমাত্র এই অ্যাম্বারগ্রিস অর্থাৎ তিমি মাছের বমি পাওয়ার জন্যই কিছু চোরাচালানকারী অবৈধভাবে এই তিমি মাছ শিকার করে এবং তিমির পেটের ভেতর থেকে অ্যাম্বারগ্রিস উদ্ধার করে তা পাচার করে দেয়। তিমি মাছের পেট থেকে বেরিয়ে আসা এই পদার্থ থেকে যখন দারুণ সুগন্ধি বের হয় তখন বড় বড় পারফিউম কোম্পানিগুলিতে এটির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এই অ্যাম্বারগ্রিস ব্যবহার করেই পারফিউমের সুগন্ধ অনেকক্ষণ ধরে রাখা যায়। সুগন্ধি কোম্পানি গুলো তাই এই জিনিসটিকে অনেক দামে কিনে নেয়। ওষুধ হিসাবেও ব্যবহৃত হয় অ্যাম্বারগ্রিস। যৌন চিকিৎসাতেও গুরুত্বপূর্ণ তিমি মাছের বমি। এই কারণেই বহু মূল্যবান তিমি মাছের বমিকে ‘ভাসমান সোনা’ বলা হয়।
Leave a Reply