দীর্ঘ প্রায় দুশো বছরের দাসত্ত্বের শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৪৭ সালে ১৫ ই আগস্ট স্বাধীন হয়েছিল ভারতবর্ষ। কিন্তু সেই দুর্লভ স্বাধীনতা লাভের পিছনে রয়েছে এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, সেইসাথে রয়েছে দেশভাগের দগদগে ক্ষত। এছাড়া ভাগ বাঁটোয়ারার বিনিময়ে ভারতকে স্বাধীনতা দিলেও হিন্দু মুসলমানের জিঘির তুলে শুরু থেকেই ভারতবাসীর সম্প্রীতি ভীত নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল ইংরেজরা। যার মূল্য চুকাতে গিয়ে রাতারাতি উজাড় হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য ভারতবাসীর ভিটেমাটি।
কিন্তু জানলে অবাক হবেন সারা ভারত জুড়ে যখন ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় তখন বাংলার এমন চারটি জেলা আছে যেখানে আজও স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় ১৮ই আগস্ট। ভারতবর্ষে প্রথম দেশভাগের সূচনা হয়েছিল ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে। যার ফলে সবথেকে বেশি ভুগছিলেন বাংলার মানুষ। জানা যায় ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১২ অগস্ট, ১৯৪৭ ঘোষণা করেন ১৫ অগাস্ট থেকে স্বাধীন হবে ভারত। তবে বন্ধ দরজার বৈঠকে গোরা সাহেবের দল ঠিক করেছিল ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করবেন তারা। সেইমতোই ভাগ হয়েছিল অখন্ড বাংলাও। সেসময় দেশভাগ-পরবর্তী মানচিত্র তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন সিরিল র্যাডক্লিফ।
স্বাধীনতা দিবসের আগেরদিন সন্ধ্যায় আকাশবাণীর খবর যেন নিমেষের মধ্যেই ওলোট-পালট করে দিয়েছিল সব হিসেব নিকেশ। জানা যায় স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না মুর্শিদাবাদ সহ মালদা, নদীয়া, পশ্চিম দিনাজপুর, এবং ২৪ পরগনা। কলমের এক আঁচড়েই তালগোল পাকিয়ে দেন সিরিল র্যাডক্লিফ। খানিক ইচ্ছাকৃতভাবেই মুসলিম সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকার জন্য এই জেলা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে রাখা হয়েছিল। আর অধুনা বাংলাদেশের খুলনাকে পাঠানো হয়েছিল ভারতবর্ষে।
১৯৪৭ সালে যখন সারা দেশ স্বাধীনতার আনন্দে মেতে উঠেছিল সেইসময় ১৫ থেকে ১৭ আগস্ট তিনদিনের জন্য মুর্শিদাবাদ সহ পাচিমবঙ্গের মালদা, নদীয়া, পশ্চিম দিনাজপুর, ২৪ পরগনা জেলায় উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা। ঐদিন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের ব্যালেন্স স্কয়ার মাঠে উত্তোলন করা হয়েছিল পাকিস্তানে জাতীয় পতাকা কিন্তু সে সময় এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জা। তিনি দাবি তুলেছিলেন মুর্শিদাবাদ কে ভারতভুক্ত রাখতে হবে।
কংগ্রেস ও মুসলিম নেতৃত্ব আলোচনায় বসেও প্রথমে কোন সুরাহা হয়নি, পূর্ব পাকিস্তানও মুর্শিদাবাদ হাতছাড়া করতে চায়নি। এরপর দীর্ঘ তিনদিন ধরে নানানা আলোচনার পর ঠিক হয় বিনিময় প্রথার মাধ্যমে সমাধান করা হবে এই সমস্যার। তাই সীমান্ত ভাগের সিদ্ধান্ত মেনেই খুলনা যায় পূর্ব পাকিস্তানে আর মুর্শিদাবাদ আসে ভারতবর্ষে।শেষমেশ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয় ১৮ই আগস্ট। ওই দিনেইপ্রথমবার ভারতের জাতীয় পতাকা উড়েছিল মুর্শিদাবাদের বুকে। তাই সেই থেকে আজও ১৮ আগস্ট মুর্শিদাবাদ শোঃ বাংলার অন্যান্য জেলায় পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস। এইভাবেই শেষ পর্যন্ত তিন দিনের আন্দোলনে শেষে ছিন্ন হয়েও ১৮ অগস্ট ফের জুড়ে ছিল মুর্শিদাবাদ সহ এপার বাংলার অনান্য জেলা গুলি।
Leave a Reply