বহুদিন ধরেই আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে বেশ কিছু বিশ্বাস। যাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মেনে চলেছেন সকলেই। যদিও এখনকার নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই ধরনের প্রচলিত বিশ্বাসের ধার ধারে না। তবে জানলে অবাক হবেন এই সমস্ত বিষয়গুলি আপাতত দৃষ্টিতে কুসংস্কার বলে মনে হলেও একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে এগুলির পিছনে রয়েছে আদতে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ।
বিড়ালের রাস্তা কাটা: বিড়ালের রাস্তা কাটা নাকি অশুভ যাত্রার লক্ষণ। তাই যাত্রাপথে বিড়াল রাস্তা কাটলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এখনও থমে যান অনেকে। এর পেছনে যুক্তি দিয়ে বলা হয় যাত্রাকালে বিড়াল বা অন্য কোন পশু সামনে এলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতেই এমনটা করা হয়।
ভাঙা আয়নায় মুখ দেখা: ভাঙা আয়নায় মুখ দেখা নাকি অশুভ। যদিও বিজ্ঞানসম্মত কারণ হিসাবে বলা হয় না বাড়িতে ভাঙা আয়না থাকলে অসাবধানবশত হাত কেটে যাওয়ার ভয় থাকে। এছাড়া প্রাচীনকালে রোমানরা মনে করতেন ভাঙা আয়না আগামী সাত বছরের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে।
শ্মশান থেকে ফিরে স্নান: এটাও শুধু কুসংস্কার নয় রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ। মৃত্যুর পর যখন প্রাণীর দেহ প্রকৃতির সাথে বিয়োজিত হয় তখন অনেক ব্যাকটেরিয়া এসে হাজির হয়। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই শ্মশান থেকে বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই স্নান করার কথা বলা হয়।
উত্তর দিকে মাথা হয়ে শোওয়া : উত্তর দিকে মাথা করে ঘুমাতে নেই। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ দেখিয়ে বলা হয় পৃথিবীর দুই মেরুতে দুটি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। মানবদেহেও এই একই পজিশনে সমান্তরাল দুটি চৌমবক ক্ষেত্র রয়েছে। যার মধ্যে একটি পজিটিভ ও একটি নেগেটিভ। চুম্বকের ধর্ম মেনে সম মেরু বিকর্ষণ করে ও বিপরীত মেরু আকর্ষণ করে। এই কারণেই উত্তর দিকে মাথা করে ঘুমোতে নেই।
লেবু লঙ্কা ঝোলানো: অশুভ দৃষ্টি এড়াতে অনেক বাড়ির দরজার সামনে অথবা দোকানে লেবু লঙ্কা ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এর পিছনে থাকা বৈজ্ঞানিক কারণ হিসাবে বলা হয় লেবু ও লঙ্কায় কিছু কীটনাশক উপাদান রয়েছে যা পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
ঋতুমতী মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ: বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে এই সময় মেয়েদের দেহে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। তাই এইসময় শরীরের ধকলের কথা ভেবেই বাইরে বেরোতে চান না অনেকে। যদিও এখন স্যানিটারি ন্যাপকিন আসায় এই ধরনের নিয়ম মানার সত্যিই কোনো প্রয়োজন পড়ে না।
সূর্যাস্তের পর নখ কাটতে নেই: আগেকার দিনে অনেক বাড়িতেই কারেন্ট ছিল না। তাই অন্ধকারে নখ কাটতে বসলে অনেকসময় কেটে যাওয়ার ভয় থাকে। এই কারণেই সম্ভবত সূর্যাস্তের পর নখ কাটতে বারণ করা হয়।
বৃহস্পতি-শনিবারে নিরামিষ খাওয়া: শনি ঠাকুরকে সন্তুষ্ট করতে শনিবারে আর মঙ্গলবারে মঙ্গলের দোষ কাটাতেও অনেকে নিরামিষ খেয়ে থাকেন। আর বৃহস্পতিবার যেহেতু দেবী লক্ষীর দিন তাই তাঁকে তুষ্ট রাখতেও এই দিন নিরামিষ খাওয়া হয়। যদিও এর পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ হিসাবে বলা হয় পেট পরিষ্কার রাখতে সপ্তাহে একদিন নিরামিষ খেতে হয়।
দই-চিনি খাওয়া: যেকোনো শুভ কাজে বেরোনোর আগে দইচিনি খান অনেকে। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে দই শরীর ঠান্ডা রাখে। তাই শুভ কাজে যাওয়ার আগে দই খেলে তা শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি মনে আনে পজিটিভ শক্তি।
রাত্রিবেলায় গাছের পাতায় হাত দিতে নেই: দিনের বেলা গাছ অক্সিজেন ত্যাগ করলেও রাতে উল্টোটা হয়। এছাড়া রাতের অন্ধকারে গাছের পাতায় থাকে বিষাক্ত পোকামাকড়। এই পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতেই রাতে গাছের পাতায় হাত দিতে বারণ করা হয়।
গ্রহণ চলাকালীন খাবার খাওয়া বারণ: বলা হয় গ্রহণ চলাকালীন রান্না করা বা খাবার খাওয়া উচিত নয়। চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্য গ্রহণ একটি মহাজগতিক ঘটনা। এই সময় বিকিরণ ঘটে, যার মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের কণা। যা শরীরের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতিকারক।
পিছু ডাকতে নেই: পিছন থেকে ডাকলে নানা ধরনের বিপদ ঘটতে পারে। তাই বিপদ এড়াতেই পিছন থেকে ডাকতে বারণ করা হয়।
Leave a Reply