ভারতবর্ষ মানেই নদীমাতৃক দেশ। ভারতের সিন্ধু নদের তীরে একসময় গড়ে উঠেছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা। ভারতবর্ষের প্রধান নদী বলতে প্রথমেই আসে -গঙ্গা,যমুনা,পদ্মা,কৃষ্ণা,কাবেরী,নর্মদা কিংবা গোদাবরির নাম। কিন্তু বৈচিত্রময় দেশ আমাদের ভারতবর্ষের নানান প্রান্তে রয়েছে বৈচিত্রের সমাহার। নদীর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।
জানলে অবাক হবেন ভারতবর্ষের বুকে রয়েছে এক রহস্যময়ী নদী যা চোখে দেখা না গেলেও প্রবাহিত হয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে। অন্তঃসলিলা হয়ে প্রবাহিত ভারতের সেই বিখ্যাত নদীর নাম সরস্বতী। গঙ্গারও আগে নাকি ভারতবর্ষে উৎপত্তি হয়েছিল এই অভিশপ্ত নদীর। সরস্বতী শব্দের দু’টি অর্থ।‘স্ব’ অর্থাৎ আমাদের অন্তঃস্থ শক্তির ‘সার’ অর্থাৎ দেবী সরস্বতী আবার বলেন তিনি ‘সরস বতী’। তাই সরস্বতীতে নদী ও দেবী দুই’ই মিলেমিশে একাকার।
বিখ্যাত এই নদীর উল্লেখ রয়েছে ভারতের পৌরাণিক কাহিনীতেও। ঋকবেদেই প্রথম উল্লেখ পাওয়া গিয়েছিল সরস্বতী শব্দটির। এখানে মা সরস্বতীকে জ্ঞানদাত্রীর পাশাপাশি অন্নদাত্রী, শিক্ষাদাত্রী ও জলদাত্রী হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া এই নদী নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার পাশাপাশি রয়েছে ঋষি বেদব্যাসের দেওয়া অভিশাপের কথাও। এই ভাবেই ভারতের পুরাণ আর ইতিহাস মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে সরস্বতী নদীর স্রোতের প্রবাহে।
ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট একটা গ্রাম ‘মানা’। এটাই নাকি ‘ভারতের শেষ গ্রাম’। জানা যায় অভিশপ্ত নদী সরস্বতীর জন্ম হয়েছিল এখানেই। একথা মেনে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরাও। এলাহাবাদের ত্রিসঙ্গমে মিশেছে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদী। এর মধ্যে গঙ্গা ও যমুনা নজরে পড়লেও সরস্বতীকে দেখা যায়না। বলা হয়, গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর যে সঙ্গম রয়েছে এবং তা ভূগর্ভ থেকে প্রবাহিত হয় এবং প্রয়াগ সঙ্গমে মিলিত হয়। যা দেখতে বছর ভীড় জমান অসংখ্য পর্যটক।
অভিশপ্ত সরস্বতী নদী নিয়ে প্রচলিত আছে একাধিক মতবাদ। এমনই এক মতবাদ অনুসারে এই গ্রামেই রয়েছে ব্যাস গুহা। কথিত আছে এই গুহাতেই বসে বেদব্যাস যখন বেদের মন্ত্র জোরে জোরে পাঠ করছিলেন এবং গণেশ তা লিপিবদ্ধ করছিলেন, তখন সরস্বতী নদীর প্রবাহের শব্দে বেদব্যাসের মন্ত্রপাঠে বাধা আসছিল। তাই তিনি রেগে গিয়ে অভিশাপ দেন সরস্বতী নদীকে কেউ কখনও দেখতে পাবেনা। সেই থেকেই সরস্বতী নদী অন্তঃসলিলা বলে মানুষের বিশ্বাস।
আসলে আজ যে যমুনা নদীকে দেখা যায়, তা অতীতে সরস্বতী নদীরই উপনদী ছিল৷ কোনো কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার রাজস্থানের কোনও গ্রামের কাছে হারিয়ে যায় সরস্বতীর গতিপথ৷ তবে অন্তঃসলিলা হয়ে সরস্বতী যে আজও বয়ে চলেছে তা নিয়ে আজ আর কোনও সংশয় নেই৷ দীর্ঘ গবেষণায় ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত৷
Leave a Reply