Dristi

দৃষ্টিহীনদের মহিলা ফুটবল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে এই প্রথম বাংলার দুই প্রতিনিধি, সকলের নজর থাকুক আগামী ১৩ থেকে ২১ শে আগস্ট ইংল্যান্ডের বারনিংহামের দিকে

 

ফুটবল হোক বা ক্রিকেট সারা দেশজুড়ে উন্মাদনা চলে সারা বছর। বিশ্বকাপ হলে তো কথাই নেই, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, কোটি কোটি টাকার স্পন্সর, এলাহী আয়োজন। উন্মাদনার বহর এতটাই বেশি যে তা নিয়ে চলে বেটিং জুয়া পর্যন্ত।

তবে বিশেষভাবে সক্ষমদেরও জাতীয় আন্তর্জাতিক খেলাধুলা হয় তা জানে কজন! সরকারপক্ষ হোক বা সংবাদ মাধ্যম কিংবা স্পনসর দেওয়া ব্যবসায়ীরা, কারোর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সেই বিষয়ে। সম্পূর্ণ যোগ্যতার ভিত্তিতে, খেলোয়াড় বাছাই করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নানা ধরনের খেলার আয়োজন করে থাকে, ইন্ডিয়ান ব্লাইন্ড স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। এবারে আগামী ১৩ ই অগাস্ট থেকে একুশে আগস্ট ২০২৩ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ইংল্যান্ডের বার্নিংহামে। সারা পৃথিবী থেকে দেড়শ এর উপরে দেশ থেকে বিশেষভাবে সক্ষমরা অংশগ্রহণ করছেন এই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে। আর ভারতীয় প্লেয়ারদের নিয়ে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফর দা ব্লাইন্ড অফ বেঙ্গলের তত্ত্বাবধানে তারই চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, আজ ২৪ শে জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কেরালার কোচিতে।

খুশির খবর এ বাংলা থেকে , এই প্রথম দৃষ্টিহীন দুজন মহিলা ফুটবলার খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। একজন পূর্ব মেদিনীপুর পাঁশকুড়া থানার সঙ্গীতা মেটিয়া, যিনি রাজ্য দলের অধিনায়িকা, অন্যজন কৃষ্ণনগরের প্রতিমা ঘোষ, দুজনেই অত্যন্ত অভাবী ঘরের দৃষ্টিহীন। যাদের দুজনের বাবাই ক্ষেতমজুর হওয়া সত্ত্বেও, নিজেদের প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে স্নাতক হয়ে মাস্টার ডিগ্রি পাওয়ার জন্য বর্তমানে পাঠরতা। তবে দু চোখে অন্ধকার থাকলেও , স্বপ্ন পূরণ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন সকাল থেকে রাত। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ব্লাইন্ড অফ বেঙ্গল ২০০৭ সালে , এ ধরনের ছেলেমেয়েদের নিয়ে জাতীয় আন্তর্জাতিক স্তরে খেলাধুলার জন্য এক প্রকার সহৃদয় মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে নিয়ে তাদেরকে জায়গা করে দিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু নিজেদের মাঠ না থাকার কারণে কলকাতা রবীন্দ্রভারতীর মাঠে তাদের অনুমতির ভিত্তিতে মাঝেমধ্যে অনুশীলন করান।

অনেকের ক্ষেত্রেই ধারণা আছে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য প্লেন হোক বা ট্রেনে ভাড়া লাগে না একেবারেই। কিন্তু সঙ্গীতা প্রতিমাদের কথায়, ট্রেনে এক তৃতীয়াংশ ছাড় পেলেও প্লেনে একমাত্র একটি সংস্থা এই সুযোগ দিয়ে থাকে তবে তাদের স্বাভাবিক ন্যূনতম যা ভাড়া তার এক-তৃতীয়াংশ করেও সংগঠনের আর্থিক সক্ষমতায় কুলায় না।

ব্লাইন্ড ফুটবল অনুষ্ঠিত হয় চার জন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, একজন গোলকিপার জন একজন সাইড গাইড তবে সেক্ষেত্রে আংশিক দৃষ্টিহীন হলেও চলে, এ বাদে ও তিনজন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন অতিরিক্ত একজন গোলকিপার ফিজিওথেরাপিস্ট ডাক্তার কোচ সব মিলিয়ে , ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের জনাপনেরোর টিম আগামী একুশে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় এক মাসে থাকা খাওয়া বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আর এই কারণেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই বাংলার বিভিন্ন গ্রাম শহর থেকে বিশেষভাবে সক্ষমদের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও , তাদেরকে উপযুক্ত অনুশীলন পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

যদিও বা এত শারীরিক আর্থিক এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে কেউ পৌঁছায়, সে কথা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার এবং প্রসার ঘটানোও হয় না কোনদিন এমনই অভিযোগ কর্তৃপক্ষের। তারা বলেন, জাতীয় আন্তর্জাতিক যে স্পোর্টস চ্যানেল গুলি আছে, তাদের মধ্যে একমাত্র ইডি স্পোর্টস কখনো সখনো দেখিয়ে থাকে তাও হাইলাইটস খবর হিসেবে, বাকি কারোর দায়বদ্ধতা দেখায় না এদের প্রতি। ইন্ডিয়ান ব্লাইন্ড স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ইউটিউব পোর্টালেই আগ্রহীরা দেখে থাকেন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ।

তবে আমরা দায়বদ্ধ সেই সংবাদ পরিবেশন এর জন্য। সংবাদ সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের শুভকামনা জানাই। আগামী দিনে তারা উজ্জ্বল করুক ভারতবর্ষের নাম।

তাদের খেলা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো বিশেষভাবে সক্ষম খেলোয়াড় তৈরি হোক, মানুষের জনমতে এবং চাহিদায় স্পন্সর সরকার এবং সমস্ত সাংবাদ মাধ্যমের সুমতি এই কামনা করি।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *