প্রতারণা করাই ছিল তাঁর মূল কাজ, তাজমহল, পার্লামেন্ট সবই বিক্রি করেছেন ইনি, কে সেই ধুরন্ধর ব্যক্তি?

Title: প্রতারণা করাই ছিল তাঁর মূল কাজ, তাজমহল, পার্লামেন্ট সবই বিক্রি করেছেন ইনি, কে সেই ধুরন্ধর ব্যক্তি?

Natwarlal is biggest fraud in India sm

Natwarlal, Fraud, India, Conman, Sold, Tajmahal, Parliament, Lalkella, Delhi, Bihar, India, West Bengal, Kolkata, Bangla, Bengali, Bengali News, Bangla Khobor, Bengali Khobor

Body:

আচ্ছা আপনারা কি জানেন? আমাদের দেশের ঐতিহ্য দিল্লির তাজমহল, লালকেল্লা একসময় বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কি শুনতে অবিশ্বাস্য লাগছে তাই না। ভাবছেন এটা কি আদৌ সম্ভব? শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ভবন, সংসদ ভবন সবকিছুই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন আমাদের ভারতের এক গুণধর ব্যক্তি। যিনি ছিলেন সর্বকালের সেরা প্রতারক। প্রতারণায় তিনি করে এসেছিলেন পিএইচডি। একমাত্র ঐ ব্যক্তির হাত ধরেই ভারতের একের পর এক নিদর্শন বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।

এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে কে এই গুণধর ব্যক্তি? তিনি আর কেউ নন নটবরলাল। আর এই সমস্ত কিছুর পিছনে নাটের গুরু ছিলেন একমাত্র এই ব্যক্তি। এই ব্যক্তির আসল নাম মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব। যদিও সকলেই তাকে চেনেন নটবরলাল নামে। তিনি পেয়েছিলেন ভারতের সর্বকালের সেরা প্রতারকের তকমা। এমনকি তিনি এতটাই নিখুঁত কাজ করতেন যে, কেউ সহজে ধরতেই পারতেন না।

নটবরলালের কৃতিত্ব:

সময়টা ১৯১২ সাল, তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। সেই সময় বিহারের সিওয়ান জেলার বাংরায় জন্মেছিলেন মিথিলেশ শ্রীবাস্তব। বাবা ছিলেন স্টেশন মাস্টার। জানা যায়, নটবরলাল ছিলেন দুই ভাই। তারমধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোটো থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং ধূর্ত ব্যক্তিসম্পন্ন। সর্বক্ষণ তার মাথায় বদ বুদ্ধি ঘুরে বেড়াতো। তিনি একবার পড়শির সই জাল করে ড্রাফট ভাঙ্গিয়ে ১০০০ টাকা তুলে নিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সে কথা জানাজানি হয়ে যায়।

আসলে নটবরলাল বাণিজ্যর ছাত্র হওয়ার দরুণ টাকা পয়সার হিসেবটা বড্ড ভালোই জানতেন। সেইসাথে জানতেন ব্যাংকের নিয়ম কানুন সম্পর্কে। যদিও ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ড্রাফটিং এই সমস্ত কিছু ছিল তার হাতের ময়লা, এর থেকেও আরো বড় বড় কাজ করেছেন তিনি। ১৯৩৭ সালে নটবরলালকে নিয়ে শুরু হয় চর্চা। যদিও এই চর্চার পিছনে ছিল চুরির অভিযোগ। সেই সময় ৯ টন লোহার চুরির অভিযোগ উঠে আসে তার বিরুদ্ধে। ফলে গ্রেফতারও করা হয়ে তাকে, সাথে হয় ছয়মাস হাজতবাস।

যদিও জেল থেকে ফেরার পর তার বিন্দুমাত্র শিক্ষা হয়নি। এরপর থেকে তিনি যেন আরো বেশি করে প্রতারণার কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। সই, নথি জাল করে ঠকানোর কাজে ওস্তাদ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই সাথে ছদ্মবেশ ধারণ করতেও ছিলেন বড় মাষ্টার। এই ছদ্মবেশ ধারণ করে তিনি দিল্লির তাজমহল বিক্রি করেন। তাও আবার একবার নয়, তিন তিনবার। জানা যায় সরকারি আধিকারিক সেজে কয়েকজন বিদেশি পর্যটককে এভাবেই তাজমহল বিক্রি করেছিলেন।

তবে শুধু তাজমহলই নয়, একই সাথে লালকেল্লা, সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবনও ছদ্মবেশ এবং জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ঘোল খাইয়েছেন বড় বড় মাপের ব্যক্তিদেরকেও। যদিও একাজ করে তিনি নিস্তার পাননি। তার মাথার উপর ছিল ভুঁড়ি ভুঁড়ি মামলা। শুধু তাই নয়, তার জীবন নাস্তানাবুদ করার জন্যই তো ছিলই পুলিশ আধিকারিকেরা।

নটবরলাল হওয়ার পিছনে কাহিনী:

এই মিথিলেশ থেকে তাঁর নটবরলাল হওয়ার পিছনেও রয়েছে এক বিরাট কাহিনী। জানা যায়, জালিয়াতির জন্য তিনি এক সরকারি আধিকারিকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। আর সেই সময় তার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন এক গুজরাটি বন্ধু, যার নাম ছিল নটবরলাল। দুজনে মিলেই তখন জালিয়াতির কাজ দেদার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একটি ঘটনায় ধরা পড়ে যাওয়ায় দুজনকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। উল্টোদিকে ওই গুজরাটি শাগরেদ পালিয়ে গেলেও, মিথিলেশ পালাতে পারেননি। এর ফলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। কিন্তু পুলিশ আধিকারিকেরা ভেবে নেন ইনি হচ্ছেন সেই গুজরাটি ব্যক্তি নটবরলাল। আর সেই থেকেই তার নাম হয়ে যায় নটবরলাল।

এই ব্যক্তির নামে কত অভিযোগ রয়েছে দেখুন:

তথ্যসূত্র জানা যায়, মিথিলেশ অর্থাৎ নটবরলাল এত কুকীর্তি করেছিলেন যে তার মাথার উপর ছিল ১১৩ বছরের কারাদণ্ডের সাজা। কিন্তু, তিনি মাত্র ২০ বছর জেলের সাজা ভোগ করেন। কারণ তিনি এতই চতুর ব্যক্তি ছিলেন যে সকলকে চোখে ফাঁকি দিয়ে বার বার জেল থেকে পালিয়ে যেতেন। এমনকি শেষবার অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। আর সেই সময় শরীর অসুস্থতা হয়ে যাওয়ায় কানপুর জেল থেকে দিল্লির এইমস এর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু সেইসময় পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে কোথায় যে বেপাত্তা হয়ে যান কেউই খুঁজে পাননি। আপনাদের জানিয়ে রাখি সেই সময় নটবরলালের বয়স ছিল ৮৪ বছর।

এরফলে সেই ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে আজও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেন তিনি নাকি ২০০৯ সালের ২৫ শে জুলাই মারা গিয়েছেন। আবার নটবরলালের ভাই দাবি করেছিলেন, ১৯৯৬ সালেই নাকি তার মৃত্যু হয়। যদিও সেই জট এখনো কাটেনি। ভারতের বিখ্যাত প্রতারক হলেও মানুষের কাছে তিনি কিন্তু অত্যন্ত গর্বের। ইতিমধ্যেই তাকে নিয়ে রুপোলি পর্দায় সিনেমাও মুক্তি পেয়ে গিয়েছে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *