Title: মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক জীবনের উত্থান কাহিনী!
Thumb: তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি রাজনৈতিক জীবনের উত্থানের মন্ত্র!
Focus:
গোটা ভারতবর্ষ চেনেন মমতা ব্যানার্জিকে!
জানেন তার রাজনৈতিক
জীবনের দাপটের কথা!
বাংলার মেয়ে থেকে হয়েছেন
বাংলার দিদি!
কিন্তু আজ এই দাপট, এত জনপ্রিয়তা
সবকিন্তু এক রাতে অর্জন করেননি!
মমতা ব্যানার্জির
উত্থানের কাহিনী বিরাট!
প্রশ্ন রাজনৈতিক জীবনে তাঁর চলার
মূল মন্ত্র কি ছিল?
Body:
বাংলার রাজনীতিতে টাফ ফাইটার হিসেবেই পরিচিত মমতা ব্যানার্জি। রাজনীতির মঞ্চে তার চোখা চোখা বাক্যবাণ বিরোধীদলের ভিত কাঁপিয়ে দিতেই যথেষ্ট। শুধু কি তাই বাংলার নেত্রীর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন ব্রহ্মাস্ত্রের মত কাজ করে রাজনীতির মঞ্চে। বিরোধীদের সাথে কিভাবে লড়াই করা যায়, সেই সব শিক্ষা রয়েছে মমতা ব্যানার্জির আঙ্গুলের ডগায়। তবে আজ তাঁর এত দাপট, এত হুঙ্কার এতকিছু কিন্তু একসময় ছিল না।
প্রতাপশালী বামফ্রন্টদের সামনে মাথার তুলে দাঁড়ানো তো দূর, আশেপাশেই টিকতে পারতেন না। একসময় বিরোধীদলের নেত্রী হয়ে নানা রকমের লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকার হতে হয়। তবুও তিনি হার মানেননি। তখনকার সময় শাসক দলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন। আর আজ তিনি তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। এখন প্রশ্ন রাজনীতি জীবনে তাঁর উত্থান কিভাবে?
একেবারেই প্রথম থেকে শুরু করা যাক।
১৯৫৫ সাল ৫ই জানুয়ারি হাজরা অঞ্চলের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত সনাতন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিতা প্রমিলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী। ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং সাহসী ছাত্রী হিসেবেই নেত্রীর পরিচিতি। কলকাতার শ্রী শিক্ষায়তন কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী সম্পূর্ণ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ এবং পরবর্তীতে কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। ছোট থেকেই তিনি পড়াশোনাকে ভালবাসতেন। যার ফলে কখনোই পড়াশোনার প্রতি আলস্য কিংবা অমনোযোগী ভাব ছিল না। কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি মমতা দেবীর মন রাজনীতির দিকে ছুটতে থাকে। এর ফলে ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতির মঞ্চে তাঁর প্রবেশ। জানা যায়, মমতা ব্যানার্জির প্রথম পেশা ছিল স্কুল শিক্ষকতা। সংসারের হাল ধরতে স্কুল থেকেই তার কর্মজীবন শুরু। কিন্তু রাজনীতির টান নেত্রীকে বসে থাকতে দেয়নি। অল্প বয়সে তখন শরীর, সাথে মনের তেজ দুটোই অফুরন্ত। মমতা ব্যানার্জির মনের এমন তেজ দেখে দলের সিনিয়র নেতারাও ভেবেছিলেন তিনি রাজনীতিতে অনেক দূর যাবেন। আর সে কথাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।
১৯৭০ সাল অত্যন্ত কম বয়স থেকেই তিনি কংগ্রেস দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১ বছর বয়স পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সাধারণ সম্পাদকের পদে বসে তার দায়িত্ব দেখে খুশি হন দলের সদস্যরাও। বছর কয়েক যেতে না যেতেই নিখিল ভারত যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। এমনকি মমতা ব্যানার্জির এমন রাজনৈতিক জীবনের উত্থানের কাহিনী নজরে পড়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর চোখেও।
এবার আসি মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক জীবনের মূল স্রোতের দিকে। সময়টা তখন ১৯৮৪ সাল। বঙ্গ জুড়ে চলছে লোকসভা নির্বাচন আর সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে কমিউনিস্ট প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। আর বিরোধী প্রার্থী হিসেবে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আর সেইবার তিনি বর্ষীয়ান নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। জানা গিয়েছে সেইসময় তিনি দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ হয়ে পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছিলেন।
কিন্তু এরপরের বার অর্থাৎ ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে আসেন। তবে তার ঠিক ২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে আবার দক্ষিণকলকাতার আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় ফিরে আসেন তিনি। আর এই কাম ব্যাক তার জীবন বদলে দেয়। পরপর পাঁচবার ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪ ও ২০০৯ সালের লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। লোকসভা সদস্য থাকাকালীন মমতা ব্যানার্জির সেই লড়াকু এবং প্রতিবাদী সত্তা দেখা যায়।
এবার ১৯৯১ সালে নরসিমা রাও মন্ত্রিসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবসম্পদ, উন্নয়ন যুব কল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন। তবে পরবর্তীতে তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৯৩ সালে তার এই পদত্যাগ পত্র গৃহীত হয়।
তবে এতটা পথ চলা মসৃণ হলেও ১৯৯৩ সালেই তার রাজনৈতিক জীবন মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেসময় বঙ্গ জুড়ে রাজত্ব চলছে বাম নেতাদের। আর তখন নির্বাচনে কারচুপি এবং ছাপ্পার অভিযোগ ছিল প্রচুর। আর তারই প্রতিবাদের নামেন কংগ্রেস দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ১৯৯৩ সালের ২১ শে জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন তিনি। আর এই মহাকরণ অভিযানে শহীদ হয় ১৩টি প্রাণ। যদিও ২১শে জুলাই নিয়ে নানা রকমের দাবি অতীতে, এমনকি বর্তমানেও উঠে আসে। সে যাই হোক এই সময় মমতা ব্যানার্জির সেই প্রতিবাদী সত্তা বাংলার মানুষ দেখতে পান।
এর মাঝে আরও বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যায় তৃণমূল সুপ্রিমোর জীবনে। অবশেষে ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। যদিও কংগ্রেস দল ছাড়া পিছনেও রয়েছে বিরাট কাহিনী। এরপর ১৯৯৮ সালে তার হাত ধরে সূচনা হয় তৃণমূল দলের। এবং দিন কয়েকের মধ্যেই এটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে দাঁড়ায়, সেই সাথে বামফ্রন্টের বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করা হয়।
১৯৯৯ সালে তিনি প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব তিনি যথেষ্ট দক্ষতা এবং শ্রদ্ধার সাথে পালন করেন। তবে তৃণমূলের নেত্রী হবার পর থেকেই বিরোধীদল হিসেবে বামফ্রন্টের সঙ্গে নানারকমের অসন্তোষ, দাঙ্গার মধ্যে জড়াতে হয়। এমনকি বাম জামানায় অর্থাৎ ২০০৬ সালে সিঙ্গুর জমি রক্ষার জন্য বিরাট আন্দোলন হতে দেখা যায়। সেখানে অন্যতম মুখ হিসেবে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। শুধু তাই নয়, নন্দীগ্রাম আন্দোলনেও তৃণমূল নেত্রীর উদ্যোগ এবং বলিষ্ঠ কন্ঠ একবারে উচ্চ পর্যায় থাকে। তবে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর থেকেই থিতু হতে থাকে বামফ্রন্টের শাসন। উল্টে এইসময় তৃণমূলের শুভারম্ভ শুরু।
এরপর ২০১১ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি বসেন রাজ সিংহাসনে। আর এরপরের যাত্রাটা প্রায় সকলের জানা। বাংলার সাধারণ ঘরের মেয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গোটা রাজ্য, দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির অদম্য জেদ, তেজ এবং বুদ্ধি যার জেরে তিনি হয়ে উঠেছেন সকলের দিদি। ২০১১ থেকে আজ ২০২৪ এখনো পর্যন্ত মমতা ব্যানার্জির সিংহাসন কেউ টলাতে পারেনি।
প্রতিবেদনটি লিখেছে সুনন্দা মান্না, কন্ঠে রিয়া সরকার, এবং গ্রাফিক্স করেছে শুভঙ্কর সরকার। বাংলা হান্টের আরো নিত্য নতুন প্রতিবেদন দেখতে নজর রাখুন আমাদের পেজে।
Leave a Reply