itle: টানা ৩ দিন মেয়েরা কাজ করা তো দূর! জল টুকু গড়িয়ে খান না! রান্না থেকে সমস্ত কিছু করেন পুরুষেরা!
Focus:
টানা ৩ দিন মেয়েরা
কাজ করা তো দূর!
জল টুকু
গড়িয়ে খান না!
রান্না থেকে সমস্ত
কিছু করেন পুরুষেরা!
মেয়েরা পায়ের উপর পা
তুলে রাজরানী হয়ে থাকেন!
ঠিক কি হয় এদিন?
কোথায় এমন অদ্ভুত নিয়ম রয়েছে?
দেখুন
Body:
ছেলেরা ডিউটিতে একদিন ছুটি পেলেও মেয়েদের ডিউটিতে কোনো ছুটি নেই। সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে থাকেন। কিন্তু দেশের এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে ৩ দিন মহিলারা কোনো কাজ করেন না। রান্না তো দূর জল টুকু গড়িয়ে খেতে হয় না। এই ৩ দিন তারা শুধু আরাম আর আরাম করেন। এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে এমন নিয়ম আবার কোথায় চালু রয়েছে? বাপের জন্ম তো এমন উদ্ভট নিয়ম শুনিনি! না না এটা উদ্ভট নয়। এটি একপ্রকার উৎসব। আর এই উৎসব পালিত হয় ওড়িশাতে। এই উৎসবকে বলা হয় রাজা পর্ব কিংবা মিথুন উৎসব। তবে উৎসবটি পালিত হয় মেয়েদেরকে কেন্দ্র করে।
ঋতুস্রাব শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। কি বিষয়টি শুনে লজ্জা লাগলো! কিন্তু এতে লজ্জা লাগার কি আছে। হ্যাঁ বর্তমানে সমাজ অনেকটাই উন্নত হয়েছে। আগের তুলনায় অনেকটাই কুসংস্কার দমানো গেছে। কিন্তু সত্যি কি দমানো গেছে! এখনো এই ঋতুস্রাবের কথা জোরে বলা যায় না, বরং ফিসফিসিয়ে বলতে হয়। আজও কি ছুঁতমার্গের শেষ আছে? সেই ঠাকুর ধরা যাবে না। এখানে বসা যাবে না। কত নিয়ম বিধি। আর এইসমস্ত নিয়ম বিধিকে ফুৎকার মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। উড়িষ্যার বাসিন্দারা। মেয়েদের ঋতুস্রাব কেন্দ্র করে পালন করা হচ্ছে উৎসব।
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে, আষাঢ় মাসে নির্দিষ্ট সময় সূর্য মিথুন রাশিতে প্রবেশ করে। এই সময়টিকে বলা হয় মিথুন উৎসব। এই সময় গোটা ধরিত্রী ঋতুমতী হয়ে ওঠেন। সেইসময় ঢাকা পড়ে যায় প্রতিটি মায়ের মুখ। মায়ের গায়ে জমে থাকা লাল সিঁদুর ধীরে ধীরে জলে ভেসে যায়। আর এইসময় উড়িষ্যার প্রতিটি মেয়েরা অন্য ছন্দে উৎসব পালন করে থাকেন। বিশেষ এই ৩দিন মেয়েরা নিজেদের নতুন নতুন রূপে সাজিয়ে তোলেন। শুধু তাই নয় গৃহস্থালীর কাজ তো দূর, কোনো কাজেই তারা অংশগ্রহণ করেন না। যদিও উৎসব কুমারীদের জন্য। কিন্তু এতে অংশগ্রহণ করেন সকল মেয়েরা। নিজেদের নারীত্ব উদযাপন করেন সকলে।
এই ৩ দিন ওড়িশার প্রতিটি মহিলা সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীরে হলুদ-চন্দন লাগান। তারপর স্নান করে নিজেদের পবিত্র করে তোলেন। এরপর মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের আরাধনা করেন। তবে এই ৩ দিন কোনো ভাজা কিংবা মশলা দেওয়া খাবার খান না। শুধু কাঁচা খাবার, মুসাম্বি, আম, কলা এবং লিচুর মতো ফল খান। এমনকি কোনো খাবারে নুনের ব্যবহার পর্যন্ত চলে না। এই সময় এখানে নানারকমের মেলা বসে। সেই মেলায় ঘুরে বেড়ানো, সাজগোজ করা, একে অপরের সাথে গল্প গুজব করা, দোলনায় ঝুলে সময় উপভোগ করেন মহিলারা। এছাড়াও নাচ-গান করা, লুডো খেলা ইত্যাদি চলতে থাকে। বয়স্করাও বাদ যান না, নিজেদের সখীদের সাথে বসে পুরনো স্মৃতি মনে করা, মাঝে মাঝে নানারকম পান সেজে খাওয়া এ এক বিরাট আড়ম্বর। এই রীতির জন্য বিভিন্ন অফিসেও মেয়েদের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি এইসময় মেয়েরা খালি পায়ে হাঁটেন। এই ৩ দিন মেয়েদের আরামের সময়। এইসময় শুধু কাজ করেন ছেলেরা।
ওড়িশার দক্ষিণাংশে প্রথম এই উৎসব চালু হলেও। এখন ওড়িশায় প্রতিটি কোনায় কোনায় পৌঁছে গিয়েছে এই উৎসব। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই চোখ রাঙানিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এক আলাদাই নির্দশন তৈরি করেছেন ওড়িশার বাসিন্দারা।
Leave a Reply