Title: নব্বই দশকের অভিনেতা সুখেন দাসকে মনে আছে?
Focus:
মনে আছে?
নব্বই দশকের অভিনেতা
সুখেন দাসকে?
যিনি একসময়
অনাথ আশ্রমে দিন কাটিয়েছেন,
বনেদী পরিবারের সন্তান হয়েও
ভিখিরির মত ঘুরে বেড়িয়েছেন রাস্তায় রাস্তায়!
কাজ করেছেন
স্পটবয় হিসেবে!
আর সেই ব্যক্তি একসময় একাই
কাঁপিয়েছেন রূপালী পর্দা!
উত্তম কুমারের পর বাংলা
সিনেমার ভিত নিজে হাতে ধরেছেন!
বাঙালিদের দিয়ে গেছেন
একের পর এক উপহার
বদলে কপালে কি জুটেছে?
শুধুই তাচ্ছিল্য!
Body:
কথায় আছে সময়ের ছোবলে আজ যে রাজা কাল সে ফকির! আবার উল্টোটাও হয় যে ফকির সে রাজাও হয়ে যায়। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ বাঙালির গর্ব সুখেন দাস। নবাব পুত্তুর হয়ে জন্মালেও কপালে নবাবের ন টুকু জোটেনি। বরং জুটেছে অভাব আর অভাব। আর সেই অভাবীর ছেলে বাঙালিকে দুহাত খুলে দিয়ে গেছেন একের পর এক উপহার। কিন্তু বাঙালী কি করেছেন সেই সব ভুলে গেছেন। এমনকি বাংলার সিনেমার ভিত গড়ার পরও পাননি সাধারণ সম্মানটুকু। তিনি একমাত্র অভিনেতা যে মানুষের আবেগকে বের করে আনতে পারতেন। তিনি একমাত্র পরিচালক যার সংলাপে গোটা সিনেমাহল কেঁদে উঠতো। পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করলেও বুম্বাদা থেকে শুরু করে চিরঞ্জিত, তাপস পালকে টক্কর দিতেন তিনি। গোলগাল চেহারা, সেই চুলের ছাঁট। একজন হিরোর চেয়ে কম কিছু নয়। কিন্তু সেই মানুষটি আজ সকলের মন থেকে ব্রাত্য। তবে জানেন সুখেন দাসের অভিনয় জগতে আসা আর পাঁচটা অভিনেতাদের মতো নয়।
কলকাতার এক বনেদি বংশের সন্তান ছিলেন সুখেন দাস। আপনারা নিশ্চয়ই বউবাজারের বিখ্যাত শ্রীনাথ দাস লেন এর নাম শুনেছেন? জানেন? এই শ্রীনাথ দাস কিন্তু সুখেন বাবুর ঠাকুরদা। শ্রীনাথ দাসের দুই ছেলে, উপেন্দ্রনাথ দাস, ফণীন্দ্রনাথ দাস। সুখেন ছিলেন ফণীন্দ্রনাথের ছেলে। সুখেন দাসের বাবা নাট্য প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমনকি তার জেঠুও সেই একই পেশায় যুক্ত ছিলেন। আর এই নাটকের প্রতি ভালবাসা তাঁর বাবার জীবনে কালশর্প হয়ে দাঁড়ায়। নাটক তাকে সর্বস্বান্ত করে দেয়। যার ধাক্কা সামলাতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফণীন্দ্রবাবু মারা যান। স্বামীর শোক সইতে না পেরে তার কিছু দিনের মাথায় সুখেনের মাও মারা যান। বাবা মা হারিয়ে সুখেন সহ তারা পাঁচ ভাইবোন অনাথ হয়ে পড়ে। মাথার উপর ঠাঁই হয় অনাথ আশ্রমের।
তবে সকলে অনাথ আশ্রমে থাকলেও সুখেন হচ্ছে বাঁধনছাড়া, ডানপিঠে পাখি। তাকে এক জায়গায় কেউ আটকে রাখতে পারেননি। ওই চার দেওয়ালে থেকে নিজেকে বের করে আনেন। একদিন সময় বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন অভিনেতা। এরপর তাঁর ঠিকানা হয় রাস্তা। সেখানেই দিনরাত ঘুরে বেড়ানো এদিক ওদিক করে খাবার জোগাড় করে দিন চলতে থাকে। বয়স তখন একেবারেই অল্প। যে বয়সে সকলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। সেইবয়সে পুঁথিগত শিক্ষা তো দূর ডাক্তারের বাড়িতে ফাইফরমাস খাটতেন। কাজ করে যে টাকা পেতেন মাঝে মধ্যে সিনেমা দেখতে চলে যেতেন। যার রক্তেই অভিনয় ঢুকে রয়েছে তাকে অভিনয় থেকে বাদ দেয় কে? অভিনয়ের টানে তিনি স্টুডিও পাড়াতে ঘোরাঘুরি শুরু করেন। কিন্তু প্রথম প্রথম কারোর নজরে আসেননি। তবে সুখেন তো সুখেনই তাকে টলানোর সাধ্যি কার। বাধ্য সুখেন এরপর থেকে সেখানে রোজ যাওয়া আসা শুরু করে। এমনকি সেখানে স্পটবয় হিসেবে কাজ শুরু করেন। হঠাৎই একদিন প্রখ্যাত নাট্যকার এবং সিনেমা পরিচালক দেবনারায়ণ গুপ্তের চোখে পড়ে যান তিনি। অমায়িক চেহারা, গোলগাল সবই নজরকাড়ার মত। বয়স তখন ওই ১১ কি ১২। তিনি প্রথম দাসীপুত্র নামের একটি ছবিতে কাজ করার সুযোগ করে দেয় সুখেনকে। এরপর আসতে আসতে একের পর এক সিনেমায় কাজ করার সুযোগ আসে। বয়স যত বাড়তে থাকে তার নাম ডাক ততই বাড়তে থাকে। মা এক মন্দির, ধন্যি মেয়ে, দাদামণি, সোনা বৌদি, জীবন মরণ,একের পর এক হিট ছবি দিয়ে বাংলার পর্দা কাপিয়েছেন তিনি।
শুধু অভিনয় নয় একইসাথে নাট্যকার পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সেইসময় বাংলা ছবির সদ্য পতন ঘটেছে। বাংলা সিনেমা থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন উত্তমকুমার। সেইসময় হাল ধরেন মাস্টার সুখেন। কাজে লাগান ট্র্যাজেডিকে। যেকথা কেউই ভাবেননি সেকথাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সিনেমায়। একান্নবর্তী পরিবার, ভাইয়ে ভাইয়ে মিল, জায়ে জায়ে ঝগড়া নানারকমের গল্প তুলে ধরেন। তার হাত ধরে প্রকাশ পায় সুনয়নী, সিংহদুয়ার, মান অভিমান, সংকল্প, প্রতিশোধ, পান্না হীরে চুনী, জীবন-মরণ, দাদামণি, দান-প্রতিদানের মত ব্লক ব্লাস্টার সব ছবি। যে সিনেমা দেখলে আজও মানুষ স্তব্ধ হয়ে যায়। পাঁচ দশক ধরে বাংলা সিনেমার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। যার প্রশংসা করতে ভোলেননি স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও। এমনকি সুচিত্রা সেন থেকে শুরু করে উত্তম কুমার। সকলের অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন তিনি।
কোথায় আজকের সেই ওটিটি, আর কোথায় সুখেন দাসের আবেগে মোড়া সব ছবি। আজ বাংলা ছবির সংজ্ঞা বদলে গেলেও। সুখেন দাসকে ভোলার নয়। তিনি সর্বদা বাঙালির মননে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
Leave a Reply