Title: ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়েও, শেষপর্যন্ত পাশে নেই মা!
Focus:
এক চান্সে ইউপিএসসি
পরীক্ষায় সেকেন্ড!
শেষপর্যন্ত পাশে নেই মা!
পরীক্ষার আগেই
মাকে হারান ছেলে!
কষ্ট বুকে চেপে
পরীক্ষা দেন অনিমেষ!
এতবড় সাফল্য
তারপরও পাশে নেই কেউ
মুখে হাসি থাকলেও
কিন্তু চোখে জল!
Body:
মাধ্যমিক হোক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক যেকোনো পরীক্ষায় সর্বদা বাবা মাকেই একমাত্র পাশে পাওয়া যায়। সন্তানরা রাত জেগে পড়লে বাবা মায়েরাও জেগে থাকেন। সন্তানের রেজাল্ট বেরোনোর আগে বাবা মায়ের চিন্তা হতে থাকে। কিন্তু আজ এমন এক সন্তানের গল্প বলবো যিনি কিনা ইউপিএসসি পাশ করেও পাশে পায়নি কাউকে। চোখের জল মায়ের আঁচল দিয়ে মুছে নিতে পারেননি। বাবা জড়িয়ে ধরে আমার ছেলে করে দেখিয়েছে এই কথাটাও শুনতে পাননি। বরং বেরিয়ে এসেছে বুক চাপা আতর্নাদ। ২৪ বছর বয়সী অনিমেষের এই কাহিনী শুনলে আপনারও চোখে জল আসবে।
ওড়িশার তালচারের বাসিন্দা অনিমেষ। ছোটো থেকেই প্রচন্ড মেধাবী ছাত্র বলেই তিনি জানা যায়। তবে সিভিল সার্ভিসে পড়ার ইচ্ছে প্রথম থেকে ছিল এমনটা নয়। এই ইচ্ছের বীজ প্রথম তার বাবা অনিমেষের মধ্যে বপন করে। আর এই বীজ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি সর্বদা এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু যখন ১১ ক্লাসে পড়েন তখনই জীবনে ওঠে প্রথম ঝড়। বটবৃক্ষের মত আগলে রাখা মানুষটিকেই হারান অনিমেষ। অর্থাৎ সেইসময় তাঁর বাবা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। কিন্তু বাবা চলে গেলেও বাবার দেখানো দিশাতেই এগিয়ে যেতে থাকেন। তখন থেকেই মাকে ঘিরে ছিল তাঁর জীবন। অনিমেষের জীবনে সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এরপর উচ্চমাধ্যমিকে দুর্দান্ত ফলাফল করে ওড়িশার রাউরকেল্লার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে বিটেক ডিগ্রি নিয়ে পাশ করেন অনিমেষ। ২০২১ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশের পর ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের রিফাইনারি ডিভিশনে চাকরি পেয়ে যান। চাকরির পাশাপাশি জোর কদমে চলছে ইউপিএসসির প্রস্তুতি। কোনও টিউশান ছাড়াই একা একাই প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অফিসের চাপ, তারপর বাড়িতে এসে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা সব মিলিয়ে একপ্রকার নাজেহাল অবস্থা।
কিন্তু এরই মাঝে আবারো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অনিমেষের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি জানতে পারেন মায়ের হাতে আর বেশি সময় নেই। অনিমেষ ভগবানের কাছে খালি প্রার্থনা করতে থাকেন। তাঁর মা যেন এই সাফল্য দেখে যেতে পারে। কিন্তু ভগবানও যেন সেইসময় প্রার্থনা শোনেননি। যেই ভয়টা প্রতিনিয়ত অনিমেষের জীবনে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। ঠিক সেটাই ঘটলো। ইউপিএসসির ইন্টারভিউয়ের আগেই তাঁর মা মারা যায়। জীবন থেকে যেনো সুখটাই উবে যায়। সকল ইচ্ছে ভেঙে খান খান হয়ে যায়। কিন্তু তাও নিজের বেদনাকে বুকে চেপে মা বাবার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এগিয়ে যান। মায়ের মৃত্যুর ১ মাস পরই ছিল বড় পরীক্ষার ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউ রাউন্ডও ক্র্যাক করেন। এবং ২০২৩ সালের ইউপিএসসি পরীক্ষার ফলাফল বেরোতেই জানতে পারেন,,,,,তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। আর এটাই যেনো তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
প্রথম চেষ্টাতেই কোনো টিউশন ছাড়া, কোচিং ছাড়া ইউপিএসসিতে একেবারে দ্বিতীয় স্থান। সত্যিই অবাক করার মত বিষয়। আগে বাবাকে হারানো, তারপর মাকে একপ্রকার জরাজীর্ণ অবস্থা তাকে ঘিরে ধরেছিল। চাপ ছিল, ছিল বুকভরা বেদনা, তারপরেও মনোবল ভাঙ্গেননি। শুধুমাএ সামনে তাকিয়ে এগিয়ে গেছেন। অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
Leave a Reply