Title: রিকশা চালকের ছেলে এখন দেশের IAS অফিসার! প্রতিকূলতাকে জয় করেই দেশ চালাচ্ছেন তিনি!
Focus:
রিকশা চালকের ছেলে এখন
দেশের IAS অফিসার!
প্রতিকূলতাকে জয় করেই
দেশ চালাচ্ছেন গোবিন্দ জয় সওয়াল!
দিনের পর দিন আধপেটা
খেয়েই দিন কেটেছে তাঁর,
মায়ের মৃত্যু, বাবা ক্ষত নিয়ে রিক্সা চালানো
এসব দেখেই বড় হয়েছেন তিনি!
তবুও বিন্দুমাত্র
হাল ছাড়েননি,
বাবার মুখের দিকে চেয়ে সমস্ত
কিছুকে জয় করেছেন!
আর আজ সাফল্য
তাঁর হাতের মুঠোয়!
Body:
জীবনে থাকার জন্য দরকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান। আর এইটুকুও যদি না জোটে,,,,,,সেক্ষেত্রে জীবন চালানোর সংজ্ঞাটুকু হারিয়ে যায়। তবে দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই যারা করতে পারে তারাই আসল যোদ্ধা। প্রতিটি মুহুর্তে হার না মেনেও নিজের উপর ভরসা এবং জেদ ধরে রেখে সফলতার শীর্ষে পৌঁছানোকেই বলে আসল লড়াই। কথায় আছে কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। তবে কষ্ট করলে শুধু কেষ্ট নয় কেষ্টর সাম্রাজ্যও পাওয়া যায় একথা জানা ছিল না। আজ এমনই এক ছেলের গল্প তুলে ধরবো যিনি কিনা অভাবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, প্রতিকূলতাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম সফল আইএএস অফিসার।
নাম গোবিন্দ জয় সওয়াল। বারাণসীর বাসিন্দা তিনি। ছোটো থেকেই যেদিকে তাকিয়েছেন সেদিকেই ছুঁয়েছে অভাব। বাবা পেশায় ছিলেন রিক্সাচালক। তবে প্রথম থেকেই তিনি রিক্সাচালক ছিলেন এমনটা নয়। প্রথম দিকে তাঁর বাবা ছিলেন ৩৫ টা রিক্সার মালিক। কিন্তু হঠাতই গোবিন্দর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য একের পর এক রিক্সা বিক্রি করতে থাকেন। কিন্তু তারপরও মাকে বাঁচানো যায়নি। গোবিন্দ তখন খুবই ছোটো মাকে হারান সেই বয়সে। এরপর থেকেই শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। মা চলে যাবার পর একা হাতেই তার বাবা সমস্ত দিক দেখতে থাকে। কিন্তু অভাব অনটন তাদের পিছু ছাড়ে না। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে শুকনো রুটি খেয়ে তাদের দিন কাটাতে হয়েছে। আবার কখনো কখনো একবেলা খেয়েও দিন কেটেছে। তবুও তার বাবা পড়াশোনার প্রতি কোনো খামতি রাখেননি।
এমনকি অনেক সময় এই দারিদ্রতার জন্য, বাবার রিক্সা চালানোর জন্য নানা রকমের কুমন্তব্যের শিকার হতে হয় গোবিন্দকে। আত্মীয়-স্বজন থেকে বন্ধু-বান্ধব প্রতিনিয়ত খোটা দিতে থাকে। তবে বাবার মুখের দিকে চেয়ে তিনি স্কুলে কলেজে একের পর এক দুর্দান্ত রেজাল্ট করেন। প্রথমে বারাণসীর একটি সরকারি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। এরপর সেখানকার সরকারি কলেজ থেকে গণিতের উপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোট থেকেই তার ইচ্ছা ইউপিএসসি পড়াশুনা করবে। আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যই তিনি পাড়ি দেন দিল্লিতে। কিন্তু পড়াশোনার জন্য বাঁধ সেধেছিল অর্থ। কিন্তু তার বাবা সেই অর্থ কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি। ছেলের জন্য বরাদ্দ থাকা আরও ১৪টি রিক্সা বিক্রি করে দেন। সে সময় বিশেষ কিছু কারণে তার বাবার পায়ে ক্ষত হয়। সেই ক্ষত নিয়েই ওই একটি রিক্সা চালাতে থাকেন। ছেলের খরচা তোলার জন্য অহরহ পরিশ্রম করতেন। নিজে না খেলেও প্রতিমাসে ছেলের হাতখরচের টাকা পৌঁছাতে দেরী হতো না।
অন্যদিকে গোবিন্দ বাবার এই অক্লান্ত পরিশ্রম দেখে দিনরাত তিনিও পড়াশোনার পিছনেই মনোযোগ দেন। কোন নামিদামি প্রতিষ্ঠান থেকে নয় বরং একাই টিউশান পড়তেন। এমনকি সংসারের হাল ধরার জন্য পাশে ছোট বড় সকলকেও টিউশন পড়াতেন। মাঝেমধ্যে তিনি নিজের একবেলার খাবারটুকুও খেতেন না। ২০০৫ সালে দিল্লিতে আসেন তিনি। এরপর ২০০৬ সালে গোবিন্দ ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। আর প্রথম চেষ্টাতেই বাজিমাত। প্রিলিমস ইন্টারভিউ রাউন্ড একে একে পাশ করে আইএসের সাফল্য নিজের হাতে তুলে নেন। সারা দেশের মধ্যে সেইবার ৪৮ র্যাংকে নাম থাকে তাঁর।
দিনের পর দিন বাবার ঘাম ঝড়ানো বৃথা যেতে দেননি। নিজের জীবনে বাবাকে রোল মডেল করে এগিয়ে যেতে থাকেন গোবিন্দ। একসময়ে রিকশাচালকের ছেলে বলে যাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হতো। আর আজ তাকে দেখে মাথা ঝুঁকিয়ে চোখে সকলে। বাবার চোখের জল মুছিয়েছেন আইএএস অফিসার গোবিন্দ জয়সওয়াল।
Leave a Reply