বলতে পারতেন না ইংরেজি! উচ্চারণ করতে হোঁচট খেতেন বারবার!

Title: বলতে পারতেন না ইংরেজি! উচ্চারণ করতে হোঁচট খেতেন বারবার! আজ সেই মেয়ে দেশের IAS অফিসার!

Focus:

বলতে পারতেন
না ইংরেজি!

ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করতে
হোঁচট খেতেন বারবার!

উঠতে বসতে বিদ্রুপের
শিকার হতে হত তাকে!

তবে ইংরেজি তাকে
আটকে রাখতে পারেনি!

সকলকে কাঁচকলা দেখিয়ে
দিয়েছে তাঁর মেধার স্ফুরণ!

আজ সেই মেয়ে
দেশের IAS অফিসার!

Body:

UPSC! এটা কোনো সাধারণ পরীক্ষা নয়। যে পড়লাম, মুখস্থ করলাম আর পরীক্ষা দিলাম হয়ে গেলো। এরজন্য বছরের পর বছর সাধনা করতে হয়। এরজন্য দরকার ধৈর্য, অধ্যাবসায় তুখর মেধা সেই সাথে লড়াই করার জেদ। প্রতিবছর হাজার হাজার পরীক্ষার্থী ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসে থাকেন। তবে কারোর এই পরীক্ষা পাস করতে দশ বছর লেগে যায়। আবার কেউ কেউ প্রথম চেষ্টাতেই কাঙ্খিত ফল পেয়ে থাকেন। তবে খুব বিরল মানুষই প্রথম চেষ্টাতে সফল হতে পারেন। এরই মধ্যে একজন হচ্ছেন, সুরভি গৌতম। তবে প্রথম চেষ্টাতে সফল হলেও তার আগের ধাপগুলো তে ছিল কাঁটা বিছানো। আর সেই কাঁটা পার করতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে পা।

সুরভি গৌতম ছিলেন একজন মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার আমদারা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী আর মা স্কুলের শিক্ষিকা। তবে জানিয়ে রাখি, সুরভি কিন্তু ছোট থেকেই একজন হিন্দি মিডিয়ামে ছাত্রী ছিলেন। ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার দরুণ পড়াশোনার তেমন একটা সুযোগ-সুবিধা ছিল না সেখানে। তবে মেধার ভান্ডার তার অফুরন্ত। তাই প্রতিকূলতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। স্কুল জীবন থেকেই দ্বিতীয় হওয়া তার তালিকায় ছিল না। সর্বদাই প্রথম স্থান অধিকার করতেন! মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে তিনি পাশ করেন। জানা যায় উচ্চমাধ্যমিকের সময় তিনি রিউম্যাটিক জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর সেই সময় চিকিৎসা করানোর জন্য বাবা মায়ের সাথে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে জবলপুরে চিকিৎসা করাতে যেতে হতো। তা সত্ত্বেও তিনি পড়াশুনার প্রতি কোন রকমের খামতি রাখেননি। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পাড়ি দেন শহরে। তিনি তার গ্রামের একমাত্র মেয়ে যে কিনা উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে আসেন। এরপর ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভোপালের কলেজে ভর্তি হন সুরভি। এখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের সবথেকে কঠিন সময়। আজ আমাদের দেশে নিজের মাতৃভাষা নয় বরং সম্মান দেওয়া হয় বিদেশী ভাষাকে। মাতৃভাষা না জানলে কোন ব্যাপার না কিন্তু ইংরেজি জানা চাই চাই! নইলে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে।

আর ঠিক এই ইংরেজির জন্যই কলেজে উঠতে না উঠতেই সুরভিকে রীতিমতো প্যাক খেতে হয় সকলের কাছে। এই তুই ইংলিশ বলতে পারিস না! ইংলিশ না জেনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিস। এমন সব কটাক্ষের শিকার হতে হয়। ইংরেজি বলতে না পারায় তার ক্লাসে বন্ধু সংখ্যাও ছিল অনেক কম। এমনকি ক্লাসে টিচাররা পড়া জিজ্ঞেস করলেও সর্বদা এক কোণে লুকিয়ে থাকতেন সুরভি। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকেন ধীরে ধীরে। তবে হঠাৎ করে তার মনে হয় সেতো হেরে যাওয়ার পাত্রী নয়। ইংরেজি জানে না তো কি হয়েছে শিখে নেবে। এরপর থেকে তিনি শুরু করেন নতুন এক স্ট্র্যাটেজি। প্রতিদিন ১০টি করে ইংরেজি শব্দ রপ্ত করতেন। আর তাঁর এই স্ট্রাটেজি কাজে লেগে যায়। নিন্দুকরা তো নিন্দা করবেই তাই বলে পিছিয়ে আসবেন এটা কখনোই নয়। সকলকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সেই কলেজ থেকেই গোল্ড মেডেলিস্ট হয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। আর ইংরেজিকে নিজের পকেটে পুড়ে নেন। এরপর নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তবে তার কাছেই একঘেয়েমি চাকরি জীবন পছন্দ নয়। তিনি তো ভালোবাসেন সিভিল সার্ভিস করতে।

তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি প্রস্তুতি নিতে থাকেন ইউপিএসসির। এর পাশাপাশি তিনি একের পর এক সরকারি চাকরির পরীক্ষাও দিতে থাকেন। কখনো এসএসসি কখনো সিজিএল থেকে শুরু করে গেট, ইসরো, সেইল, এমপিপিএসসি, পিসিএস, দিল্লি পুলিশ এবং এফসিআইয়ের মতন পরীক্ষায় বসেন। আর সবেতেই সসম্মানে পাশ করেন। তবে ওই যে তার মন এগুলির মধ্যে কোনটাতেই টেকেনি। তিনি চান IAS অফিসার হতে। শেষমেষ ২০১৬ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। সেইবার সারা দেশের মধ্যে ৫০ তম র‍্যাঙ্ক অর্জন করেন সুরভী গৌতম। এবং ছিনিয়ে নেন আইএএসের শিলমোহর। বর্তমানে সুরভি গৌতম আহমেদাবাদের বিরামগ্রামে অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টরের পদে নিযুক্ত। ইংরেজি যে তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি সেকথা প্রমাণ করে দিয়েছে। একসময় যে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গিয়েছিল,,,,,, সেই আত্মবিশ্বাসকেই কাজে লাগিয়ে তিনি আজ সেরার সেরা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *