বিড়ি বাঁধুনির মেয়ে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় করেছেন দারুণ ফলাফল!

Title: বিড়ি বাঁধুনির মেয়ে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় করেছেন দারুণ ফলাফল! কয়দিন বাদেই হবেন বিলেত ফেরত ডাক্তার!

Focus:

বিড়ি বাঁধুনির মেয়ে ডাক্তারি
প্রবেশিকা পরীক্ষায় করেছেন দারুণ ফল!

কয়দিন বাদেই হবেন
বিলেত ফেরত ডাক্তার!

বাবা খুব একটা
পড়াশোনা জানেন না!

অলিতে গলিতে ঘুরে
ঘুরে টোটো চালান!

মা বিড়ি বেঁধে
সংসার টানেন!

আর আজ তাদের ঘরের মেয়েই
দেশের বড় ডাক্তার হওয়ার জাল বুনছে!

Body:

সুমাইয়া সিদ্দিকা! মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা ব্লকের অর্জুনপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। ছোটো থেকেই অভাব অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু সুমাইয়ার কাছে যেন অভাবও ভয় পায়। ওই যে কথায় ইচ্ছে থাকলেই উপায় পাওয়া যায়! অভাব তো ছুতো মাত্র! ঠিক তেমনটাই মনে করেন সুমাইয়া! একেই নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়! সেই বাড়িতে থেকে ডাক্তারি পড়তে চাওয়া এযেন বামুন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন। তবে সুমাইয়া তো দমে যাওয়ার পাত্রী নয়! হাজার লোকে হাজার কথা বললেও কোনো যায় আসে না তার। সে জানে তাকে ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে হবে। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য একধাপ পৌঁছে গিয়েছে।

সুমাইয়ারা তিন বোন, একভাই, সাথে বাবা মা। সবমিলিয়ে বেশ বড় পরিবার। আজকের যুগে দাঁড়িয়ে এত বড় পরিবার চালানো তাঁর বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও তাঁর বাবা মোবারাক হোসেন পেশায় একজন টোটো চালক। সকাল থেকে রাত্রি অবধি টোটো চালান। এমনকি মাঝে মাঝে সন্তানদের মুখে দুটো ভালো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য ওভারটাইম ডিউটিও দেন। তবে টোটো চালিয়ে যে টাকা পান সেই টাকায় এত বড় সংসার চালানো অসম্ভব! তাই সুমাইয়ার মাকেও নামতে হয় রোজগারের পথে। সাজেদা বিবি বিড়ি বাঁধার কাজে নিযুক্ত হন। তবে বিঁড়ি বাঁধার কাজ খুব একটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো নয়। সুমাইয়া ওই বিড়ি মহল্লায় বেশিরভাগ শ্রমিকদের কাজ করতে গিয়ে অসুখে ভুগতে দেখেছেন। এমনকি তার মাও অসুখে ভুগতেন। বাবা মাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখে সে নিজে নিজে মনে স্থির করেন। বড় হয়ে সকলের চিকিৎসা করবেন। এমনকি যে সমস্ত শ্রমিকেরা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না তাদের পাশে দাঁড়াবেন।

ছোট থেকেই সুমাইয়া অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। অন্য ভাই বোনের তুলনায় তার মেধার জোর একটু বেশি। ক্লাসে হোক কিংবা টিউশন সব জায়গায় তার রেজাল্ট থাকতো নম্বর ওয়ান। মেয়ের ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণের জন্য সাজেদা বিবি এবং মোবারক হোসেনও সর্বদা উৎসাহ জুগিয়ে যেতেন। এমনকি মেয়ের যাতে কোন কিছুতে কমতি না থাকে সেই দিকেও সজাগ থাকতেন। নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেন তারা। এই অভাবের মধ্যেই সুমাইয়া নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকেও দারুন ফলাফল করেন। এরপরই নিজেকে প্রস্তুত করেন নিটের জন্য। ওই মাটির ঘরে দিনরাত জেগে জেগে পড়াশোনা করতেন। প্রস্তুতির পর অল ইন্ডিয়া মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষা অর্থাৎ নিট পরীক্ষায় বসেন। ফলাফল প্রকাশের পর জানা যায় সুমাইয়া সিদ্দিকা ৭২০র মধ্যে পেয়েছেন ৬৭০। আর সর্বভারতীয় স্তরে তাঁর র‍্যাঙ্ক ১৪০৩২, অন্যদিকে ওবিসি ক্যাটাগরিতে ৫৯৮১ র‍্যাঙ্কে রয়েছে। মেয়ের সাফল্যে আজ তার বাবা-মা ভীষণ খুশি। তাঁর বাবা মা তেমন পড়াশোনা না জানলেও,,,,,, মেয়েকে সর্বদা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাবার দিনরাত ঘাম ঝড়ানো, শরীর অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও মায়ের বিড়ি বাঁধা ব্যর্থ হতে দেননি সুমাইয়া। খুব শীঘ্রই এমবিবিএস পাস করে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে সকলের চিকিৎসা করবেন সুমাইয়া। বাংলা হান্টের পক্ষ থেকে সুমাইয়াকে জানাই অনেক অভিনন্দন। আগামী দিনেও তিনি যেন এভাবেই এগিয়ে যেতে পারে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *