হকারের মেয়ে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাইক্রোসফট কোম্পানি!

Title: হকারের মেয়ে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাইক্রোসফট কোম্পানি! ডিল করছে বড় বড় সংস্থার সঙ্গে! তৈরি করছেন চোখ ধাঁধানো ডিজাইন!

Focus:

হকারের মেয়ে এখন দাপিয়ে
বেড়াচ্ছে মাইক্রোসফট কোম্পানি!

বাবা পড়াশুনা জানেন না!

রাস্তায় ঘুরে ঘুরে হাঁক দিয়ে
দিয়ে বিক্রি করতেন চুরি!

রাস্তায় কাটাতে হয়েছে দিন,
মাথার উপর ছিল না ছাদটুকু!

তাদের ঘরের মেয়েই এখন
বিদেশী কোম্পানির উচ্চপদে কর্মরত!

ডিল করছে বড়
বড় সংস্থার সঙ্গে!

মুখ খুললেই বেরোচ্ছে
বড় বড় ইংরেজি শব্দ!

কম্পিউটারে বসলেই উঠছে ঝড়,
তৈরি করছেন চোখ ধাঁধানো ডিজাইন!

Body:

নাম শাহিনা আতরওয়াল! মুম্বাই নিবাসী তিনি। বান্দ্রার ঘুপচি বাড়ি থেকে এখন তিনি বাস করেন বহুতলের বাড়িতে। একসময়ে রাস্তায় কাটাতে হয়েছে দিন। শুনতে হয়েছে নানারকমের কথা। রাস্তায় থাকার জন্য ছেলেদের কাছ থেকে পেতে হয়েছে কুমন্তব্য! মেয়েকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হত দুঃখিনী বাবাকে। এমন অভাবের সময় যেখানে মেয়েরা হার মেনে নেয়,,,,,,,অভাবের হাত থেকে বাঁচতে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। সেখানে শাহিনা ব্যতিক্রম। চুপচাপ সবকিছুকে সহ্য করে এগিয়ে গিয়েছে। নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার তাগিদে সব কিছু মাথা পেতে নিয়েছে।

জন্মের পর থেকেই অভাবের সাথে লড়াই করে বড় হয়ে উঠেছেন শাহিনা। শাহিনার বাবা পেশায় ছিলেন একজন হকার। সকাল হলে বেরিয়ে পড়তেন হকারি করতে। সারা দিনরাত রোদে জ্বলে ঘুরে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করতেন। কিন্তু এই সামান্য টাকায় তাদের সংসার চালিয়ে মেয়েকে পড়ানোর ক্ষমতা কুলিয়ে উঠতো না। কিন্তু শাহিনার ছোটো থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ। তাই তাঁর বাবা ঠিক করলেন যে করেই হোক মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবে। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে মুম্বাইয়ের একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি করান। পড়াশোনার পাশাপাশি শাহিনার কম্পিউটারের প্রতিও শেখার অগাধ আগ্রহ। বাবাকে সেই ইচ্ছের কথা জানালে হাসিমুখে তিনি রাজি হয়ে যান। এদিক ওদিক টাকার ব্যবস্থা করে মেয়েকে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করান। পড়াশুনা কম্পিউটার নিয়ে দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছিল শাহিনার। কিন্তু একদিন হঠাৎ তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর ফলে অনেক অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। সেই সাথে মাথার উপর ছাদটুকুও হারিয়ে যায়। ওই বাড়ি ছেড়ে তার স্থান হয় ফুটপাতে। বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার কম্পিউটার শেখা বন্ধ হয়ে যায়। এতকিছুর পরেও থেমে থাকেননি শাহিনা। সমস্ত দুঃখ কষ্টকে বুকে চেপে এগিয়ে গিয়েছেন। তবুও কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি। বাবা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আবারো একই কাজে ফেরেন। কিন্তু আগের মত সেরকম ভাবে আর দিনরাত পরিশ্রম করতে পারতেন না। তবে শাহিনা ঠিক করেন কম্পিউটার শিখেই ছাড়বে। তাই নিজের বাসভাড়া বাঁচিয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতেন। এমনকি প্রতিদিন একবেলার খাবার খেতেন না তিনি। সেই খাবারের টাকা অল্প অল্প সঞ্চয় করে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন। এইভাবে শিখতে শিখতে কম্পিউটারে রীতিমত নিজেকে পাকাপোক্ত করে তোলেন।

তার বাবাও মেয়েকে এমন দক্ষ হতে দেখে বাড়িতেই কম্পিউটারের ব্যবস্থা করে দেন। নিজের জমানো স্বল্প পুঁজি এবং বন্ধুদের কাছে ধার দেনা করে একটি পুরনো কম্পিউটারের জোগাড় করেন। আর সেই কম্পিউটার দিয়ে শাহিনা বাড়িতে বসে কাজ করা শুরু করে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ভর্তি হন মুম্বাইয়ের একটি কলেজে বিকম ডিগ্রী অর্জনের জন্য। বিকম পাস করার পর তিনি ভর্তি হন এনআইআইটিতে। এখানে থেকে তিনি ভিসুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইন নিয়ে ডিপ্লোমা করেন। ডিজাইন ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি মুম্বইয়ের একটি কার এক্সপোয় অংশগ্রহণ করেন। সেইসময় তাঁর বেশ প্রশংসা হয়। তবে বেঙ্গালুরুর জুমকাতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় একটি স্কুটারের কাঠামো তৈরি করেন। ব্যাস ডিজাইনর জন্য তিনি রাতারাতি ফেমাস হয়ে যান। এরপর থেকেই শাহিনার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। একে একে বড় বড় নামিদামি সংস্থা থেকে তার ডাক আসতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাইক্রোসফটের কাজ করার। এখন তিনি মাইক্রোসফটে উচ্চ পদে কর্মরত। ২০২১ সালে তিনি মুম্বাইতে একটি ফ্ল্যাটও কেনেন। পুরো পরিবারকে নিয়ে এখন সেখানেই থাকেন তিনি। শুধু তাই নয় জানা গিয়েছে, বর্তমানে অর্থের অভাবের কারণে যারা মাঝপথে পড়াশুনা ছেড়ে দিচ্ছে তাদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন শাহিনা। কারণ তিনি চান না তার মত আর কেউ এইভাবে কষ্ট পেয়ে মানুষ হোক।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *