হাত নেই তবুও করছেন সেলাই!

Title: হাত নেই তবুও করছেন সেলাই! ছেলে মেয়েদের জন্য করছেন লড়াই! অল্প অল্প করে সন্তানদের জন্য ভবিষ্যতের রাস্তা তৈরি করছেন মা!

Focus:

দূর্ঘটনায় হাত
হারিয়েছেন!

তবুও সংসার চালানোর
দায়ে সেলাই করতে হচ্ছে!

পাশে নেই স্বামী কিন্তু
ছেলে মেয়েদের জন্য করছেন লড়াই!

অল্প অল্প করে সন্তানদের
জন্য ভবিষ্যতের রাস্তা তৈরি করছেন মা!

প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই মায়ের
জীবনযুদ্ধের গল্প চোখে জল আনার মত!

Body:

পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক হচ্ছে মা এবং সন্তানের সম্পর্ক। কথায় আছে বাবার চেয়ে দায়িত্বশীল পুরুষ কেউ হয় না এবং মায়ের চেয়ে যত্নবান কোনও নারী হয় না। তবে মা শুধু যত্নবানই নন সন্তানদের সুখের খনি। সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মায়েরা যমের দুয়ারে পর্যন্ত লড়াই করে আসতে পারেন। আজ এমনই এক মায়ের গল্প আপনাদের শোনাবো। যিনি কিনা সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার তাগিদে নিজের জীবনটুকু উৎসর্গ করে দিয়েছেন। হাত না থাকা সত্ত্বেও পা দিয়েই কাজ করে চলেছেন। জামা সেলাইয়ের পাশাপাশি সন্তানদের জন্য অল্প অল্প করে বুনছেন ভবিষ্যত। শরীরের দুর্বলতাকেও তুচ্ছ করে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন।

কলিযুগে দাঁড়িয়ে যেখানে সন্তানরা বাবা মায়ের জন্য পৃথিবীর বুকে অনাথ আশ্রমের মতো কলঙ্ক তৈরি করছেন। সেই কলিযুগে দাঁড়িয়ে অপরদিকে বাবা-মায়েরা প্রতিনিয়ত সন্তানদের জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করছেন। রাজস্থানের দুঙ্গারপুরের সুরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণা সেবক। স্বামী এবং দুই ছেলে মেয়েকে নিয়েই তার সুখের সংসার ছিল। কিন্তু বছর দশেক আগে সেই সুখের সংসারে ঝড় ওঠে। জানা যায় হঠাৎ করে এক পথ দুর্ঘটনায় প্রবীণা দেবীর স্বামী মারা যান। বট বৃক্ষের মতো আগলে রাখা মানুষটি হাত ছেড়ে পাড়ি দেন অন্য দেশে। দুই সন্তানের দায়িত্ব, সংসার, শশুর শাশুড়ির দায়িত্ব সব এসে পড়ে তার কাঁধে। কি থেকে কি করবে সেটাই ভেবেই কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সেই ঝড় সামলে উঠতে সময় লেগেছিল অনেকটা। কিন্তু সেই বিপদ কাটাতে না কাটাতেই আবারো তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। একদিন প্রবীণা দেবী ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই ফাঁদ পেতেছিল বিপদ। অসাবধানবশত ১১ হাজার ভোল্টের সংস্পর্শে আসেন তিনি। নিমেষে পাল্টে যায় প্রবীনা দেবীর জীবন। ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতে স্পৃষ্ট হয়ে দুহাত হারান ।

মায়ের এমন অবস্থা দেখে ছেলে মেয়েরাও কান্নায় ভেঙে পড়ে। তবে সেইসময়ও প্রবীণা দেবী নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখেন। নিজের চোখে বিন্দুমাত্র জল আসতে দেননি। ছেলে মেয়েদের যে করেই হোক দাঁড় করাবেন, স্বামীর দায়িত্ব নিজে পালন করবে মনে মনে এই প্রতিজ্ঞাই করেন। শরীর সুস্থ হওয়ার পর থেকেই একাজ ওকাজ দেখা শুরু করেন। দুটো হাত নেই তো কি হয়েছে? পা তো আছে! পা দিয়েই কাজ করবেন। পা দিয়েই সেলাই কাজ শুরু করেন প্রবীণা দেবী। প্রথমে অল্প অল্প করে ছেঁড়া কাপড়ের উপর মেশিন চালানো শেখেন। এখন তিনি সেলাইয়ে পটু হয়ে উঠেছেন। সেলাই করে যত টাকা রোজগার করেন। তাতে মোটামুটি ছেলেমেয়েদের ভালোভাবেই মানুষ করতে পারেন। পা দিয়ে কাজ করার দরুণ খুব ভালো সেলাই করতে পারেন না। কোনও মাসে বেশি তো আবার কোনো মাসে অনেক কমটাকা উপার্জন করেন। মাকে কষ্ট করতে দেখে ছেলে মেয়েরাও তার সাথে কাজ করা শুরু করে। প্রবীণা দেবীর ছেলে বছর ১৭র মিহির এবং মেয়ে বছর ১৩র বৈষ্ণবী। যখন মা অসুস্থ থাকার দরুন কাজ করতে পারেন না। তখন এরা দুজনই মায়ের সম্বল হয়ে দাঁড়ায়। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময় সেলাই করে। এমনকি বৈষ্ণবী স্কুল যাওয়ার আগে মাকে স্নান করানো, খাওয়ানো সমস্ত কিছু নিজের হাতে করে দিয়ে যান।

অনেক কষ্টেশিষ্টে দিন চললেও প্রবীণা দেবী বিন্দুমাত্র থেমে নেই। প্রতিনিয়ত একা হাতে লড়াই করে যাচ্ছেন। এবং ছেলে মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *